স্টাফ রিপোর্টার: দাসত্বের জন্য বিক্রি করতে থাইল্যান্ডের গহিন অরণ্যে জড়ো করা ১৩৪ জনের মধ্যে ১১৮ জন নিজেদের বাংলাদেশের নাগরিক বলে দাবি করেছেন। অবশিষ্টরা মিয়ানমারের নাগরিক বলে পরিচয় দেন। থাই কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশকে এ তথ্য জানিয়েছে।
বাংলাদেশ তাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত হওয়ার লক্ষ্যে তাদের সাথে দেখা করে পরিচয় জানার অনুমতি (কনস্যুলার সুবিধা) চেয়েছে। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী গ্রামের বাড়িতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্ত করার পর বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া হিসেবে ঢাকা ও ব্যাংককের মধ্যে যোগাযোগ শুরু হয়েছে। আটক ব্যক্তিদের ওপর যে নির্যাতন, বঞ্চনা ও প্রতারণা করা হয়েছে তাতে অনেকেই তাদের একালের ক্রীতদাস হিসেবে অভিহিত করেছেন।
থাই কর্তৃপক্ষের কাছে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। কক্সবাজার থেকে বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গা হিসেবে পরিচিত মিয়ানমারের নাগরিকদের নৌকাযোগে পাচারে সক্রিয় একটি আন্তঃদেশীয় চক্র। জনসাধারণের মধ্যে ধারণা ছিলো, নৌকায় বিদেশে অবৈধভাবে কর্মী হিসেবে পাঠানো হয়। কিন্তু এবার থাইল্যান্ডে উদ্ধারের পর জানা গেলো, এসব লোকদের বিদেশে বিক্রি করা হয় যা দাসত্বের মধ্যে পড়ে। সারাদেশ থেকে পাচারকারীরা কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় তাদের জড়ো করে নানা কৌশলে পাচার করে থাকে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, আটক ব্যক্তিরা মানব পাচারের শিকার হয়েছেন। তিনি রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এশিয়া-ইউরোপ সম্মেলনে (আসেম) যোগদানে ইতালি সফর সম্পর্কে অবহিত করতে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রীকে সহায়তা করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (দ্বিপক্ষীয়) মুসতাফা কামাল। তিনি বলেন, এ বিষয়ে থাইল্যান্ডের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। সমুদ্রপথে সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর ফুকেটের কাছে খাৎরা প্রদেশের একটি এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। এখন আটক ব্যক্তিদের বিভিন্ন গ্র“পে ডিটেনশন ক্যাম্পে নিয়ে সাক্ষাৎকার নিচ্ছে থাই কর্তৃপক্ষ।
সচিব আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে ১১৮ জন নিজেদের বাংলাদেশের নাগরিক বলে দাবি করেছেন। প্রথম গ্রুপে ৫৩ জনের সাক্ষাৎকার নিলে ৩৮ জন বাংলাদেশী বলে দাবি করেন। অবশিষ্টরা বলেছেন, তারা মিয়ানমারের নাগরিক। দ্বিতীয় গ্রুপে ৮১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেখানে ৮০ জনই নিজেদের বাংলাদেশি দাবি করেন। অবশিষ্ট একজন নিজেকে মিয়ানমারের নাগরিক বলে দাবি করেছেন। থাই কর্তৃপক্ষ আমাদের এসব তথ্য দিয়েছে।
আটক ব্যক্তিদের অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বিচারের লক্ষ্যে দেশটির কারাগারে আটক রাখা হবে নাকি তাদের সংশ্লিষ্ট দেশে ফেরত পাঠানো হবে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট অবস্থান এখনও ব্যক্ত করেনি ব্যাংকক। তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশা প্রকাশ করছে, অভিবাসনসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক নিয়ম-কানুন মেনে থাইল্যান্ড বাংলাদেশীদের ফেরত দেবে।
মুসতাফা কামাল বলেন, থাইল্যান্ডের সাথে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। আটক ব্যক্তিদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে বাংলাদেশীদের আমরা ফিরিয়ে আনতে পারব। আমরা ইতিমধ্যে কনস্যুলার সুবিধা চেয়েছি। থাইল্যান্ড থেকে ইতিপূর্বেও আমরা আমাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। তিনি জানান, ব্যাংককে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এ বিষয়ে থাই কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে।
বিবিসি সাম্প্রতিক কয়েকটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, থাইল্যান্ডের উপকূলে মানব পাচার প্রায় নিয়মিত ঘটনা। বাংলাদেশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াজুড়ে মানব পাচারের একটি সংঘবদ্ধ গ্রুপ কাজ করে। এবারের ক্রীতদাস হিসেবে পাচারের জন্য যাদের থাইল্যান্ডের গহীন জঙ্গলে জড়ো করা হয়েছিল, তাদের মাদক খাইয়ে অজ্ঞান করে নৌকাযোগে সেখানে নেয়া হয়। তবে স্থানীয় প্রশাসন তাদের সন্ধান পেয়ে উদ্ধার করে।