মরা গাছের সাথে কাটা হচ্ছে সবুজ গাছ !

ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা সড়কের পাশ থেকে শত বছরের মূল্যবান গাছ নামমাত্র মূল্যে বিক্রি

 

শাহনেওয়াজ খান সুমন: কাঠব্যবসায়ীদের হিসেবে যার একটির মূল্য দু লক্ষাধিক টাকা, সেখানে ১০টি গাছ বিক্রি করা হয়েছে মাত্র এক লাখ টাকায়। টেন্ডার ছাড়াই সড়কের পাশে থাকা বিশাল আকৃতির রেইনট্রিকড়ুই গাছ এভাবে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করেছে ঝিনাইদহ জেলা পরিষদ। গাছ বিক্রির সকল নিয়মকানুন লঙ্ঘন করে গোপনে কোটেশন দেখিয়ে নিজেদের পছন্দের লোকের কাছে এই গাছ বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।

অভিযোগকারীরা বলেছেন, ইতোমধ্যে গাছগুলো কাটার কাজ শুরু হয়েছে। ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কের নগরবাথান নামক স্থানে চলছে দ্রুত গতিতে গাছ কাটা। এরই মধ্যে ৪/৫টি গাছ কাটা শেষ হয়েছে, বাকিগুলো দ্রুত গতিতে কাটা চলছে। যেগুলো কাটা হয়েছে সেগুলোর গুড়ি মহাসড়কের ওপর পড়ে আছে। মাথা শুকিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ডাল ভেঙে পড়া, একটি ডাল ভেঙে গাছের একপাশ শুকিয়ে যাওয়া গাছগুলোও মোতা দেখিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কের চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে নগরবাথান পর্যন্ত বেশ কিছু শত বছরের রেইনট্রিকড়ুই গাছ রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি গাছ নানা সময়ে ডাল ভেঙে পড়ায় মাথা শুকিয়ে গেছে। আবার কিছু গাছের একটি ডাল ভেঙে পড়ায় একপাশ শুকিয়ে আছে। এ গাছগুলো জেলা পরিষদ কোনো প্রকার টেন্ডার ছাড়াই মোতা দেখিয়ে বিক্রি শুরু করেছে। সবুজ তরতাজা আছে এমন গাছও কাটা হচ্ছে। জেলা পরিষদের একটি সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ঝিনাইদহ-যশোর সড়ক থেকেও বেশ কয়েকটি গাছ বিক্রি করা হয়েছে। যেগুলো ক্রেতারা কেটে বিক্রি করেছেন। এরপর ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা সড়কের নগরবাথান এলাকায় থাকা ১০টি রেইনট্রি গাছ বিক্রি করা হয়েছে মাত্র ১ লাখ টাকায়। শহরের পাগলাকানাই এলাকার কাঠব্যবসায়ী জিন্নাহ আলী বিভিন্ন ব্যক্তির নামে এ গাছ কিনেছেন। তিনি শ্রমিক দিয়ে দ্রুতগতিতে গাছগুলো কাটার কাজ করছেন। পরিষদের ওই সূত্রটি আরো জানিয়েছে, এ ১০টি কাটা হলে ঝিনাইদহ-যশোর সড়কে থাকা বিশাল আকৃতির আরো ৪টি মেহগুনি গাছ কাটা হবে। যে ৪টি গাছ মাত্র ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে।

একাধিক কাঠব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করে জানান, ওই সড়কে থাকা ভালো গাছগুলোর মূল্য ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। আর ডালভাঙা গাছগুলোর প্রতিটির মূল্য দু লক্ষাধিক। মেহগনি গাছের মূল্যও ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। সেখানে নামমাত্র মূল্য দেখিয়ে গোপনে বিক্রি করা হচ্ছে গাছগুলো। গাছ বিক্রির কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না।

ঝিনাইদহ বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা লিয়াকত হোসেন জানান, সবুজ গাছ কাটার সুযোগ নেই। মরা গাছ বিক্রি করতে হলে প্রথমে উপজেলা বন সংরক্ষণ কমিটি থেকে অনুমোদন নিতে হবে। এরপর জেলা বন সংরক্ষণ কমিটি অনুমোদন দেবে। তারপর বিভাগীয় পর্যায়ের অনুমোদন নিতে হবে। সেই সাথে গাছের বন বিভাগের কর্মকর্তা দিয়ে গাছের মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। সর্বশেষ উন্মুক্ত টেন্ডার এর মাধ্যমে বিক্রি করতে হবে।

জেলা পরিষদের একটি সুত্র জানিয়েছে, এ সকল নিয়মের কোনোটিই মানা হয়নি। শুধুমাত্র ৩/৪ জনের নাম লিখে ৩/৪টি দর বসিয়ে গাছ বিক্রি করা হচ্ছে। যার নামে গাছ বরাদ্দ দেয়া হবে তিনিই একাধিক দর বসিয়ে কাগজপত্র তৈরি করে দিচ্ছেন। এভাবে চলছে গাছ বিক্রির অপতৎপরতা।

চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কের ১০টি গাছ ক্রেতা জিন্নাহ আলীর সাথে কথা বললে তিনি জানান, গাছগুলো তিনি কিনেছেন। তিনি বলেন, গাছগুলো মরা ছিলো। যে কারণে জেলা পরিষদ বিক্রি করেছে। কোনো তাজা গাছ কাটা হচ্ছে না বলে জানান।

এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মৈনূর জানান, এভাবে গাছ বিক্রি করার নিয়ম নেই। তিনি বিষয়টি জানেন না। তবে খোঁজ নিয়ে দেখবেন কেউ চুরি করে কাটছেন, না কেউ বিক্রি করেছেন। জেলা পরিষদ প্রশাসক জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ জোয়ার্দ্দারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, গাছগুলো কোটেশন নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে। এগুলো মরা গাছ। নামমাত্র মূল্যে বিক্রির বিষয়ে বলেন, মরা গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। যে কারণে কম মূল্যে বিক্রি হয়েছে।