শিশু শিক্ষার্থীদের রান্না করা খাবার এবং শঙ্কা

 

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের মাঝে খাবার বিতরণ শুধু বিদ্যালয়ে উপস্থিতি বৃদ্ধিই করে না, ঝরেপড়া রোধেও সহায়ক। এর পাশাপাশি পুষ্টির জোগানও হয়। এ বিবেচনায় বেশ ক’বছর আগে প্রাথমিক শিক্ষাকার্যক্রমের সাথে যুক্ত করা হয় স্কুল ফিডিং কর্মসূচি। এ কর্মসূচির আওতাভুক্ত এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে এক প্যাকেট করে বিস্কুট সরবরাহ করা হতো। এতে শিশুদের স্কুলে আসার আগ্রহ বৃদ্ধির পাশাপাশি ঝরেপড়া রোধে সহায়ক হয় অনেকাংশ। সম্প্রতি আরও পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাবার প্রদানের ক্ষেত্রে সরকার বিস্কুটের পরিবর্তে রান্না করা খাবার দেয়ার বিষয়ে পরিকল্পনা নিয়েছে। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, প্রতিবেশী দেশ ভারতে এ কর্মসূচি দীর্ঘদিন ধরে চালু রয়েছে। সুফলের পাশাপাশি খাবার বিষক্রিয়ায় একযোগে বহু শিশু শিক্ষার্থীর প্রাণহানির রোমহর্ষক উদাহরণও রয়েছে। সে বিবেচনায় আমাদের দেশে রান্না করা খাবার এবং খাবারের মানসহ খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি কতোটা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে? এ প্রশ্নও সামনে আসে বৈকি!

 

দেশের ৬৩ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক কোটি ৯০ লাখ শিশুকে টিফিনে বিস্কুটের বদলে রান্না করা খাবার দেয়ার পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের পথে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ন্যাশনাল স্কুল ফিডিং পলিসি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে একটি আইনের খসড়া তৈরি হতে পারে। এ ব্যাপারে ভারত ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে চালু করা কৌশলগুলো অনুসরণের কথা ভাবছে সরকার। সব প্রাথমিক শিক্ষার্থীকে দুপুরের রান্না করা খাবার দেয়া হলে শিশুদের মেধাবিকাশ ও স্বাস্থ্যরক্ষা নিশ্চিত হবে। এতে জাতিকে মেধাবী প্রজন্ম উপহার দেয়া যাবে। দুপুরে রান্না করা খাবার সরবরাহ করতে গেলে প্রতি বছর খরচ হবে প্রায় নয় হাজার কোটি টাকা। জাতির ভবিষ্যত উজ্জ্বল করতে ব্যয়ের বোঝা নিয়ে ভাবার আগে নিরাপদ খাদ্য সুষ্ঠুভাবে বিতরণের বিষয়টিকেই অধিক গুরুত্ব দেয়ার তাগিদ দেয় ভারতের একটি বিদ্যালয়ে অসংখ্য শিশু শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনাটি। যেহেতু আমরা আমাদের দেশকে অনিয়ম এবং দুর্নীতিমুক্ত করা দূরের কথা হ্রাসেও তেমন সাফল্যের দাবি করতে পারি না। মূলত সে কারণেই ভালো উদ্যোগেও শঙ্কা। যদিও এ শঙ্কা বাড়তি সতর্কতারই তাগিদ দেয়। সরকারকেই এ তাগিদ অনুভব করতে হবে।

 

পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রান্না করার পাশাপাশি খাবারের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করা হবে তা যেন সঠিকভাবে সঠিক পথে ব্যয় হয়, সে বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে কর্তৃপক্ষকে। অতীতে বাইরে থেকে সরবরাহ করা টিফিন খেয়ে অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। রান্না করা খাবার সরবরাহ করতে গিয়ে যেন কখনও সেই ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মোটকথা গোটা বিষয়টি পরিচালিত হবে সেবার মানসিকতায় ও স্বচ্ছভাবে। এতে কোনো প্রকার দুর্নীতি কাম্য নয়। একটি কথা মনে রাখতে হবে, শিশুরা জাতির ভবিষ্যত। স্কুলে ঝরেপড়ার হার শতভাগ বন্ধ করতে হলে রান্না করা খাবার বিষয়টি যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনই পুষ্টিহীনতা দূর করে মেধাবী প্রজন্ম জাতির জন্য খুবই জরুরি। সরকারি সাহায্যের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরও এই সেবামূলক কাজটিতে এগিয়ে আসা উচিত। আসবে, যদি দুর্নীতি ও অনিয়ম দূর করা যায়। তা কি হবে? দীর্ঘশ্বাস লেগেই আছে।

Leave a comment