শোকাবহ১৫ আগস্ট আজ

 

স্টাফ রিপোর্টার: স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুররহমানের ৩৯তম শাহাদত বার্ষিকী আজ। শোকাবহ ১৫ আগস্ট। জাতীয় শোক দিবস। জাতিরজন্য কলঙ্কময় এক দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে জাতি হারিয়েছে স্বাধীনবাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এই দিনে কিছুবিশ্বাসঘাতক রাজনীতিকের চক্রান্তে কতিপয় বিপথগামী সেনাসদস্যের নির্মমবুলেটে সপরিবারে শাহাদত বরণ করেন ইতিহাসের এই মহানায়ক। সারাদেশে রাষ্ট্রীয়মর্যাদায় জাতীয় শোক দিবস হিসেবে দিবসটি পালিত হবে। শোক আর শ্রদ্ধায় পুরোজাতি স্মরণ করবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আরবঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবিওউচ্চারিত হবে শোক দিবসের নানা অনুষ্ঠানে। দিবসটি উপলক্ষে সরকারিভাবেওবিস্তারিত কর্মসূচি পালন করা হবে। আওয়ামী লীগ বিস্তারিত কর্মসূচির মাধ্যমেদিবসটি পালন করবে। সকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতেশ্রদ্ধা জানাবেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।দিবসটি উপলক্ষে আজ জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ওশাখা কার্যালয়ে ওড়ানো হবে কালো পতাকা। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক বিশেষক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। রেডিও ও টেলিভিশনে প্রচারিত হবে বিশেষঅনুষ্ঠানমালা। সকালে বঙ্গবন্ধু ভবন থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের অনুষ্ঠান সরাসরিসমপ্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন। দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট ওপ্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন।

১৯৭৫ সালের এই দিনে ধানমন্ডির ৩২নম্বরে নিজ বাসভবনে সপরিবারে শহীদ হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তারসাথে সেদিন প্রাণ হারান তার প্রিয় সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।তিন ছেলে মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল, সেনা কর্মকর্তা শেখ জামাল, শিশুপুত্র শেখরাসেল, নবপরিণীতা দু পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, আরও প্রাণহারান বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, মেয়ে বেবি সেরনিয়াবাত, শিশু পৌত্র সুকান্ত বাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি, তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রী আরজু মনি, নিকট আত্মীয় শহীদ সেরনিয়াবাত, আবদুর নঈম খান রিন্টু, বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগতনিরাপত্তা কর্মকর্তা কর্নেল জামিল প্রমুখ। পুরো জাতি আজ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেএই দিনের ঘটনায় শাহাদতবরণকারী সবাইকে স্মরণ করবে গভীর শ্রদ্ধার সাথে।সেদিন বঙ্গবন্ধুর দু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায়প্রাণে বেঁচে যান।

স্বাধীন সংগ্রামের জন্য একটি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা, মরণপণ সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করা এবং স্বাধীনতার পর একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগঠনে ভূমিকা রেখে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছিলেন একটি ইতিহাস, জাতির স্বাধীন সত্তাআর ঐক্যের প্রতীক। তার ইস্পাত-কঠিন নেতৃত্বই জাতিকে আত্মনিয়ন্ত্রণেরঅধিকার ছিনিয়ে আনার প্রেরণা যুগিয়েছিলো। পাকিস্তানি শাসকদের অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম-নিপীড়ন থেকে মানুষকে মুক্তি দিয়েছিলেন তিনি। পাকিস্তানিশোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৪ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায়বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দীউদ্যানে ঘোষণা করেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারেরসংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার ক্ষেত্রেতার এই আহ্বান বরণ করে নিয়েছিলো স্বাধীনতাকামী বাঙালি। ১৯৭১ সালের ২৫মার্চের কালো রাতের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ওইরাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তার ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেফতারকরে নিয়ে যায়। এরপর মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দীর্ঘ নয় মাস তাকেপাকিস্তানের কারাগারে আটকে রাখা হয়। কারাগারে থাকাবস্থায় তার মাথার ওপরঝুলেছিল মৃত্যুর খড়গ। তবুও স্বাধীনতার প্রশ্নে আপস করেননি মহান এই নেতা। একারণে পাকিস্তানের স্বৈরশাসককেও নতি স্বীকার করতে হয়েছে তার কাছে।মুক্তিযুদ্ধ শেষে বাঙালির প্রিয় এই নেতাকে তারা দেশে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়।সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শহীদ হওয়ার পরের ২১ বছর তার শাহাদত বার্ষিকী পালিত হয়রাষ্ট্রীয় অবহেলায়।

সরকারি কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ওবেসরকারি ভবনসমূহে অর্ধনমিত জাতীয় পতাকা উত্তোলন। এছাড়া বিদেশস্থ বাংলাদেশমিশনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে।

এ উপলক্ষে আজ চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সকাল সাড়ে ৯টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে শ্রীমন্ত টাউনহল পর্যন্ত ৱ্যালি। পরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ। সকাল ১০টায় শ্রীমন্ত টাউন হলে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী। সাড়ে ১০টায় আলোচনাসভা। বাদজুম্মা সকল মসজিদে বিশেষ মোনাজাত। মন্দির, গীর্জা ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সুবিধাজনক সময়ে প্রার্থনা। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ শিশু একাডেমী চুয়াডাঙ্গা শাখার কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ৯টায় বঙ্গবন্ধুর ওপর কবিতা আবৃত্তি ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। বেলা সাড়ে ১১টায় আলোচনা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।