মেহেরপুর গাংনীর বাঁশবাড়িয়ায় দিনে দুপুরে ঘরের মধ্যে নৃশংসতা: স্ত্রীকে জবাই করে খুন করেছে পাষণ্ড স্বামী

মাজেদুল হক মানিক: সেলিনা খাতুন (৩২) নামের এক গৃহবধূকে জবাই করে খুন করেছে পাষণ্ড স্বামী মাসুদ রানা ওরফে ইঞ্জিল। গতকাল শনিবার দুপুরে নিজ ঘরে তাকে খুন করা হয়। নারকীয় এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে মেহেরপুর গাংনী উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের ঝিনেরপুলপাড়ায়। ঘটনার পর থেকেই আত্মগোপন রয়েছে অভিযুক্ত ইঞ্জিল। এলাকায় বইছে প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড়।

Gangni Murder pic_03.05.14_(2)

স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, বাঁশবাড়িয়া ঝিনেরপুলপাড়া থেকে সাহারবাটি গ্রামের রাস্তার পাশে ইঞ্জিলের মায়ের বাড়ি। ফাঁকা জায়গার ওই বাড়িটিতে গতকাল শনিবার ইঞ্জিল ও তার স্ত্রী সেলিনা খাতুন এবং সাথে ছিলো তিন বছর বয়সী শিশুকন্যা হোসনেয়ারা। এসময় বৃষ্টির সাথে দমকা হাওয়া শুরু হয়। পাশের রাস্তায় মানুষশুন্য হয়ে পড়ে। এ সুযোগে শিশু কন্যার সামনেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে স্ত্রীকে খুন করে ইঞ্জিল। স্ত্রীর মৃত্যু নিশ্চিত জেনেই হোসনেয়ারাকে সাথে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় সে। মেজ মেয়ে মেঘনা খাতুন (৯) ঘরে প্রবেশ করে দেখে মায়ের রক্তমাখা শরীর। তার চিৎকারে আশেপাশের লোকজন জড়ো হয়।

স্থানীয়সূত্রে আরো জানা গেছে, প্রথম স্ত্রী তালাকের পর দ্বিতীয় স্ত্রী সেলিনা খাতুন ও তার তিন মেয়েকে নিয়ে কলোনীপাড়া বসবাস করতেন রাজমিস্ত্রি মাসুদ রানা ওরফে ইঞ্জিল। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহের জের ধরে সেলিনার শারীরিক নির্যাতন করতো। বিভিন্ন অজুহাতে পিতার বাড়ি থেকে টাকা আনার চাপও ছিলো। পেশাগত কাজ শেষে ইঞ্জিল কয়েকদিন আগে চট্রগাম থেকে বাড়ি ফেরে। তার মা ফুলঝুরি খাতুন একা বসবাস করতেন বাঁশবাড়িয়া ঝিনেরপুলপাড়ায়। মা আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ায় সুবাদে ওই বাড়ি দেখাশুনা করছিলো ইঞ্জিল। স্ত্রী সেলিনা খাতুন প্রতিদিনই নিজ বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে শাশুড়ির বাড়িতে গিয়ে স্বামীকে দিয়ে আসতেন। ওই বাড়ির প্রাত্যহিক কাজকর্মও করতেন তিনি। গতকাল দুপুরে ইঞ্জিলের জন্য খাবার তৈরি করে নিয়ে আসেন সেলিনা। বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া শুরু হলে যাওয়ায় বাড়ির পাশের রাস্তায় মানুষ চলাচল ছিলো না। এ সুযোগে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে খুন করে পালিয়ে যায় ইঞ্জিল। এমনটিই জানালেন কয়েকজন প্রতিবেশী।

নিহত সেলিনার মেয়ে মেঘনা জানায়, তাদের দু বোনকে নিয়ে মা সেলিনা খাতুন দাদির বাড়িতে তার পিতার জন্য খাবার নিয়ে আসেন। মেঘনা দাদির বাড়ির বাইরে খেলা করতে যায়। আর তিন বছর বয়সী কন্যা হোসনেয়ারা পিতামাতার সাথেই ঘরের মধ্যে ছিলো। বৃষ্টি থামলে সে ওই বাড়ি ফিরে মাকে ডাকতে থাকে। কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে। মায়ের রক্তমাখা নিথর দেহ দেখে চিৎকার দিতে দিতে বাইরে বেরিয়ে আসে। এসময় তার পিতা বাড়ির অদূরে প্রধান সড়কের কাছাকাছি হেঁটে যাচ্ছিলো। প্রতিবেশী এক মহিলা ও মেঘনা পেছন থেকে ইঞ্জিলকে ডেকে ফিরে আসতে বলেন। কিন্তু দ্রুত সটকে পড়ে ইঞ্জিল। ছোট কন্যা শিশুটি ঘাতক ইঞ্জিলের সাথে রয়েছে নাকি তার ভাগ্যে অন্য কিছু জুটেছে তা নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে সংশয় দেখা দিয়েছে।

এদিকে খবর পেয়ে মেহেরপুর সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) আব্দুল জলিল, গাংনী থানার ওসি রিয়াজুল ইসলাম, এসআই আব্দুল জলিলসহ পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছান। ইঞ্জিলকে ধরতে পুলিশের অভিযানও শুরু হয়। কিন্তু তার কোনো সন্ধান মেলেনি। পরে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালমর্গে প্রেরণ করে গাংনী থানা পুলিশ। গতকাল বিকেলেই নিহতের মা সাহারবাটি গ্রামের কোহিনুর বেগম বাদী হয়ে ইঞ্জিলকে আসামি করে গাংনী থানায় একটি হত্যামামলা দায়ের করেছেন। গতকালই সাহারবাটি গ্রামে সেলিনার দাফন সম্পন্ন হয়। প্রকাশ্য দিবালোকে নারকীয় এ হত্যাকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকার হাজারো উৎসুক নারী-পুরুষ জড়ো হন। ধিক্কার জানিয়ে ইঞ্জিলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তারা।

পারিবারিক পরিচয়:বাঁশবাড়িয়া কলোনীপাড়ার মৃত আলা উদ্দীন বক্সের ছেলে মাসুদ রানা ওরফে ইঞ্জিল। ১০/১২ বছর আগে প্রথম স্ত্রী তালাকের পর সেলিনার সাথে দ্বিতীয় বিয়ে হয় তার। দাম্পত্য জীবনের তাদের তিনটি মেয়ে। অনেকটাই হিংস্র প্রকৃতির এ ইঞ্জিল গ্রাম কিংবা প্রতিবেশীদের সাথে প্রায়ই দ্বন্দ বিরোধ সৃষ্টি করতো। তাই এলাকার মানুষ তাকে দেখে ভয়ও পেতো। প্রথম স্ত্রীর এক মেয়ে রয়েছে। সেলিনার বড় মেয়ে বিবাহিতা। অপর দুজন শিশু। পরিবারের এ চরম মুর্হূতে তিন সন্তান এখন অসহায় হয়ে পড়েছে।