হামলাকারীদের কেউ পার পাবে না : প্রকৃত দোষী কোনো কারণে ছাড় পেলে অপরাধ প্রবণতা বাড়বে

চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে নগ্ন বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ ও প্রকৃত হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবির সাথে আরো অনেকের একাত্মতা ঘোষণা

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে নগ্ন বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে ও প্রকৃত দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে মৌনমিছিল, মানববন্ধন এবং পুলিশ সুপারের সাথে মতবিনিময় করেছেন আন্দোলনরত সাংবাদিকরা। গতকাল শনিবার দুপুরে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা ও হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পুনঃপ্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে পুলিশ সুপার বলেন, দেশের কোথাও এ ধরনের অসভ্য হামলার নজির নেই। কথা দিচ্ছি, হামলাকারীদের কেউ পার পাবে না।

চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে অযাচিত হামলার প্রতিবাদে ও প্রকৃত আসামিদের গ্রেফতারের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের গতকাল শনিবার ছিলো তৃতীয় দিন। এ দিনেও সকাল সাড়ে ১০টা থেকে চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত সাংবাদিকরা প্রেসক্লাবে সমবেত হতে থাকেন। সাড়ে ১১টার দিকে শুরু হয় কর্মসূচি পালনপূর্ব প্রতিবাদসভা। প্রেসক্লাব সভাপতি মাহতাব উদ্দীনের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক সরদার আল আমিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় নবীন-প্রবীণ সাংবাদিকেরা বক্তব্য রাখেন। এ সময় চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আরেফিন আলম রঞ্জু, যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান কবীর, যুবলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম আসমান, আব্দুল কাদের ও সুমন প্রেসক্লাবের সভায় উপস্থিত হন। জেলা যুবলীগ আহ্বায়ক প্রেসক্লাবে হামলার ঘটনাকে অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য করে বলেন, ঘটনার জন্য আমরা দুঃখিত, লজ্জিত, ব্যথিত। যারা এ ঘটনার জন্য দায়ী তাদের বিষয়ে সাংগঠনিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তা জানানো হবে। তিনি প্রেসক্লাবের ক্ষতবিক্ষত অবস্থা তথা ভাঙচুরের চেহারা দ্রুত সেরে তোলার প্রস্তাব দিয়ে আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিতের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, হামলাকারীদের পাশাপাশি পুলিশ নির্দোষ কিছু নিরীহ ছেলের বাড়িতেও যাচ্ছে। বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। বিব্রত হতে হচ্ছে। প্রেসক্লাবে হামলাসহ চুয়াডাঙ্গার সামগ্রিক বিষয়টি ভারতে অবস্থানরত হুইপকে ফোনে অবগত করানো হয়েছে। তিনি ফিরে প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দের সাথে বসবেন। সুষ্ঠু সমাধান দেবেন।

যুবলীগ নেতৃবৃন্দের প্রস্তাবনা বিবেচনায় রেখে প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালনের অংশ হিসেবে সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে ক্লাবের সামনেই সংক্ষিপ্ত মানববন্ধনে অংশ নেন। মৌনমিছিল সহকারে পুলিশ সুপারে সম্মেলনকক্ষে পৌঁছান। এ সময় পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালেহ উদ্দীন, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান মুন্সী উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ প্রেসক্লাবে হামলার সময় কর্তব্যরত পুলিশের দায়িত্বহীনতার প্রসঙ্গটি উপস্থাপনের পাশাপাশি প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দেন। পুলিশ সুপার ঘটনার দিন বিএডিসি খামারে শ্রমিকদের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ এবং তার জের ধরে উত্তেজনাকর পরিবেশ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করে বলেন, পুলিশের নজর যখন বিএডিসি খামারের দিকে তখন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটেছে। প্রেসক্লাবে হামলার সময় পুলিশ সদস্যের কর্তব্যে গাফিলতির বিষয়টিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। হামলাকারীদের কেউ ছাড় পাবে না। ইতোমধ্যেই ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বক্তব্য রাখেন- প্রবীণ সাংবাদিক আজাদ মালিতা, শেখ সেলিম, ফাইজার চৌধুরী প্রমুখ। পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি শেষে সন্ধ্যায় প্রেসক্লাবে আন্দোলন এবং পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যালোচনাসহ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রেসক্লাব সভাপতির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আজাদ মালিতা, আব্দুল মজিদ জিল্লু, শেখ সেলিম, রফিকুল ইসলাম, রাজীব হাসান কচি, শাহ আলম সনি, আহাদ আলী মোল্লা, ফাইজার চৌধুরী, বিপুল আশরাফ, আতিয়ার রহমান, আব্দুস সালাম, জামান আখতার, জাহিদুল ইসলাম, জাহিদ জীবন, আরিফুল ইসলাম ডালিম, হোসেন জাকির, অ্যাড. ফজলে রাব্বী সাগর প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বক্তারা চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে হামলা চালিয়ে ৪ জন সাংবাদিককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও মোটরসাইকেলসহ কাঁচ, চেয়ার, টেবিল ভাঙচুরকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানিয়ে আগামী দিনে সাংবাদিকদের নিরাপত্তার প্রসঙ্গটি তুলে আনেন। প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ আজ রোববার বিশেষ বৈঠকে মিলিত হয়ে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবেন বলে জানান।

সন্ধ্যার পর সভা চলাকালে রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্রেসক্লাবে সহকর্মীদের সাথে নিয়ে উপস্থিত হন যুবলীগ নেতা নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার। তিনি প্রেসক্লাবে হামলা, ৪ সাংবাদিককে মারধর ও ভাঙচুর তাণ্ডবের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের উপযুক্ত শাস্তি চাই আমরা। প্রেসক্লাবের মতো স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে কেউ পার পেলে তাদের মধ্যে অভিন্ন অপরাধ প্রবণতা পেয়ে বসবে। ফলে হুমকিধামকি বা অন্য কোনো প্রভাবে প্রভাবিত না হয়ে প্রকৃত দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আমরা চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাথে আছি, থাকবো। অপরদিকে দুপুরে প্রেসক্লাবে সভা চলাকালে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু, মেহেরপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ অনেকেই প্রেসক্লাবে হামলার প্রতিবাদ জানাতে প্রেসক্লাবে হাজির হন। প্রেসক্লাবের ন্যায়সঙ্গত দাবি দাওয়ার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে বক্তব্য রাখেন। জিপু চৌধুরী বলেন, প্রেসক্লাবে একটি মহল হামলা চালালেও আমাদের তীব্র সমালোচনার মধ্যে পড়তে হয়েছে। আমরাও চাই প্রকৃত দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি। মেহেরপুর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, কেউ একবার অপরাধ করে পার পেলে সমাজে অপরাধের মাত্রা দিন দিন বাড়তে থাকে। আমরা চাই এ ধরনের বর্বরোচিত হামলার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ওয়াহেদুজ্জামান বুলাসহ বিএনপি নেতৃবৃন্দ প্রেসক্লাব পরিদর্শন শেষে প্রেসক্লাবে হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আইনশৃঙ্খলার নাজুক পরিস্থিতির বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন- একটি শহরে সশস্ত্র মিছিল হলো, অথচ পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিলো না। মিছিলটি যখন শহরের প্রধান প্রধান সড়কে একের পর এক অটো ভাঙচুর করেছে তখনই প্রতিহত করলে অন্তত প্রেসক্লাব আক্রান্ত হতো না।