চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অভিযান : সহযোগিতায় পুলিশ
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: শেষ পর্যন্ত নদীদখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছেন আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার। উপজেলার মাজু-ছত্রপাড়া-অভয়নগর গ্রামের পাশ ঘেষে বয়ে যাওয়া কুমার নদ অবৈধভাবে দখল করে পুকুর কাঁটার অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে পুলিশ গতকাল মঙ্গলবার ১ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছেন। পার্শ্ববর্তী ইবি থানার গাংদী গ্রামের নদীখেকো খ্যাতো রায়হান আলী ডাক্তার তার আত্মীয় আলমডাঙ্গার ডামোশ গ্রামের মাছব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিনের অর্থায়নে নদের জমি দখল করে পুকুর খননের কাজ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অবৈধভাবে নদ দখল করে পুকুর খননের ঘটনায় অভয়নগর-ছত্রপাড়া-মাজু গ্রামজুড়ে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। অবশ্য গতকাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অভিযানে অনেকেই সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন, অব্যাহত দাপটের মাঝে এ যেনো কৃঞ্চিত ছেদ।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার ছত্রপাড়া-মাজু-অভয়নগর গ্রাম বরাবর কুমার নদ দখল করে কুষ্টিয়া জেলার গাংদী গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তার রাহেন উদ্দীনের সহযোগিতায় আলমডাঙ্গার ডামোশ গ্রামের মাছব্যবসায়ী হাজি নাজিম উদ্দীন পুকুর কাঁটছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১ কিলোমিটার নদ দখল করে তিনি ড্রেজার দিয়ে মাটি কেঁটে পুকুর তৈরি করে নিয়েছেন। নদের স্বাভাবিক গতিপথ রুদ্ধ করে এ মাছচাষের প্রকল্প হাজি সাহেব বাস্তবায়িত করতে চলেছেন।
আলমডাঙ্গা উপজেলার ডাউকি ইউপি চেয়ারম্যানের অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশসহ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আশরাফুল আলম ঘটনাস্থলে যান। উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুলিশসহ ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন এমন সংবাদ পেয়ে নদীখোররা আগেই পালিয়ে যায়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার লোক মারফত বারবার সংবাদ দেয়ার পরও তারা দেখা করেননি। পরে নদী দখল করে পুকুর কাঁটার সাথে জড়িত একজনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির নাম শরিফুল ইসলাম। তিনি কুষ্টিয়া জেলার গাংদী গ্রামের লুতফর রহমানের ছেলে। এ সময় শরিফুল ইসলাম জানায়, তার চাচা রাহেন উদ্দীন, আলমডাঙ্গার ডামোশ গ্রামের হাজি নাজিম উদ্দীন ও তার ছেলে হিমেল এ নদ দখল করে পুকুর কাঁটার প্রধান হোতা। পরে ওই ৩ জনের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক জলাধারা সংরক্ষণ আইন ২০০০’র ৮(১) ধারায় মামলা দায়ের করেছেন ডাউকি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা বজলুর রহমান।
আলমডাঙ্গার আনন্দধাম এলাকা থেকে পূর্বদিকে বাক নিয়ে কুমার নদ অভয়নগর-ছত্রপাড়া-মাজু গ্রামের পাশ ঘেষে বয়ে গেছে। ৬০’র দশকে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প চালু হলে এটি স্রোতের প্রচণ্ডতা হারিয়ে নির্জীব হয়ে পড়ে। বর্তমানে ক্ষীণধারায় বয়ে চলা ওই নদে দু কূলবাসী উন্মুক্তভাবে মাছ ধরে খায়, পাট জাগ দেয়, ধানের পাতো দেয়াসহ নানাভাবে ব্যবহার করছে। ছত্রপাড়া-অভয়নগর-মাজু গ্রাম বরাবর নদের অপর পাড়ে কুষ্টিয়া জেলার ইবি থানার গাংদী গ্রাম অবস্থিত। সম্প্রতি গাংদী গ্রামের জোয়াদ আলীর ছেলে হাতুড়ে ডাক্তার রায়হান আলী অবৈধভাবে নদ দখল করে ড্রেজার দিয়ে পুকুর কাঁটছেন।
অভয়নগর-ছত্রপাড়া গ্রামবাসী অভিযোগ করে বলেছে, তারা নিষেধ করলেও রায়হান আমলে নেননি। উল্টো করে দম্ভোক্তি করে বলেছেন, পারলে কাজ বন্ধ করে দাও। মামলা করেও লাভ হবে না, আমার টাকা আছে, আইন আদালত অফিসার পুলিশ সব পকেটে। ছকির উদ্দিন, আরমান ও চাঁদালি বলেন, নদীখেকো রায়হান আলীর আত্মীয় আলমডাঙ্গার ডামোশ গ্রামের প্রভাবশালী মাছব্যবসায়ী হাজি নাজিম উদ্দিনের অর্থায়নে প্রায় ৩ মাস ধরে চলছে ওই অবৈধ পুকুর কাটার কাজ। মোট ১শ বিঘা নদের জমি দখল করে ড্রেজার দিয়ে মাটি কাঁটা হচ্ছে। অভয়নগর গ্রামের বয়স্ক ব্যক্তি মুরাদ আলী বলেন, পূর্বে নদী তাদের গ্রাম থেকে আরো দূরে গাংদী গ্রামের দিকে ছিলো। নদী এখন ভাঙতে ভাঙতে অভয়নগরের ভেতর ঢুকে পড়েছে। আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমার ৯ শতক জমির সবটুকু এখন নদীর পেটে। ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। অবৈধ নদী দখল সম্পর্কে কুষ্টিয়া জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু হেনা মুস্তবা কামাল বলেন, নদ-নদী, খাল-বিল দখলকারীরা সভ্যতার শত্রুর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আলমডাঙ্গা উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী অফিসার আবুল আমিনকেও বিষয়টি গ্রামবাসী জানিয়েছিলেন বলে জানান। তিনি বলেন, নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মোটেও শিথিলতা দেখানো যাবে না। আশকারা পেলে এদের সর্বগ্রাসী লোভ মানুষের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলবে। তিনি বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসকের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ অবৈধ নদী দখলকে কেন্দ্র করে অভয়নগর-ছত্রপাড়া-মাজু গ্রামবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা।