মা-বাবার কাছে ফিরে এলো বৃষ্টি : হদিস মেলেনি নিশানের

পাঁচ বছর আগে হারিয়ে যায় চুয়াডাঙ্গার দু ভাই-বোন : যেন সিনেমার কাহিনি

 

আলম আশরাফ: দীর্ঘ পাঁচ বছর পর মেয়ে বৃষ্টিকে ফিরে পেলেও ছেলে নিশানের কোনো খোঁজ পাননি চুয়াডাঙ্গা ভিমরুল্লা গ্রামের পিতা শাহীন আলী ও মা রেশমা খাতুন। তারা কোনোদিন ভাবেননি তাদের হারিয়ে যাওয়া দু সন্তানকে ফিরে পাবেন। বৃষ্টিকে ফিরে পেয়ে নতুন করে আশা জেগেছে নিশানকে ফিরে পাওয়ার। প্রিয় সন্তান নিশান কোথায় আছে, কেমন আছে তা জানতে দরিদ্র পিতা-মাতা সব সময় এখন উদগ্রিব।

চুয়াডাঙ্গা পৌরসভাধীন ভিমরুল্লা তেলপাম্পপাড়ার সরকারি রাস্তার পাশে কুঁড়েঘর বানিয়ে মাথা গোজার ঠাঁই করে আছেন স্বামী শাহীন আলী ও স্ত্রী রেশমা খাতুন। তাদের বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুরের আবরি গ্রামে হলেও দীর্ঘ এক যুগ ধরে এখানেই বসবাস করছেন তারা। কোনো সময় ভ্যান চালিয়ে, কখনো মাছ বিক্রি করে আবার কখনো কামলা খেটে সংসার চালান শাহীন আলী। এরই মধ্যে ২০১০ সালের ১২ আগস্ট পয়লা রোজার দিন শাহীন আলীর বকুনি খেয়ে তার বড় মেয়ে সাত বছর বয়সী বৃষ্টি খাতুন ও চার বছর বয়সী ছেলে নিশান বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। তাদের আর হদিস মেলে না। দীর্ঘ প্রতীক্ষা চলতে থাকে। তারা ধরেই নিয়েছিলেন তাদের খোঁজ হয়তো জীবনে আর পাওয়া যাবে না। কিন্তু ঘটনা মোড় নেয় সিনেমার কাহিনিতে।

বৃষ্টি ফিরে আসার পর তার কথা শুনে জানা যায়, পিতার মারের ভয়ে বৃষ্টি ও নিশান বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যায়। তারা চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনে গিয়ে থামে। ঢাকাগামী একটি ট্রেনে উঠে পড়ে। ট্রেনের ভেতরে গিয়ে বৃষ্টি তার ছোটভাই নিশানকে হারিয়ে ফেলে। বৃষ্টি ঢাকার একটি স্টেশনে নেমে পড়ে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঢাকার মহাখালী নিকেতন এলাকার থানা পুলিশে সোপর্দ করে। থানার এক আনসার সদস্য বৃষ্টিকে লালন পালন করার জন্য নেন। সৌভাগ্যক্রমে বৃষ্টি ওঠে আনসার সদস্য আরমান আলীর বাসায়। আরমান আলীর বাড়ি আলমডাঙ্গা উপজেলার ডাউকি গ্রামে। বৃষ্টিকে আলমডাঙ্গার ডাউকিতে নিয়ে আসেন তিনি। বৃষ্টির নাম বদল করে রাখা হয় আকলিমা। আকলিমা সেখানে বড় হতে থাকে। এভাবে কেটে যায় পুরো পাঁচ বছর।

এরই মধ্যে কয়েকদিন আগে বৃষ্টির ফুফু বুলবুলি ডাউকি গ্রামের এক আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে যায়। সেখানে গিয়ে আকলিমাকে কুড়িয়ে পাওয়ার কাহিনি শোনে প্রতিবেশীদের কাছে। কাহিনি শুনে তার ভাইয়ের মেয়ে বৃষ্টির মতো মনে হয়। তার আগ্রহ জন্মে আকলিমাকে দেখার। শেষমেশ আকলিমাকে দেখে নিশ্চিত হয় এই আকলিমাই তাদের হারিয়ে যাওয়া বৃষ্টি। কিন্তু বুলবুলি সেখানে কাউকে না জানিয়ে সোজাসুজি বৃষ্টির বাবা-মাকে খবর দেয়। গত শুক্রবারে বৃষ্টির মা রেশমা ও বাবা শাহীন ছুটে যান ডাউকি গ্রামে। সেখানে বৃষ্টি তার মা-বাবাকে চিনতে পারে এবং তাদের কাছে এসে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। পরে এলাকার লোকজন ভিড় জমায় সেখানে। বৃষ্টি তার মা-বাবার সাথে চলে আসে আপন ঠিকানায়। তবে বৃষ্টিকে ফিরে পাওয়ার পর তারা তাদের হারিয়ে যাওয়া আরেক ছেলে নিশানকে ফিরে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন। নিশান কি এভাবে তাদের বুকে ফিরে আসবে কোনোদিন?