সামনে রমজানমাস। রমজান সামনে রেখে দ্রব্য মূল্যের দাম বাড়িয়ে দেয়ার প্রবণতা একশ্রেণির ব্যবসায়ীর মধ্যেপ্রতিবছরই দেখা যায়। এরই মধ্যে ঘোষিত হয়েছে বাজেট। এরও সুযোগ নিচ্ছেন কিছুব্যবসায়ী। সব মিলিয়ে বাজারের উত্তাপ ভালোই পাচ্ছেন ক্রেতারা। উদ্বেগের বিষয়হলো,এ পরিস্থিতিতে বাজারে যে তদারকির ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন,তারছিটেফোটাও কোথাও নেই। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে,কোনো বিক্রেতা ইচ্ছেমতোপণ্যের দাম হাঁকালেও তা দেখার কেউ নেই। এ অবস্থার ভয়াবহ দিকটি হলো,এর সুযোগনিয়ে একশ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়ে মুনাফালুটে থাকে। আমরা প্রতিবছরই এমন অভিযোগ শুনতে পাই। সরকারের পক্ষ থেকেওবাজারে সিন্ডিকেটের উপস্থিতির কথা বলা হয়। কিন্তু সরকার কখনও এসব সিন্ডিকেটচিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে পেরেছে বলে শোনা যায়নি।
দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধির পেছনে বাজেটের যে একটি ভূমিকা থাকে, তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।এটি শুধু শুল্ক-ভ্যাট বৃদ্ধির কারণে নয়, সরকারি নীতির কারণেও ঘটে। অর্থাৎবাজেটের কিছু পদক্ষেপ নিশ্চিতভাবেই মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিতে কাজ করে। ২০১৪-১৫অর্থবছরের বাজেটে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের শুল্ক ব্যারেলপ্রতি ৩২ মার্কিনডলার থেকে বাড়িয়ে ৪০ ডলারে নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। একইভাবেঅন্যান্য পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম পণ্যের শুল্ক লিটারপ্রতি ৩১ সেন্ট থেকে ৪০সেন্টে নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে জ্বালানি তেলের দাম আরও এক দফাবৃদ্ধির আশঙ্কা প্রবল। আর জ্বালানি তেলের সাথে যেহেতু বিদ্যুত ও অন্যান্যসামগ্রীর উৎপাদন এবং পণ্য পরিবহনের বিষয়টি জড়িত, সেহেতু নিশ্চিতভাবেই তামূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে। অন্যদিকে সরকারের জ্বালানিনীতি, বিশেষ করেজ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদনকে উৎসাহ প্রদানের নীতির কারণেবিদ্যুতের উৎপাদন মূল্য ক্রমেই বাড়বে। এরও প্রভাব পড়বে দ্রব্যমূল্যে। এঅবস্থায় নতুন অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার আশঙ্কা প্রবল, যদিওবাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে মাত্র ৭ শতাংশ।
দ্রব্যমূল্যের ক্ষেত্রে যেবিষয়টি প্রায়ই লক্ষ্য করা যায় তা হলো,সরকার সাধারণ মানুষের সুবিধা বিবেচনায়বাজেটে কিছু পণ্যের আমদানি শুল্ক কমালেও খুচরা বাজারে তার কোনো প্রভাব পড়েনা। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠে,বাজেটের এ সুবিধা তাহলে কার স্বার্থে- সাধারণক্রেতাদের নাকি ব্যবসায়ীদের?বস্তুত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পণ্যের শুল্কহ্রাসের সুবিধা নেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে সরকারের তদারকি না থাকার কারণেইএমনটি হচ্ছে। এ অবস্থার পরিবর্তনে বাজারে অবশ্যই সরকারের নিয়মিত তদারকিরব্যবস্থা থাকতে হবে। নয়তো ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাতে এবং বিভিন্ন কারসাজিরমাধ্যমে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে ফায়দা লুটবেন। আর দুর্ভোগ পোয়াবেন ভোক্তারা।আসন্ন রমজান উপলক্ষে সরকার বিভিন্ন পণ্যের আমদানি বাড়িয়েছে। সন্দেহ নেই,এসব পণ্য মজুদ করে দাম বাড়ানোর মওকা খুঁজছেন একশ্রেণির ব্যবসায়ী।