বিশ্বকাপেই আমাদের মুছে ফেলতে হবে সব লজ্জা ব্যর্থতা

গতবারের চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানকে সহজে হারিয়ে শ্রীলঙ্কা এশিয়া কাপ জিতে নিয়েছে। শ্রীলঙ্কার টিম স্পিরিট দেখে আগেই মনে হয়েছিলো এবার শ্রীলঙ্কা এশিয়া কাপ ঘরে নিতে যাচ্ছে। তবে ফাইনাল খেলাটি এতো একপেশে হবে তেমনটা কেউ হয়তো ভাবতে পারেননি। ফাইনাল খেলায় যে দলই জিতুক আর হারুক, ঘরের মাটিতে বাংলাদেশের অর্থাৎ আমাদের অর্জন কী সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। যে দলটি গতবার ফাইনাল খেললো এবং শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে গেলো সেই দলটি এবার একটি খেলায়ও জয় পেলো না। এমনকি যুদ্ধবিদ্ধস্ত এবং ক্রিকেটে একেবারে নবীন শিশু সদস্যখ্যাত আফগানিস্তানের বিপক্ষেও তারা জিততে পারলো না! এটা দল হিসেবে বাংলাদেশের জন্য যতোটা না হতাশার তার চেয়ে বেশি বেদনার ক্রিকেটপ্রেমী কোটি কোটি বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীর।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্রিকেটকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিতে গিয়ে আমাদের ক্রীড়াঙ্গন থেকে অনেক জনপ্রিয় খেলাই নির্বাসনে যেতে বসেছে। উপমহাদেশীয় মানের অতি জনপ্রিয় ফুটবল খেলা এখন হয়ে পড়েছে কোণঠাসা এবং রাজধানী ঢাকার মাঠে নির্দিষ্ট কয়েকটি কাবের মধ্যে সীমাবদ্ধ। অথচ বহুকাল ধরে এ খেলাটি এ দেশের গ্রামগঞ্জ-বন্দরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলো। শুধু ক্রীড়াশৈলী নয়, বিনোদন এবং শরীর চর্চার পাশাপাশি সুস্থ মনন গঠনে ফুটবল খেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতো। যা সুস্থ জাতি গঠনে অতি আবশ্যক। কিন্তু সেটা না হওয়ায় আমাদের সমাজে নানা অবাঞ্ছিত উপদ্রপ ক্রমশ বিস্তার লাভ করছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, আমাদের ক্রীড়াঙ্গন থেকে অন্যান্য খেলার সাথে ফুটবলকেও নির্বাসনে পাঠাতে যেন একটি সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্র চলছে।

উল্লেখ্য, ফুটবলে যেখানে স্বার্বজনীনতা রয়েছে সেখানে ক্রিকেট আভিজাত্য ও অতিরিক্ত খরচের দাবিদার। সেই বিচারেও আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে ফুটবলকেই বেশি প্রাধান্য দেয়া ছিলো বাঞ্ছনীয়। এ বক্তব্যের ভেতর দিয়ে আমরা ক্রিকেটকে খাটো করতে চাইছি না। আবার এ কথাও বলছি না যে, একটি আসরে আমাদের ছেলেরা ভালো করতে পারেনি বলে ভবিষ্যতেও ভালো কিছু করতে পারবে না। বরং গত কয়েক বছর ধরে ক্রিকেটে আমাদের অর্জন প্রত্যাশার চেয়ে কম হলেও হতাশার নয়। তবে ক্রিকেটের মাধ্যমে রাতারাতি বিত্তবৈভবের মালিক হওয়ার যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তা এ খেলাটিকে অতিগুরুত্ব দেয়ার পেছনে ক্রিয়াশীল কি-না তাও খতিয়ে দেখা দরকার। আমরা ক্রিকেটসহ সমস্ত খেলার জন্য রাষ্ট্র ও সমাজের যুক্তিযুক্ত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থান দেখতে চাই। তবে এ মুহূর্তে আমাদের প্রধান চাওয়া হচ্ছে, সবকিছু পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়া। আর মাত্র ৫ দিন পর বাংলাদেশেই শুরু হচ্ছে টি-২০ বিশ্বকাপ। এ বিশ্বকাপেই আমাদের মুছে ফেলতে হবে সব লজ্জা ব্যর্থতা। আমরা আশা করি মুশফিকরা দেশ ও দেশের জনগণের সম্মান এবং আবেগের কথা মাথায় রেখেই মাঠে লড়বে। আমরা তাদের সাফল্য কামনা করি।