কার্পাসডাঙ্গার লেদব্যবসায়ী সামাদকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে খুন

 

দামুড়হুদার গোবিন্দহুদার মঙ্গল সাধুর আস্তানা থেকে ফেরার পথে বিপত্তি! দুর্গাপুরে শোকের ছায়া

 

দামুড়হুদা অফিস/প্রতিনিধি: দামুড়হুদা দুর্গাপুরের সামাদকে (৩৫) ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে খুন করেছে অজ্ঞাত পরিচয়ের সন্ত্রাসীরা। গোবিন্দহুদার ঈদগাহ সংলগ্ন ছটাঙ্গার মাঠ নামক স্থান থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকালে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয়রা বলেছে, গোবিন্দহুদার মঙ্গল সাধুর বিশ্ব শান্তি আশ্রমের গাঁজার আখড়া থেকে ফেরার সময় সন্ত্রাসীদের কবলে পড়েন তিনি। সামাদ কার্পাসডাঙ্গার লেদব্যবসায়ী ছিলেন।

গতকালই চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত শেষে নিজ গ্রামে নেয়া হয়। বিকেলে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। খুনের সাথে জড়িত তেমন কাউকে ধরতে পারেনি পুলিশ। সামাদের ভাই আব্দুল হাই বাদী হয়ে দামুড়হুদা থানায় অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তদের দায়ী করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। তাকে ছিনতাইকারীরা খুন করে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। খুনের নেপথ্য উদঘাটনে পুলিশ জোরতদন্ত শুরু করেছে। অচিরেই খুনের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি সিকদার মশিউর রহমান। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে পুলিশ ইতোমধ্যেই নিশ্চিত হয়েছে-গতসোমবার রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে খুনের ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার কুড়ুলগাছি ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের ওলিউর রহমানের ছেলে আব্দুস সামাদ কার্পাসডাঙ্গায় ওয়ার্কসপ দিয়ে ব্যবসা করে আসছিলেন। তিনি গত সোমবার সন্ধ্যার পর দামুড়হুদার গোবিন্দহুদা গ্রাম সংলগ্ন মঙ্গল সাধু নামে এক ব্যক্তির বাগানে গাঁজার আখড়ায় উপস্থিত হন তিনি। রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে বাইসাইকেলযোগে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। পথিমধ্যে দুর্বৃত্তদের কবলে পড়ে নৃশংসতার শিকার হয়েছেন আব্দুস সালাম।

স্থানীয়রা বলেছেন, আনুমানিক ৩০ বছর ধরে প্রায় ৫ বিঘা জমির ওপর বিভিন্ন ভেষজ ও ওষুধি গাছপালা লাগিয়ে বিশ্ব শান্তি আশ্রম নামে একটি আস্তানা মঙ্গল সাধু গড়ে তুললেও ওখানে রাতে বসে গাঁজার আসর। স্থানীয়রা এ তথ্য দিয়ে বলেছেন, মঙ্গলসাধুর বাগানে অসংখ্য ওষুধি গাছ আছে। কবিরাজী চিকিৎসাও দেয়া হয় সেখান থেকে। কবিরাজী চিকিৎসার পাশাপাশি ওই বিশ্ব শান্তি আশ্রমে দীর্ঘদিন ধরে গাঁজার আসর বসলেও স্থানীয়রা সেদিকে তেমন তাকায়নি। গত সোমবার সন্ধ্যার পর ওই আশ্রমেই গাঁজার আসর বসে। সেখানে বসে সামাদ গাঁজা সেবন করে। গাঁজা সেবন শেষে রাত আনুমানিক ৯টার দিকে বাইসাইকেলযোগে বাড়ি ফিরছিলো সামাদ। পথিমধ্যে গোবিন্দহুদার ঈদগাহ সংলগ্ন ছটাঙ্গার মাঠ নামক স্থানে পৌঁছুলে দুর্বৃত্তরা তার বাইসাইকেলের গতিরোধ করে এবং তাকে পার্শ্ববর্তী ঈদগাহের পেছনে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে খুন করে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে এলাকার কৃষকরা মাঠে যাওয়ার সময় ঈদগাহের পেছনে লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়।দামুড়হুদা থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে নেয়।বিকেলে লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বাদ আছর নিজ গ্রামের কবরস্থানে লাশের দাফন সম্পন্ন করা হয়। দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি সিকদার মশিউর রহমান জানান, হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ জানা যায়নি। তবে ছিনতাইকারীরা তাকে খুন করে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। খুনের নেপথ্য উদঘাটনে পুলিশ জোরতদন্ত শুরু করেছে। অচিরেই এ খুনের প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হবে বলেও তিনি জানান। এদিকে দামুড়হুদায় একের পর এক গাঁজা সেবনকারীকে কুপিয়ে হত্যাসহ রক্তাক্ত জখম করার ঘটনায় এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে এক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। কে বা কারা ঘটাচ্ছে এ ধরনের ঘটনা- এ প্রশ্ন এখন সকলের মুখে মুখে।

নিহতের পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে কুড়ুলগাছি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গত সোমবার রাতে সামাদ বাড়ি না ফিরলে তার স্ত্রী জলি ওরফে ডলি খাতুন সম্ভাব্য স্থানে খোঁজখবর নেন। সকালে খবর পেয়ে লাশ দেখে শনাক্ত করেন পরিবারের সদস্যরা। সামাদের তেমন কারো সাথে বিরোধ ছিলো না বলে জানালেও কিছুদিন আগে তার নিকট চাঁদা দাবি করা হয়েছিলো বলে গুঞ্জন রয়েছে। এ ছাড়া মঙ্গল সাধুর আস্তানার নতুন কমিটি নিয়ে তার ভক্তদের মাঝে বিরোধের সূত্রপাত ঘটে। সেই বিরোধের জের ধরে খুনের ঘটনা ঘটলো কি-না তা নিয়েও অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে।

‌                নিহত সামাদের পরিচয়: দামুড়হুদা উপজেলার কুড়ুলগাছি ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামের ওলিউর রহমানের ছেলে কার্পাসডাঙ্গা বাজারের লেদব্যবসায়ী নিহত সামাদ ৩ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে মেজ। তার সংসারে রয়েছে ২ কন্যাসন্তান। বড় মেয়ে সুমাইয়ার বয়স ১২ এবং ছোট মেয়ে সুরাইয়ার বয়স ১০ বছর । স্ত্রী ডলি খাতুন গৃহিনী।