গতবছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ফল বিপর্যয় হলেও এবার তেমনটি ঘটেনি। বরংপাসের হার ও জিপিএ-৫ উভয় ক্ষেত্রেই যথেষ্ট অগ্রগতি লক্ষ্য করা গেছে। এবারএইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার গড় পাসের হার ৭৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ, যা গত বছর ছিলো৭৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭০ হাজার ৬০২ জন। গত বছর এ সংখ্যাছিলো ৫৮ হাজার ১৯৭। অর্থাৎ এবার জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায়সাড়ে ১২ হাজার বেশি।পাসের এ উচ্চ হারের কারণ কী তা খতিয়ে দেখা দরকার।শিক্ষার মান বৃদ্ধি এর কারণ হয়ে থাকলে তা আশাব্যঞ্জক অবশ্যই। তবে এ বছরএইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার বিষয়টিও হিসাবে রাখা দরকার। ইংরেজিদ্বিতীয় পত্র ও গণিতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ পায় এ ব্যাপারে গঠিতসরকারের তদন্ত কমিটি। প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে ঢাকা বোর্ডের এইচএসসিরইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা স্থগিতও করা হয়। পরবর্তী সময়ে অনুষ্ঠিত হয়সেই পরীক্ষা। এছাড়া আরও কয়েকটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছিলো বলে অভিযোগআছে, যদিও সরকারের পক্ষ থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখেনা, পরীক্ষার ফলাফলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের একটি প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষত পাসের উচ্চ হারের এটি একটি কারণ হতে পারে।
উল্লেখ্য, প্রশ্নপত্রফাঁসের ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয় সরকারকে। ভবিষ্যতে যেন এমনঘটনা আর না ঘটে, সেজন্য সরকারকে অবশ্যই অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে। এক্ষেত্রেবিশেষজ্ঞদের অভিমত এবং তদন্ত কমিটির সুপারিশগুলো আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয়ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, এটাই কাম্য।এবারও দেশের সেরা কলেজের মর্যাদালাভ করেছে ঢাকার রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এ নিয়ে পরপরচতুর্থবারের মতো তারা এ কৃতিত্ব দেখালো। ঐতিহ্যবাহী ও নামিদামি কলেজগুলোকেপেছনে ফেলে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের ক্রমশ উঠে আসার বিষয়টি অনেকেরই দৃষ্টিকেড়েছে। তাদের এ সাফল্য অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত হতে পারে। নরসিংদীর কাদেরমোল্লা সিটি কলেজ ঢাকা বোর্ডে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে সবাইকে চমকে দিয়েছে।চেষ্টা ও উদ্যম থাকলে মফস্বলের কলেজও যে ভালো ফল করতে পারে, এটিও একটিদৃষ্টান্ত বৈকি। শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষাব্যবস্থা ও পাঠদান পদ্ধতির পরিবর্তনসহশিক্ষার্থীদের ক্লাসমুখি করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। মুখস্থবিদ্যার ওপরনির্ভর করে যে পদ্ধতি গড়ে উঠেছিলো, ইতোমধ্যে সেক্ষেত্রেও আনা হয়েছেপরিবর্তন। তবে এসব উদ্যোগের ফলে শিক্ষার মান কতোটা বাড়ছে সেটাই বিবেচনারবিষয়। এক্ষেত্রে বড় ধরনের ফাঁক রয়ে গেছে বলে সন্দেহ। শিক্ষার গুণগতমানেরওপর জোর দিতে হবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই।ফল প্রকাশের পর উত্তীর্ণদের এখনউচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে হবে। দেশে বেসরকারিউদ্যোগে বেশ কিছু উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় তীব্র আসন সংকট হয়তো দেখাদেবে না। তবে সবাই চাইবে পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে। সেক্ষেত্রেভর্তিযুদ্ধ অবধারিত। এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর সবারজন্য উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা অপরিহার্য কি-না, সে প্রশ্নও রয়েছে। আমাদেরশিক্ষার্থীদের জন্য কর্মমুখি বা বাস্তবধর্মী শিক্ষাই বেশি উপযোগী। অধিকাংশক্ষেত্রেই দেখা যায়, একজন শিক্ষার্থী যে বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন, কর্মক্ষেত্রে তা প্রায় কোনো কাজেই আসে না। অথচ কারিগরি বা কর্মমুখি শিক্ষায়শিক্ষিতদের শুধু দেশে নয়, বিদেশেও হতে পারে কর্মসংস্থানের সুযোগ। দেশে এধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরও গড়ে উঠলে ভর্তি নিয়ে দুশ্চিন্তা কমে আসবেশিক্ষার্থীদের।শিক্ষামন্ত্রী এদিকে দৃষ্টি দেবেন আশা করি। এইচএসসি ওসমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সবার প্রতি রইলো আমাদের শুভেচ্ছা। যারা পাস করতেপারেনি, হতাশাগ্রস্ত না হয়ে আগামীতে তাদের ভালো করার প্রস্তুতি নিতে হবেএখন থেকেই।