ফুল ছেঁড়ায় শিশু হত্যা! এ অমানবিক পরিস্থিতির অবসান জরুরি

শুধু ফুল ছেঁড়ার অপরাধে যদি নির্মমভাবে একটি শিশুকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়, আর পরিণতিতে বরণ করতে হয় মৃত্যু, তবে স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি যে একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির ইঙ্গিত করে তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে যেখানে একে-অন্যকে সহযোগিতা ও ভ্রাতৃত্বের সাথে মিলেমিশে বসবাসের সংস্কৃতি বিদ্যমান থাকার কথা, সে দেশে যখন একের পর এক নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো ঘটছে, তখন তার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বিশেষে নয় বরং খোদ রাষ্ট্রের পর্যাপ্ত বিচার-বিশ্লেষণ ও সেই মোতাবেক পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন বলেই আমরা মনে করতে চাই।

সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ফুল ছেঁড়ার অপরাধে শিশুটির মৃত্যুর কথা। যে ছিলো দ্বিতীয় শ্রেণির একজন ছাত্র। শান্ত নামের এ শিশুটির বাবা-মা জানান, ১ এপ্রিল স্কুলের আঙিনায় থাকা জবাফুল ছিঁড়লে আলম গাজী নামে এক যুবক শান্তকে মারধর করে এবং একপর্যায়ে তাকে আছড়ে দেয়ালে ছুড়ে মারে! এতে প্রথমত, ডান পা ভেঙে যায় এবং গুরুতর আহত হলে শিশুটিকে হাসপাতাল এরপর স্থানীয় কবিরাজ, পরে আবারো হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু তাতেও তার শেষ রক্ষা হয়নি। গত শনিবার সকালে শিশুটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।

আমরা স্পষ্ট বলতে চাই- এরকম ঘটনা একটি নয়, অসংখ্য অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটছে প্রতিনিয়ত। একটি ছোট্ট শিশু ফুল ছিঁড়বে এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু তার পরিণতি যে এভাবে মৃত্যু দিয়ে শেষ হবে তা অকল্পনীয়। ভাবতে অবাক লাগে, বর্তমান সময়ে যা কল্পনাও করা যায় না এরকম ঘটনা অহরহই ঘটছে। শিশুকে অপহরণ করা হচ্ছে, বড়দের শত্রুতার বলি হতে হচ্ছে শিশুকে। ছাত্রকে স্কুল-শিক্ষক খুন্তির ছেঁকা দিচ্ছেন, কাজের মেয়েকে নির্যাতন চালিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া হচ্ছে, এবারে আবার ফুল ছেঁড়ার অপরাধে শিশুকে হত্যা করা হলো। তাহলে আর কী বাকি থাকে! এ ঘটনাগুলো কি মানুষের সমাজে ঘটার কথা? কিন্তু ঘটছে অবলীলায়। আমরা মনে করি, এরকম প্রতিটি ঘটনার যে ভয়াবহতা তা আদিম বর্বরতাকেও হার মানায়।

সার্বিক প্রেক্ষাপটে আমরা বলতে চাই- দেশে ক্রমাগত নানারকমের অপকর্ম, হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা যায়নি। ফলে এ ধরনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ঘটনায় এটাও স্পষ্ট যে দিন দিন মানুষের নৈতিক অধঃপতন ঘটছে, যা থেকে উত্তরণ করতে না পারলে এর খেসারত দিতে হবে পুরো জাতিকেই। মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক যে আক্রমণাত্মক নয় বরং তা সহযোগিতার, এ মনোভাব প্রতিষ্ঠিত করা এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি। এর সাথে সাথে আমরা মনে করি, যেভাবে প্রতিনিয়ত অস্বাভাবিক মৃত্যু বেড়েই চলেছে, তাতে স্বাভাবিকভাবেই এসব খুনের দায় সরকারের এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। শিশু খুন হবে, একজন বাসায় থাকবে আর সন্ত্রাসীরা তাকে খুন করে নির্বিঘ্নে চলে যাবে, একজনকে রাস্তায় প্রকাশ্যে ফিল্মি কায়দায় খুন করা হবে, এগুলো কোনোভাবেই একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের চিত্র হতে পারে না।

আমরা সরকারের উদ্দেশে বলতে চাই- শুধু এ শিশুটির মৃত্যু নয়, পাশাপাশি যেভাবে সারাদেশে প্রতিনিয়ত প্রতিহিংসার বলি হচ্ছে শিশুরা এবং বিনা অপরাধে খুন হচ্ছে তার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নিন। দেশের যেকোনো হত্যাকাণ্ডের সঠিক তদন্ত নিশ্চিত এবং তার যথাযথ শাস্তি প্রদানে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। তাহলে দেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা কমে আসবে বলেই আমরা মনে করি। আমাদের প্রত্যাশা- মানুষের মধ্যে মানবিক আচরণ প্রতিষ্ঠিত হোক। কেননা সচেতনতা বৃদ্ধি, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং সহযোগিতার মনোভাবই পারে দেশকে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের উপযোগী করে তুলতে।