চুয়াডাঙ্গাসহ সারাদেশে কুয়াশা : তীব্র শীতে যবুথবু প্রাণিকূল

তীব্র শীতের পরও দিনে রোদের অভাবে কুমড়ো-কলাইয়ের বড়ি দিতে পারছেন না গ্রামবাংলার গৃহিণীরা

 

স্টাফ রিপোর্টার: শীতের দাপট দেখে শহরতলী থেকে শুরু করে গ্রামবাংলার গৃহিণীরা কুমড়ো-কলাইয়ের বড়ি দেয়ার তোড়জোড় শুরু করলেও দিনে সূর্যের মৃয়মান উপস্থিতি তাদের মন খারাপের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শীতের শুরুতেই রাত থেকে মধ্য দুপুর পর্যন্ত কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুরসহ দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা। রাজধানীরও অভিন্ন দশা। বেলা কেন এমন অবস্থা? আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, তাপমাত্রা কমার পাশাপাশি মেঘলা আবহাওয়ার প্রভাবে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এতে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। এমন আবহাওয়া আরো অন্তত পাঁচ-ছয়দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের কর্তব্যরত আবহাওয়াবিদ মাহমুদুল কবির।

গতকাল চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়লেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমেছে ৮ ডিগ্রি। ফলে চুয়াডাঙ্গায় তীব্র শীত অনুভুত হচ্ছে। কুয়াশার কারণে বেলা ১২টা পর্যন্ত সূর্য়ের দেখা মিলছে না। গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় রাজশাহীতে ১১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখানে সর্বোচ্চা তাপমাত্রা ছিলো ১৭ দশমিক ৪। এদিন ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি এবং সর্বোচ্চ ২১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে, যেখানে আগের দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিলো ২৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৫ এবং সর্বোচ্চ ১৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড রা হয়। সারাদিনই ছিলো শীতের দাপট। এরপরও কুমড়ো-কলাইয়ের বড়ি দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েও অনেকেই তা দিতে পারেনি। কারণ দিনে ঝলমলে রোদ আর রাতে তীব্র শীত কুমড়ো-কলাইয়ের বড়ির জন্য উপযোগী। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ বা কুয়াশার চাঁদরে মোড়ানো থাকলে বড়ির ১২টা বেজে যায়। এ কারণেই বড়ি দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েও বড়ি দিতে পারছেন না আগ্রহীরা। বড়ি দেয়ার উপযোগী পরিবেশের জন্য আরো সপ্তাখানেক অপেক্ষা করারই পরামর্শ দিয়েছেন আবহাওয়া অভিজ্ঞরা।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস কর্মকর্তা বলেন, আরো ৫/৬ দিন এমন আবহাওয়া থাকবে। নদী অববাহিকায় কুয়াশা বাড়বে। অন্যত্র ধীরে ধীরে কমে আসবে। এদিকে ঘন কুয়াশার মধ্যে মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধু সেতুতে চারটি ট্রাক ও বাস দুর্ঘটনার কবলে পড়ায় সেতুর উভয় পাড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়, যা স্বাভাবিক অবস্থায় আসতে দুপুর গড়িয়ে যায়।

বঙ্গবন্ধু সেতু রক্ষণাবেক্ষণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেটারোলজিক্যাল কনস্ট্রাকশন কোম্পানি অব চায়না-এমসিসিসির প্রধান প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক বলেন, একদিকে ঘন কুয়াশা, অন্যদিকে অনেক ট্রাকের পেছনের ফগ লাইট না থাকায় (ব্রেক করলেই পেছনে এক ধরনের জ্বলে ওঠা বাতি) অনেক যানবাহন দুঘর্টনার কবলে পড়ে থাকে। দুপুরের দিকে আলো বাড়ার সাথে সাথে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে। কুয়াশায় পদ্মায় ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে রাজধানীর সাথে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। কুয়াশার কারণে বুধবার রাত ৮টা থেকে শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি রুটে ফেরি পারাপার বন্ধ হয়ে যায়, যা সচল হতে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। এ সময় কনকনে শীতের মধ্যে মাঝ নদীতে রাত্রি পার করেন আটকে পড়া পাঁচটি ফেরির যাত্রীরা। বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী ম্যানেজার শেখর চন্দ্র রায় বলেন, ফেরি রুটের মাওয়া এলাকায় কুয়াশার তীব্রতা বেশি। কুয়াশার তীব্রতায় নদীর মার্কিং পয়েন্ট ও বিকন বাতিগুলো না দেখতে পাওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরি সার্ভিস বন্ধ রাখা হয়েছিলো। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটেও সাত ঘণ্টা ফেরি পারাপার বন্ধ থাকে। রাতে মাঝ নদীতে আটকা পড়ে তিনটি ফেরি।

আজ শুক্রবারের পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ডিসেম্বর মাসে রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকবে। তবে  মাসের শেষার্ধে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে একটি থেকে দুটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে, তখন তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামতে পারে।