মগবাজারে বাবার পাশে গোলাম আযমের দাফন

মানবতাবিরোধী অপরাধে ৯০ বছরের সাজাপ্রাপ্তের জানাজা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে

 

স্টাফ রিপোর্টার: স্বাধীনতাবিরোধীদের হোতা মানবতাবিরোধী অপরাধে ৯০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত গোলাম আযমের জানাজা হয়েছে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে। জানাজা শেষে মগবাজার পারিবারিক গোরস্তানে বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়। শনিবার জোহরের নামাজের পর জাতীয় মসজিদে তার ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমি জানাজায় ইমামতি করেন। দুপুরে লাশ বায়তুল মোকাররম মসজিদে নেয়ার পথে বিক্ষুব্ধ ব্যক্তি গোলাম আযমের কফিনবাহী গাড়ি লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ করেন। এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। উল্লেখ্য, ১৯৮১ সালের ১ জানুয়ারি বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে একটি জানাজায় অংশ নিতে গেলে তার প্রতি জুতা নিক্ষেপ করা হয়েছিলো।

জানাজা শুরুর আগে দুপুর ১২টার দিকে পল্টন মোড় ও আশপাশের এলাকায় ১০-১২টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এর সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে পল্টন থেকে একজনকে আটক ও তিনটি তাজা ককটেল উদ্ধার করে পুলিশ। গোলাম আযমের জানাজা কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ভোর থেকেই বায়তুল মোকাররম মসজিদ ও আশপাশের এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলে। প্রতিটি পয়েন্টে বিপুলসংখ্যক র‌্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। জানাজার আগে বায়তুল মোকাররমের সামনের রাস্তা বন্ধ করে দেয়ায় জাতীয় মসজিদের আশপাশের এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।

অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম, বাংলাদেশ সম্মিলিত ইসলামী জোট, জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ, কাজী আরেফ ফাউন্ডেশন, বোয়াফ এবং গণজাগরণ মঞ্চসহ কয়েকটি সংগঠন বায়তুল মোকাররমে গোলাম আযমের জানাজার নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানায়।

যুদ্ধাপরাধের মামলায় ৯০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত গোলাম আযম ৯২ বছর বয়সে কারাবন্দি অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে মারা যান। গোলাম আযমের জানাজায় অংশ নেয়ার জন্য ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী বায়তুল মোকাররমে জড়ো হতে থাকে। জোহরের নামাজের আগেই বায়তুল মোকাররমের চারপাশ ভর্তি হয়ে যায়। বেলা ১টার দিকে জামায়াত নেতাকর্মীরা মগবাজার থেকে মিছিল নিয়ে লাশবাহী গাড়িসহ বায়তুল মোকাররমে পৌঁছে। গোলাম আযমের ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আযমি ও পরিবারের অপর সদস্যরা এ সময় লাশবাহী গাড়ির সাথে ছিলেন।

জানাজায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কোনো নেতাকে অংশ নিতে দেখা যায়নি। তবে জানাজা শেষে কাকরাইল মোড় থেকে কফিনবাহী মিছিলে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। এছাড়া গোলাম আযমের মৃত্যু নিয়ে কোনো শোকও জানায়নি বিএনপি। এদিকে গোলাম আযমের জানাজার আগে তার ছেলে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমি বলেন, ‘আমার বাবা অধ্যাপক গোলাম আযম ইসলামের খেদমতগার ছিলেন। আপনারা তাকে অন্তর থেকে ভালোবাসতেন বলেই এখানে ছুটে এসেছেন। এজন্য আমি পরিবারের পক্ষ থেকে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আপনাদের বলছি, বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১০ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন। একটি মিথ্যা মামলায় তিনি কারাবন্দি ছিলেন। এ অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।’

কোনো হাসপাতালের মর্গে লাশ না রেখে বাসায় তার লাশ রাখা প্রসঙ্গে আযমী বলেন, আমাদের অনেক আত্মীয়স্বজন আছেন তাদের সুবিধার্থে এবং তিনি শুধু আমার বাবাই নন, তিনি বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের নেতা। তাকে দেখার অধিকার সবারই রয়েছে। তাই ফ্রিজিং গাড়িতে তার লাশ জনতার দেখার জন্য রাখা হয়েছিল। জানাজা শেষে মাইকে লাশ মগবাজারে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। হাজার হাজার মানুষ শোক মিছিল সহকারে মগবাজারের উদ্দেশে রওনা হয়। এ সময় প্রায় এক ঘণ্টা ধরে পল্টন, কাকরাইল, মগবাজার এলাকার বিভিন্ন সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিলো।

ককটেল বিস্ফোরণ: রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেট, দৈনিক বাংলার মোড় ও পল্টন এলাকায় ১০-১২টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে ককটেলগুলো বিস্ফোরিত হয়। পল্টন থেকে ২ জনকে আটক এবং ৫টি তাজা ককটেল উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরে একজনকে আটক ও অন্যজনকে থানায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এদিকে দৈনিক বাংলার মোড় থেকে পল্টন পর্যন্ত ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ভয়ে লোকজন ছোটাছুটি শুরু করে দেয়। তবে দ্রুত পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। জামায়াত কর্মীদের দাবি জানাজায় যাতে লোকজন সঠিকভাবে অংশ নিতে না পারে সেজন্য সরকারি দল এসব ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।

জুত নিক্ষেপ: এদিকে গোলাম আযমের লাশ বায়তুল মোকাররমে নেয়ার সময় ভিড়ের মধ্য থেকে একজন কফিনের দিকে লক্ষ্য করে জুতো নিক্ষেপ করে। এ সময় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা ছোটাছুটি ও তাকে ধরার চেষ্টা করলে পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। উল্লেখ্য, ১৯৮১ সালের ১ জানুয়ারি বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে একটি জানাজায় অংশ নিতে গেলে তার প্রতি জুতো নিক্ষেপ করা হয়েছিলো।