ইবিতে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি অভিযোগে আটক ৬ বহিষ্কার ৩৫

দু জনকে কারাগারে প্রেরণ

 

ইবি প্রতিনিধি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) অনার্স প্রথমবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার দ্বিতীয় দিন গতকাল সোমবার জালিয়াতির ঘটনায় ৬ জন পরীক্ষার্থী ও একজন ভুয়া পরীক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। আটক পরীক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা মোবাইলে এসএমএস দেখে দেখে ও হেডফোনে ব্লুটুথ সংযোগের মাধ্যমে শুনে উত্তরপত্র পূরণ করছিলো।

জালিয়াতির ঘটনায় আটককৃত পরীক্ষার্থী হলো- শহিদুল ইসলাম, আতিকুর রহমান আতিক, পলি খাতুন, আসমা খাতুন, স্বর্ণা সাহা ও এম সাম্মান জিম। এছাড়া নিষিদ্ধ সত্ত্বেও পরীক্ষার হলে মোবাইলফোন ব্যবহার করার ঘটনায় ৩৫ জন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার কলা অনুষদভুক্ত বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে একাধিক পরীক্ষার হল থেকে তাদের আটক ও বহিষ্কার করা হয়। এদিকে রোববার জালিয়াতির ঘটনায় আটক ইমরান ও নাহিদকে কুষ্টিয়া কোর্টে পাঠানো হয়েছে বলে ইবি থানার পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স প্রথম বর্ষের কলা অনুষদভুক্ত বি ইউনিটের পরীক্ষা ছিলো। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চার শিফটে বি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা চলাকালে বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে জালিয়াতির ঘটনায় মোট ৬ জন পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা মোবাইলে এসএমএস দেখে উত্তরপত্র পূরণ করছিলো। প্রথম শিফটের পরীক্ষা চলাকালে কলা অনুষদের ৪২৬ নং কক্ষ থেকে আতিকুর রহমান আতিক (রোল নং-০১৩৬৪), দ্বিতীয় শিফটের পরীক্ষা চলাকালে শহিদুল ইসলাম, তৃতীয় শিফটের পরীক্ষা চলাকালে মীর মশাররফ হোসেন ভবনের ১২০ নং কক্ষ থেকে আসমা খাতুন এবং চতুর্থ শিফটের পরীক্ষা চলাকালে ব্যবসায় প্রশাসন ভবনের ১০১ নং কক্ষ থেকে পলি খাতুনকে (রোল নং-১৭৬০৩), একই ভবনের ২১৩ নং কক্ষ থেকে স্বর্ণা সাহাকে (রোল নং-১২৬৫৯) ও এম সাম্মান জিম (রোল নং-১২৫৯৬) আটক করা হয়। পলি খাতুন হেডফোনে ব্লুটুথ সংযোগের মাধ্যমে এবং বাকিরা মোবাইলফোনে এসএমএস’র মাধ্যমে পাঠানো উত্তর দেখে উত্তরপত্র পূরণ করছিলো। আটককৃতদের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ত.ম লোকমান হাকিমের কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং পরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। আটককৃত পরীক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে এবং গত রোববার একই ঘটনায় আটক দুজন পরীক্ষার্থীকে আজ কুষ্টিয়া কোর্টে পাঠানো বলে জানিয়েছেন ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিবুল ইসলাম। এছাড়া চতুর্থ শিফটের পরীক্ষা চলাকালে ব্যবসায় প্রশাসন ভবন থেকে হাবিবুর রহমান নামে একজন ভুয়া পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. ত.ম লোকমান হাকিম বলেন, যেসব পরীক্ষার্থী পরীক্ষার হলে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছিলো তাদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এদিকে নিষিদ্ধ সত্ত্বেও পরীক্ষার হলে মোবাইলফোন ব্যবহার করার অভিযোগে বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রে তল্লাশি চালিয়ে ৫০ পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল হাকিম সরকার ও সহউপাচার্য অধ্যাপক মো. শাহিনুর রহমান স্বয়ং অন্তত ২০টি পরীক্ষার হলে তল্লাশি চালিয়ে এসব মোবাইলফোন উদ্ধার করেন এবং তাদেরকে বহিষ্কার করার জন্য সংশ্লিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্রের পরিদর্শকদের নির্দেশ দেন। উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমান বলেন, উপাচার্যসহ আমি নিজে বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্র তল্লাশি চালিয়ে প্রায় অর্ধশত মোবাইলফোন উদ্ধার করেছি এবং যাদের কাছে মোবাইলফোন পাওয়া গেছে তাদেরকে সাথে সাথে বহিষ্কার করা হয়েছে।

উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল হাকিম সরকার বলেন, যেসব পরীক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির আশ্রয় নেবে তাদেরকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। এছাড়া পরীক্ষার্থীরা যাতে পরীক্ষার হলে মোবাইলফোন ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য হল পরিদর্শকের কঠোর নিদের্শ দেয়া হয়েছে।