চুয়াডাঙ্গায় ৮৯টি মণ্ডপে দুর্গাপ্রতিমা স্থাপন : প্রতিটি মন্দিরে সরকারি বরাদ্দ ৫শ কেজি চাল
আলম আশরাফ: হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। কয়দিন বাদেই অনুষ্ঠিত হবে এ উৎসব। এরই মধ্যে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মূর্তি কারিগররা। রাত-দিন প্রতিমা তৈরিতে তারা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কার চেয়ে কে বেশি আকর্ষণীয় মণ্ডপ তৈরি করবে তা নিয়ে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন অনেকে। কেউ কেউ ভারত থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে মূর্তির নমুনা সংগ্রহ করে তার আদলে তৈরির চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে উপজেলার সবকটি মণ্ডপে মূর্তি তৈরি কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন চলছে দেবী দুর্গাকে রাঙিয়ে তোলার কাজ। মূর্তি শিল্পীরা তাদের সুনিপূণ রঙ্গের তুলিতে শারদীয় দেবী দুর্গাকে সাজিয়ে তুলছেন। এছাড়া আনুসাঙ্গিক অন্যান্য প্রস্তুতিও চলছে পুরোদমে। বছরের একটি মাত্র এ পূজাকে ঘিরে সনাতন ধর্মালম্বীদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে উৎসবের আমেজ। যা কয়েকদিন পরেই পরিপূর্ণতা পাবে। দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে মার্কেটগুলোতে কেনাকাটার ধূম লেগেছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা পূজা উদযাপন পরিষদসূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলার ৪টি উপজেলায় ৮৯টি পূজামণ্ডপ স্থাপন করা হয়েছে। এদিকে পূজা উৎসবকে কেন্দ্র করে চুয়াডাঙ্গায় হিন্দু ধর্মালম্বীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই অধিকাংশ পূজামণ্ডপ ও প্রতিমা বানানোর কাজ শেষ হতে চলেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গা জেলায় এ বছর দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রতিটি মণ্ডপে ৫শ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিয়েছে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসাইন চার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর এই বরাদ্দ ইস্যু করেন। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ২৫টি ও বরাদ্দের পরিমাণ ১২ দশমিক ৫শ মেট্রিক টন চাল, আলমডাঙ্গায় ৩১টি ও বরাদ্দের পরিমাণ ১৫ দশমিক ৫শ মেট্রিক টন চাল, দামুড়হুদায় ১৮টি ও বরাদ্দের পরিমাণ ৯ মেট্রিক টন চাল এবং জীবননগর উপজেলায় ১৫টি ও বরাদ্দের পরিমাণ ৭ দশমিক ৫শ মেট্রিক টন চাল।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ২৫টি পূজামণ্ডপে দুর্গা উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। পূজামণ্ডপগুলো হলো- তালতলা বারোয়ারী দূর্গা মন্দির, তালতলা ষষ্ঠীতলা দুর্গা মন্দির, কুলচারা দুর্গা মন্দির, বেলগাছি বারোয়ারী দুর্গা মন্দির, কেদারগঞ্জ মালোপাড়া বারোয়ারি দুর্গা মন্দির, চুয়াডাঙ্গা বড়বাজার দুর্গা মন্দির, দাসপাড়া সত্য সনাতন দুর্গা মন্দির, জয়দুর্গা শিব মন্দির, শ্রী শ্রী বারোয়ারি দুর্গা মন্দির, সার্বজনীন বারোয়ারি দুর্গা মন্দির, শ্রী শ্রী দুর্গাপূজা মন্দির চুনুরিপাড়া, মোমিনপুর পূজামণ্ডপ, সরিষাডাঙ্গা পূজামণ্ডপ, সিন্দুরীয়া পূজামণ্ডপ, আলিয়ারপুর সার্বজনীন পূজামণ্ডপ, বোয়ালিয়া সার্বজনীন পূজামণ্ডপ, সরোজগঞ্জ সার্বজনীন পূজামণ্ডপ কাছারীপাড়া, ফুলবাড়ি সার্বজনীন পূজা মন্দির, শ্রী বারোয়ারি পূজামণ্ডপ, শ্রী শ্রী শারদীয় দুর্গা পূজামণ্ডপ বোয়ালিয়া, গড়াইটুপি পালপাড়া পূজামণ্ডপ, গড়াইটুপি মিস্ত্রিপাড়া পূজামণ্ডপ, তেঘরি হিন্দুপাড়া পূজামণ্ডপ, বলদিয়া দাসপাড়া পূজামণ্ডপ, খেজুরা হালদারপাড়া বারোয়ারি পূজামণ্ডপ।
আলমডাঙ্গা উপজেলায় এ বছর ৩১টি পূজামণ্ডপে উৎসব হবে। সেগুলো হলো- রথতলা শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির, বাবুপাড়া শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির, কলেজপাড়া শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির, স্টেশনপাড়া শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির, ক্যানালপাড়া শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির, গোবিন্দপুর হরিতলা শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির, গোবিন্দপুর দাসপাড়া শ্রী শ্রী কালী মন্দির, পুরাতন বাস্ট্যান্ডপাড়া কালী মন্দির, আনন্দধাম দাসপাড়া শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির, বণ্ডবিল শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির, নান্দবার শ্রী শ্রী লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির, নান্দবার বাবুপাড়া শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির, হারদী শ্রী শ্রী আর্য মন্দির, খাসকররা শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির, রায়লক্ষ্মীপুর শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির, ঘোলদাড়ি শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির, হাড়োকান্দি শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির, ছয়ঘরিয়া শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির, মুন্সিগঞ্জ শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির, গড়গড়ি শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির, পুটিমারী শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির, বেতবাড়িয়া শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির, খুদিয়াখালী শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির, পুরাতন পাচলিয়া দাসপাড়া দুর্গা মন্দির, জামজামি শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির, কুলপালা শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির, ভালাইপুর শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির, কালীদাসপুর শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির, বকসিপুর শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির, মাজু শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির, ফরিদপুর শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির।
দামুড়হুদা উপজেলায় ১৮টি মন্দিরে দুর্গোৎসব হবে। সেগুলো হলো- দর্শনা পুরাতন বাজার পূজামণ্ডপ, দর্শনা আমতলা পূজামণ্ডপ, দর্শনা কেরুজ পূজামণ্ডপ, কালীদাসপুর দাসপাড়া পূজামণ্ডপ দর্শনা, কালীদাসপুর বাগদীপাড়া পূজামণ্ডপ, দামুড়হুদা মাতৃমন্দির পূজামণ্ডপ, দামুড়হুদা দাসপাড়া পূজামণ্ডপ, পুড়াপাড়া পূজামণ্ডপ, চিৎলা পূজামণ্ডপ, ছুটিপুর পূজামণ্ডপ, জগনাথপুর পূজামণ্ডপ, কালিয়াবকরি পূজামণ্ডপ, বিষ্ণুপুর পূজামণ্ডপ, কার্পাসডাঙ্গা পূজামণ্ডপ, চণ্ডিপুর পূজামণ্ডপ, ডুগডুগি পূজামণ্ডপ, জয়রামপুর পূজামণ্ডপ ও পারকৃষ্ণপুর পূজামণ্ডপ।
জীবননগর উপজেলায় ১৫ পূজামণ্ডপে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। সেগুলো হলো- শাররদীয় দুর্গা পূজামণ্ডপ সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির, দৌলৎগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন পূজামণ্ডপ, দেহাটি পালপাড়া পূজামণ্ডপ, মনোহারপুর আদিবাসিপাড়া পূজামণ্ডপ, মনোহারপুর পালপাড়া পূজামণ্ডপ, সেনেরহুদা দাসপাড়া পূজামণ্ডপ, শিয়ালমারী আদিবাসিপাড়া পূজামণ্ডপ, সিংনগর হালদারপাড়া পূজামণ্ডপ, সুটিয়া পশ্চিমপাড়া মহাদেব মন্দির, শাখারীয়া দাসপাড়া শীবকালী মন্দির, আন্দুলবাড়িয়া জুগিপাড়া পূজামণ্ডপ, নিশ্চিন্তপুর মালোপাড়া পূজামণ্ডপ, মাধবপুর কালী পূজামণ্ডপ, রায়পুর ঠাকুরবাড়ি সার্বজনীন পূজামণ্ডপ ও রায়পুর বারুইপাড়া সার্বজনীন পূজামণ্ডপ।
এদিকে ইতোমধ্যে মণ্ডপ ও প্রতিমা তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেকটি মণ্ডপে পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুর্গাপূজা যাতে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয় এজন্য প্রশাসনসহ সর্বস্তরের ব্যক্তিবর্গের সাথে আলোচনা করছে জেলা প্রশাসন। সুষ্ঠুভাবে পূজা তৈরি ও সম্পন্নের জন্য কাজ করা হচ্ছে।
অন্যদিকে এবারের উৎসব ভালোভাবে পালন করার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়। দুর্গা মা পৃথিবীতে আগমন করবেন তাই হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। সকলের মাঝে সাজসাজ রব। মহিলারাও সংসারের কাজ-কর্ম নিয়ে ব্যস্ত। তবে সবকিছুই মাকে ঘিরে বলে জানালেন হিন্দু মহিলারা। চুয়াডাঙ্গায় পূজা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি গঠন করা হয়েছে। পূজাকে কেন্দ্র করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যক্তিবর্গের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসাইন জানান, সরকারিভাবে পূজা উদযাপনের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ মণ্ডপগুলোতে দেয়া হয়েছে। এছারা দুর্গোৎসবে মণ্ডপগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।