নয়নকে হারিয়ে জীবনকে পেয়েছে মেহেরপুরের স্কুলছাত্রী নাসরিন

ভাই হারানো বেদনা কমলেও ভুলতে পারেনি ৯ বছরের খেলার সাথীকে

 

মহাসিন আলী: এক ভাই নয়নকে হারিয়ে অন্য ভাই জীবনকে কাছে পেয়েছে স্কুলছাত্রী নাসরিন। এতে ভাই হারানো বেদনা কিছুটা কমেছে। দীর্ঘ ১০ মাস পরে নাসরিনের মুখে হাসি ফুটেছে। তাই বলে কি দীর্ঘ ৯ বছরের খেলার সাথী ভাইটিকে ভুলে থাকা যায়? যেমন মা-বাবা ভুলতে পারেনি সন্তান হারানোর বেদনা। তেমনি স্কুলছাত্রী নাসরিন ভুলতে পারেনি তার ভাই হারানো বেদনা। মেহেরপুরের শিশু নয়নের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ শুক্রবার। বাদ আছর পরিবারের পক্ষ থেকে ঘরোয়াভাবে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

গত বছরের আজকের দিনে (৭ নভেম্বর) স্কুলছাত্রী নাসরিন জেএসসির ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষা দিয়ে বেলা দেড়টার দিকে বাড়ি ফিরে দেখতে পায় তার একমাত্র ভাই নয়ন (৯) বাড়িতে নেই। হাজারো নারী-পুরুষ পার্শ্ববর্তী ভৈরব নদের ধারে নয়নকে খুঁজছে। নাসরিন জানতে পারে দুপুর ১২টার দিকে মাছ কিনতে ভৈরব নদের পাড়ে গিয়ে নিখোঁজ হয় সে। প্রতিবেশীরা ওই দিন বেলা ৩টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ভৈরব নদে জাল ফেলেও তাকে খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়। পরে বাইরের জেলা থেকে ডুবরি আনার সিদ্ধান্ত হয়। পরদিন ৮ নভেম্বর খুলনা থেকে ডুবরি মেহেরপুর পৌঁছে। কিন্তু তাদের আর ভৈরবে নামতে হয়নি। তার আগেই ওই দিন বেলা ১১টার দিকে শিশু নয়নের লাশ ভৈরবের পানিতে ভেসে ওঠে। লাশ ভেসে উঠলে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দেয়। মেহেরপুর সদর থানার এসআই খান আলী আকবর লাশ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। হরতালের কারণে ওই দিন শুক্রবার বেলা ২টায় ছিলো জেএসসি পরীক্ষার বাংলাপ্রথম পত্রের পরীক্ষা। লাশ উদ্ধার হলেও ভাইয়ের লাশ বাড়িতে রেখে নাসরিনকে যেতে হয় পরীক্ষায় অংশ নিতে। জেএসসি পরীক্ষার হল থেকে বিকেল ৫টায় বের হয়ে শেষবারের মতো একমাত্র ভাই নয়নকে দেখতে মেহেরপুর পৌর কবরস্থানে যায় নাসরিন। ততোক্ষণে নয়নের লাশ দাফনের শেষ মুহূর্তের কাজ চলছিলো।

নাসরিন গত বছর জেএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। এ বছর সে নবম শ্রেণিতে পড়ছে। ভাই হারিয়ে তার মনে ছিলো না কোনো হাসি-খুশি। দীর্ঘ ১০ মাস পরে নাসরিনদের পরিবারে একটু হলেও স্বস্তি নিয়ে এসেছে জীবন। চলতি বছরের ৭ সেপ্টেম্বর নাসরিনের মায়ের কোলজুড়ে এসেছে শিশুপুত্র। নাসরিন আদর করে তার নাম দিয়েছে জীবন। নয়নের স্মরণে আজ শুক্রবার বাদ আছর পরিবারের পক্ষ থেকে ঘরোয়াভাবে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার নাসরিনদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাবা মহিবুল ইসলাম ও মা সুরাতন নেছা ছেলে নয়নের মৃত্যুবার্ষিকী পালনে তোড়জোড় করছিলেন।

উল্লেখ্য, মেহেরপুর শহরের ঘাটপাড়ার মহিবুল ইসলামের এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে নয়ন ছিলো ছোট। সে স্থানীয় বিএম মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিলো। নাসরিন মেহেরপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্রী। চাচাতো ভাইয়ের মাছ কিনতে দেখে নয়ন বাড়িতে ফিরে বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ভৈরব নদের পাড়ে যায়। এরপরে সে আর ফিরে আসেনি। ওই দিন অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও তাকে পাওয়া যায়নি। প্রায় ২৪ ঘণ্টা নিখোঁজ থাকার পরের দিন বেলা ১১টার দিকে শহরের ঘাটপাড়া নূরানী মাদরাসার কাছে ভৈরব নদে ভেসে ওঠা নয়নের লাশ স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পুলিশ উদ্ধার করে।