বিশ্ববাসীকে শিক্ষা দেয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে হবে

            মানুষ বাড়ছে, বনবাদাড়সহ আবাদী জমি কমছে। সুবজে ভরা ভূমিতে গড়ে উঠছে আবাসস্থল, কলকারখানা। পরিবেশ ভারসাম্য হারালেও মানুষের প্রয়োজনেই মানুষ সর্বগ্রাসী হয়ে উঠছে। মানুষ কবে থেকে সর্বগ্রাসী? মানুষ যেদিন মানুষ হয়েছে অর্থাৎ সভ্যতার আতুরঘর থেকেই শুরু ভারসাম্য হ্রাস বা গ্রাস। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে না পারলে মানুষ বাঁচতে পারবে না- এটা বুঝতে বড্ড দেরি হলেও যখন উপলব্ধিতে এসেছে, নানাভাবে পরীক্ষিত হয়েছে তখন বাসযোগ্য পরিবেশ রক্ষায় অবহেলা প্রজন্মকে অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ করবে। করছে।

পরিবেশের ভারসাম্য হ্রাসে তৃতীয় বিশ্ব তথা আমাদের মতো দেশগুলো যতোটা না দায়ী, তার চেয়ে অধিক দায়ী উন্নত বিশ্ব। তাই বলে নিজেদের দায়িত্বে অবহেলা? মোটেই উচিত হবে না। মূলত এ কারণেই দেশে সবুজ বিপ্লব চলছে। দীর্ঘদিন ধরে বৃক্ষরোপণ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সরকারিভাবে বৃক্ষরোপণে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি দেশে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বর্ষাকাল বৃক্ষরোপণের উপযোগী। এ সময়ে সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের ধুম পড়ে। বৃক্ষরোপণের পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য হ্রাসে অধিকতর কারণগুলো চিহ্নিত করে তা পরিহারে ইটভাটা, কল-কারখানা স্থাপনসহ পলিথিন ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়, হচ্ছে। গ্রামেও বহুতলভবন নির্মাণের মধ্য দিয়ে আবাদী জমি রক্ষার বিশেষ উদ্যোগের কথা জানিয়েছে বর্তমান সরকার। প্লাস্টিক পলিথিনের বদলে পাটজাতদ্রব্যের ব্যবহারেও সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপ সাড়া জাগিয়েছে।জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সফল বলে দাবি করা হলেও বাস্তবে এখনও দীর্ঘশ্বাস। ইট প্রস্তুত ও পোড়ানোর মরসুম আসন্ন। চলতি বছরের অক্টোবরের মধ্যেই সবইটভাটা যাতে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি ব্যবহার করে,সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয়ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সুপারিশ করেছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিতসংসদীয় স্থায়ী কমিটি। গতকাল রোববার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির পঞ্চম বৈঠকে এসুপারিশ করা হয়।বৈঠকশেষে কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ সংসদের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদব্রিফিঙে এ সুপারিশের কথা জানিয়ে বলেন, এ সময়ের মধ্যে সব ইটভাটা যেনপরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে ইট প্রস্তুত করে, সেজন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিবেরপক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেয়ারও পরামর্শদেয়া হয়েছে। যেসব ইটভাটা এটি অনুসরণ করবে না, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থানেয়ার সুপারিশও করেছে কমিটি।বৈঠকে ইট প্রস্তুত ও ইটভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩দ্রুত কার্যকরের লক্ষ্যে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য জেলা প্রশাসকদের চিঠিদেয়ার পাশাপাশি মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনারও পরামর্শ দেয়াহয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকেও যেন এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়াহয়, সেই অনুরোধও করেছে সংসদীয় কমিটি।কমিটিরসভাপতি বলেন, আইন অনুযায়ী ইট পোড়ানো না হলে সরকার নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবে।বর্তমানে ৪০ শতাংশ ইটভাটা পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতি ব্যবহার করছে। বাকি ৬০শতাংশ ইটভাটাকে পরিবেশবান্ধব করতেই এ উদ্যোগ।

পরিবেশ বান্ধব ইটভাটা নিশ্চিত করার সংসদীয় স্থায়ী কমিটির উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। উদ্যোগ সফল করতে পারলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক হবে। গ্রামে বহুতল ভবন নির্মাণ করে আবাসনের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে আবাদি জমি বনবাদাড় গ্রাসের বর্তমান চক্রবৃদ্ধি গতি হ্রাস পাবে। বৃক্ষরোপণের চলমান অভিযান ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি সরকারি জমির বৃক্ষরাজি নিধন বন্ধে বাস্তবমুখি পদক্ষেপ প্রয়োজন। সবুজে ভরা সোনার বাংলাকে পরিবেশ বান্ধব করে গড়ে তুলে বিশ্ববাসীকে শিক্ষা দেয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে দরকার সম্মিলিত প্রচেষ্টা।