আলমডাঙ্গায় বিএনপির ঘরের শত্রু এখন বিভীষণ

 

রহমান মুকুল: আলমডাঙ্গায় উপজেলা নির্বাচনের প্রচারণা এখন তুঙ্গে। আগামী ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে এ নির্বাচন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির প্রতিপক্ষ স্বয়ং বিএনপি। আওয়ামী লীগ কিংবা জামায়াত প্রার্থীর ভোটের দুর্গে আঘাত হানা তো দূরের কথা, বিএনপিতে এখানে ঘরের শত্রু বিভীষণ অবস্থায় রূপ নিয়েছে। শহিদুল কাউনাইন টিলু ও সানোয়ার হোসেন লাড্ডু দুজনই বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দাবি করেছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে কার পক্ষে ভোট চাইবেন কর্মী-সমর্থকরা। এ কারণে ভোট প্রার্থনা করতে সাহস পাচ্ছেন না বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা। কে প্রকৃতপক্ষে দলীয় প্রার্থী? নিজ দলীয় ভোটারের নিকট সে প্রমাণ দাখিলের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় তাদের কাহিলাবস্থা। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় ভোটযুদ্ধের মাঠের পরিবেশের নিরপেক্ষতা, প্রশাসন ও সিইসির নিরপেক্ষ আচরণের নিশ্চয়তা বিএনপির কতোটা অনুকূলে থাকবে, সে সম্পর্কে নিশ্চয় স্বস্তিদায়ক উপলব্ধি কারোরই থাকার কথা নয়। উপরন্তু প্রতি পদক্ষেপ স্থলেই পগার কাটতে সব্যস্ত দলীয় প্রতিপক্ষ। দলের এক প্রার্থীর কর্মীর অন্য পক্ষের প্রার্থীকে প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে ইগনোর করতে উৎসাহের কমতি নেই। গুজব আর কাদা ছোড়াছুড়িতে দু পক্ষের এমন অবস্থা যে ‘কেউ কারো নাহি ছাড়ে সমানে সমান।’ অবধারিতভাবে সামনের দিনগুলোতে এ অশ্লীলতা আরও তীব্র হবে। এতে ‘কার নষ্ট কে করে? যার নষ্ট সেই করে’ পুরনো এ প্রবাদের সত্যতা আরও প্রকট হবে। সেক্ষেত্রে বিএনপির নিজের পায়ে কুড়াল খাওয়ার নষ্ট ইমেজের সুযোগ নিশ্চয় হাতছাড়া করবে না সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা আওয়ামী লীগ কিংবা জামায়াত। বেদনাদায়ক এ বিষয়টি বিএনপির দু প্রতিপক্ষ প্রার্থী ও তাদের সমর্থকেরা উপলব্ধি করতে পারুক আর না পারুক, তৃণমূলের অনেক নিরীহ কর্মী-সমর্থক ঠিকই উপলব্ধি করতে পেরেছেন। ইতোমধ্যেই তারা প্রতিক্রিয়াও দেখাতে শুরু করেছেন। কয়েকদিন আগে তো নওলামারী গ্রামে টিলু কিংবা লাড্ডু কোনো গ্রুপকেই ঢুকতে দেয়া হয়নি। বিবাদমান দু গ্রুপ এক হয়ে না এলে সে গ্রামে ঢুকতে দেয়া হবে না বলে সাফ সাফ জানিয়ে দেয়। একই অবস্থার সৃষ্টি হয় জাহাপুর গ্রামে। গণসংযোগকালে অবধারিতভাবে প্রত্যেক পক্ষকে তৃণমূল থেকে একই অভিযোগ শুনতে হচ্ছে।

স্থানীয় বিএনপির দু গ্রুপ থেকেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কারণে বিএনপি সমর্থকদের এখন ‘না ঘরকা না ঘাটকা অবস্থা।’ নিজের আঙুলে চোখে আঁচড় খাওয়ার মতো এমন দুর্মূর্খতার কারণে যদি কোনো পক্ষের প্রার্থীই জিততে না পারেন, তাহলে এ তুঘলকিতে কার চূড়ান্ত হার হবে-বিএনপিরই তো? দায়ী হবেন কারা? এ প্রশ্ন এখন বিএনপির সকল নেতা-কর্মীকেই ভাবতে হবে। বিএনপির সাধারণ নেতা-কর্মীকে অবশ্যই ভাবতে হবে তাদের মতোই দু প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের হৃদয় দলীয় স্বার্থের বেদনায় মোচড় দিয়ে ওঠে কি-না। নাকি তাদের নিজের ও গোষ্ঠীর ব্যক্তিগত স্বার্থ ও শত্রুতার কারণে তারা জলাঞ্জলি দিতে চলেছে বৃহত্তর দলীয় স্বার্থ।

বড় দলে নেতৃত্বের কোন্দল থাকতেই পারে। ব্যক্তিগত বৈরিতাও অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু সব কিছুর ওপরে দলীয় স্বার্থ। বৃহত্তর দলীয় স্বার্থে অন্তত সকল বৈরিতা ভুলে যাওয়া উচিত। তাছাড়া বিএনপি এখন চরমতম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এমন ঘোরতর বিপদের দিনেও যদি কোনো নেতা নৈর্ব্যক্তিকতার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সে স্বার্থান্ধ নেতার দায়ভার কেন সাধারণ নেতা-কর্মীরা নিতে যাবেন? দলের চূড়ান্ত ক্ষতিসাধন করে কেন তার পাশে থাকবে?  ‘ঢাকিসহ বিসর্জনের’ মতো যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতির আগেই তৃণমূলের নিস্বার্থ নেতাকর্মীকে নির্মোহভাবে বিষয়টি ভেবে দেখতে হবে। ভেবে দেখতে হবে নেতা বড় না দল বড়? কার স্বার্থ দেখা উচিত? অন্ধ নেতা প্রীতি দলকে আর কতো ক্ষতি করবে? সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত হয়ে বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করতে হবে। স্বার্থান্ধ দু পক্ষকে সমঝোতায় বসতে বাধ্য করতে হবে। উর্ধ্বতন নেতৃত্বের অনীহা থাকলেও তা সম্ভব তৃণমূলের পক্ষে। বিলম্ব না করে দূরদর্শী বিএনপির নেতা-কর্মী, সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীকে এখনই উদ্যোগ নেয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে তাদের নীরবতা দলকে আর বিপর্যস্ত করে তুলবে। কাজেই বিএনপির দু পক্ষকে এক করার দাবি উচ্চকিত করার কালের দায় তৃণমূলের নিস্বার্থ সমর্থকদের নিজের কাঁধে তুলে নিতে হবে।