আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জ পশুহাটের জমি দখল করে পাকাভবন নির্মাণের হিড়িক
মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি : আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জ পশুহাটের জায়গা বেদখলের হিড়িক পড়ে গেছে। সরকারি জমিতে একের পর এক নির্মাণ করা হচ্ছে পাকা ভবন। প্রশাসনের নমনীয়তার কারণেই ঐতিহ্যবাহী হা হাটটি প্রায় বন্ধের উপক্রম হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে শিগগিরই সাপ্তাহিক হাটগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। সরকার হারাবে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে এলাকার সচেতন মহল মনে করছে।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলার ঐতিহ্যবাহী পশুহাট ছিলো মুন্সিগঞ্জ পশুহাট। নানা রকম ষড়যন্ত্রের কারণে পশুহাটটি ক’বছর আগে বন্ধ হয়ে গেছে। ছাগলের হাটটি কোনোভাবে টিকে আছে। তবে এখানে সপ্তাহের প্রতি শনি, মঙ্গল ও বুধবারে পানহাট বসে। সরকার এখান থেকে বছরে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি যেভাবে জমি দখল-বেদখল করে এখানে পাকা ভবন উঠতে শুরু করেছে তাতে এ হাটের জমি শিগগিরই ফুরিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে হাট বসার জায়গাই থাকবে না। ইদানীং মুন্সিগঞ্জ পশুহাটের জায়গা দখলের হিড়িক পড়ে গেছে। এলাকার কতিপয় অসাধু ব্যক্তি একের পর এক পাকা ভবন নির্মাণ করছে। তাতে মনে হচ্ছে এখানে যেন তুঘলকি কাণ্ড শুরু হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের নমনীয়তার কারণে হাটের জায়গা বেদখল হয়ে যাচ্ছে। বাদ যাচ্ছে না যাত্রীছাউনিও। সেটিরও অংশবিশেষ ঘিরে দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি গাছও মাঝে মাঝে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। এ যেন মগের মুল্লুক। দেখার যেন কেউ নেই। স্থানীয় মুন্সিগঞ্জ ভূমি অফিসে অভিযোগ করেও কোনো ফল পাওয়া যায় না। এমন কী অভিযুক্ত গাছচোর বা ভূমি দখলদারদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি। ফলে অবৈধ দখলদারদের দৌরাত্ম্য দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। সরকারি জমি দখল করে একের পর এক গড়ে ওঠা দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা মাঝে মাঝে লাখ লাখ টাকায় দোকানপাট বেচাকেনা করেন বলেও অভিযোগকারীরা জানান। হরহামেশাই ঘটছে সরকারি জমি দখলের ঘটনা। গতকালও স্থানীয় খুদিয়াখালী আবাসনে পাকাঘর নির্মাণের কাজ চলছিলো। আলমডাঙ্গা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলমের নির্দেশে জেহালা ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল হক রোকন সেখানে এসে কাজ বন্ধ করে দেন। এ ছাড়া আগামী ৭ দিনের মধ্যে মুন্সিগঞ্জ পশুহাটস্থ আবাসনের সামনের মঞ্জুরের দোকান সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। নতুন নির্মাণকৃত কৃষ্ণপুর গ্রামের উকিলের দোকান নির্মাণে বাধা দেন তিনি। বাজারটিতে নতুন করে দোকান নির্মাণ করা হলে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি।
আলমডাঙ্গার জেহালা ইউনিয়নাধীন মুন্সিগঞ্জ পশহাটটি প্রায় ৭০ বিঘা জমির ওপর অবস্থিত। প্রায় শত বছরের ঐহিয্যবাহী বাজাটিতে সাপ্তাহিক পানের হাট বসে তিনদিন। ছাগলভেড়া ছাড়া পশু বেচাকেনা আর হয় না। এই সুযোগে এক শ্রেণির ভূমি দস্যু বাজারের মেন পজিশন দখল করে বিক্রি করে কেউ কেউ আঙুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছেন। কেউ কেউ প্রধান রাস্তার দু ধারের জমি দখল করে গড়ে তুলেছেন পাকা দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তাদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি বাজারের ভেতরের জমিও বেদখল শুরু করেছেন। জমি দখল করে গড়ে উঠছে বিভিন্ন পাকা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এভাবে বাজারের জমি দখল হলে বাজারটিতে পানহাট ও পশু বিক্রির জন্য এক বিন্দু জায়গাও অবশিষ্ট থাকবে না বলে ভুক্তভোগীরা আশঙ্কা করছেন।
গতকাল মুন্সিগঞ্জ পশুহাটস্থ খুদিয়াখালী আবাসনের সামনে কৃষ্ণপুর গ্রামের মৃত ভোকার ছেলে উকিল পাকা দোকান নির্মাণ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদক সেখানে গিয়ে ছবি তুলতে গেলে উকিলের আত্মীয় পুটিমারী গ্রামের মৃত সমশেরের ছেলে স্বপন (৩০) বাধা দেন এবং অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, আমি ফ্যামিলি প্লানিঙে চাকরি করি। এখানে পাকা দোকান করবো তাতে কী হয়েছে? ডিসি–ইউএনও আমার কিছুই করতে পারবে না। এ ব্যপারে আলমডাঙ্গার নির্বিহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলমের কাছে মোবাইলফোনে জানতে চাইলে তিনি তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে জেহালা ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল হক রোকন, মুন্সিগঞ্জ ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন ও মুন্সিগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ মিজান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন এবং উকিলের দোকানের পাশে আবাসনের সামনের নতুন নির্মাণকৃত মঞ্জুরের দোকান আগামী ৭ দিনের মধ্যে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন। আলমডাঙ্গা ইউএনও’র উদ্ধৃতি দিয়ে চেয়ারম্যান বলেন বাজারে নতুন করে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে দেয়া হবে না। কেউ দোকানপাট বা ঘর নির্মাণ করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। সচেতন মহল বাজারের সরকারি জমির ওপর গড়ে তোলা সকল অবৈধ দোকানপাট ও পাকাভবন উচ্ছেদের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের সুদৃষ্টি কামনা করেছে।