বাস ও অটো ভাঙচুরের পর ত্রিমুখি সংঘর্ষে দৌলাতদিয়াড় বাসস্ট্যান্ড রণক্ষেত্র : ওসিসহ আহত ২০

 

বাসশ্রমিক ও ইজিবাইকমালিক শ্রমিকের বিরোধ : চুয়াডাঙ্গায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় নেমে এসেছে অচলাবস্থা : পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি

 

স্টাফ রিপোর্টার: বাস শ্রমিক ও ইজিবাইক মালিক শ্রমিকদের বিরোধে চুয়াডাঙ্গায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় নেমে এসেছে অচলাবস্থা। দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন যাত্রী সাধারণ। আজ বুধবার সকাল ৬টা থেকে চুয়াডাঙ্গার সকল রুটের সকল ধরনের যাত্রীবহন করা পরিবহন চলাচল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে অটোবাইক মালিক শ্রমিক বহুমুখি সমবয় সমিতি লিমিটেড। অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা পরিবহন শ্রমিকরাও ধর্মঘটের হুমকি দিয়ে রেখেছে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা-হাটবোয়ালিয়া ভায়া ভালাইপুর সড়কে বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

বেশ কিছুদিন ধরেই পরিবহন শ্রমিকদের সাথে চুয়াডাঙ্গার অটোবাইক মালিক শ্রমিকদের বিরোধ চলে আসছে। পৌর এলাকার বাইরে ব্যাটারিচালিত তিন চাকার এ অটোবাইক চলাচলে বাধা দিয়ে আসছে পরিবহন শ্রমিকরা। পুলিশও পরিবহন শ্রমিকদের পক্ষে দায়িত্ব পালন করছে। এরপরও অটো চালকদের অনেকে নানাভাবেই পৌরসভার বাইরেও যাত্রী নিয়ে চলাচল করছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে দৌলাতদিয়াড় বাসস্ট্যান্ডে একটি অটো ভাঙচুর করা হয়। রোগী বহনের কথা বলেও রক্ষা না পেলে অটোবাইক মালিক-শ্রমিকরা সংগঠিত হয়ে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কের বঙ্গজের সামনে বেরিকেড গড়ে তোলে। চুয়াডাঙ্গা থেকে মেহেরপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া মেহেরপুর মালিক সমিতির একটি বাস ভাঙচুর করে তারা। পরিস্থিতি সংঘর্ষে রূপ নেয়। বঙ্গজের সামনে থেকে ইজি অটোবাইকের লোকজন দৌলাতদিয়াড় বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নেয়ার সময়য় সেখানে থেমে থাকা তিনটি বাস ভাঙচুর করে। বাসগুলো হলো- রাতুল নিশি পরিবহন সংস্থার চট্টমেট্রো জ ১১-০০৪৬ ও টাঙ্গাইল-ট ১১-০০৩২। আশার আলো পরিহন সংস্থার ঢাকা মেট্রো-‌১৪-০৩৭৩। বাস ভাঙচুরের সময় পরিবহন শ্রমিকরা অবস্থান নেয় বাসস্ট্যান্ডের তেলপাম্পের সামনে। সেখানে বেশ কয়েকটি বাস সড়কে আড়াআড়িভাবে রেখে বেরিকেড গড়ে তোলে। সেখানে পূর্ব থেকে অবস্থা করা পুলিশ দলকে অসহায়ের মতোই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। খবর পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান, সদর থানার অফিসার ইনচার্জ আসাদুজ্জামান মুনসী সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। সড়কে আড়াআড়ি করে রাখা বাস সরিয়ে সড়ক চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলে। বাসস্ট্যান্ডের ফায়ার স্টেশন প্রান্তে অবস্থান নেয়া অটোবাইক মালিক শ্রমিকদের ধাওয়া করে পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে পুলিশ বাসস্ট্যান্ডেই পরিবহন মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দসহ শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকে মিলিত হয়। বৈঠক চলাকালে এক শ্রমিক ছুটে এসে আরো একটি বাস ভাঙচুরের খবর দিলে উত্তেজনা তীব্রতর হয়ে ওঠে। শ্রমিকরা পুলিশের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। শুরু হয় পুলিশের সাথে বাস শ্রমিকদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। চলে কিছুক্ষণ। এ সময় সদর থানার অফিসার ইনচার্জ আসাদুজ্জামান মুনসীসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। আহতদের মধ্যে পুলিশ, পরিবহন শ্রমিকসহ ইজিবাইক মালিক-শ্রমিক রয়েছে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালেহ উদ্দীনও ঘটনাস্থলে পৌঁছান। পুলিশি লাঠিচার্জ শুরু হয়। পরিস্থিতি পুলিশ নিয়ন্ত্রণে নিলেও চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা-হাটবোয়ালিয়া ভায়া ভালাইপুর সড়কে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন পরিবহন শ্রমিকরা।

ঘটনার পর চুয়াডাঙ্গাবাস-ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের দৌলাতদিয়াড় শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হাইজানান, পুলিশ অবৈধযান ইজিবাইক চালকদের পক্ষ নিয়ে আমাদের শ্রমিকদের ওপরবেপরোয়া লাঠিচার্জ করেছে। এতে কমপক্ষে তাদের ৩০ জন শ্রমিক গুরুতর আহতহয়েছে। তিনি জানান, এ ঘটনার সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত আমরা গাড়ি চালাবো না।

চুয়াডাঙ্গারসহকারী পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান জানান, বাস শ্রমিকরা সড়কে অবস্থাননিয়ে গাড়ি ভাঙচুরসহ ব্যারিকেড দিয়ে চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছিলো। পুলিশতাতে বাধা দিলে বাস শ্রমিকরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতিনিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যার পর চুয়াডাঙ্গা জেলা ইজি অটোবাইক মালিক শ্রমিক বহুমুখি সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি অমর মণ্ডল এক বিজ্ঞপ্তিতে জানান, বাস শ্রমিক ও ইজিবাইক মলিক ও শ্রমিকদের সংঘর্ষের কারণে আজ বুধবার সকাল ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল প্রকার যাত্রীবাহী যানবহন বন্ধ থাকবে। যতোক্ষণ পর্যন্ত পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া হবে ততোক্ষণ পর্যন্ত এ হরতাল অব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বাইরে অটোবাইক চলাচলে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আসছে পরিবহন শ্রমিকরা। পুলিশের সহযোগিতায় পরিবহন শ্রমিকেরা চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর সড়কের বঙ্গজপাড়া, চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদহ সড়কের জাফরপুরে, চুয়াডাঙ্গা-জীবননগর সড়কের ফকিরপাড়া, চুয়াডাঙ্গা-আলমডাঙ্গা সড়কের হাজরাহাটি মোড়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। অপরদিকে অটোবাইক মালিক শ্রমিকেরা দাবি জানিয়ে আসছে, মেহেরপুর সড়কের ভালাইপুর মোড়, আলমডাঙ্গা সড়কের মুন্সিগঞ্জ, ঝিনাইদহ সড়কের ডিঙ্গেদহ, জীবননগর সড়কের দামুড়হুদা পর্যন্ত চলাচল করতে দিতে হবে। এ নিয়ে বিরোধের এক পর্যায়ে গতকাল দৌলাতদিয়াড়ে ঘটেছে ত্রিমুখি সংঘর্ষ। তারই জের ধরে আজ বুধবার চুয়াডাঙ্গায় পরিবহনে নেমে এসেছে অচলাবস্থা।