অবশ্যই সমাজের অধিকাংশ মানুষ শান্তিপ্রিয় এবং তারা নিয়ম মেনেই স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চায়। সরকারি সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রেও নিয়ম মানতে তারা আগ্রহী। হাতেগোনা কিছু ব্যক্তি বাড়তি সুবিধা আদায় করতে গিয়েই নিয়ম ভাঙে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। নিয়ম ভেঙেও প্রতিরোধের মুখে না পড়লে অনিয়মটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল তারই অন্যতম উদাহরণ বললে ভুল বলা হবে না। শুধু যে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল তা অবশ্য নয়, মেহেরপুর ঝিনাইদহসহ দেশের অধিকাংশ সরকারি স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রগুলোরই অভিন্ন দশা।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের দীর্ঘদিনে গড়ে ওঠা হরেক রকমের অনিয়ম দূর করে নিয়ম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছাত্রসমাজ আন্দোলন শুরু করেছে। স্মারকলিপি পেশ করেছে। পেশকৃত দাবি-দাওয়াগুলো মূলত জনস্বার্থেই উপস্থাপন। এ নিয়ে বিতর্ক থাকার কথা নয়। তা হলে যুক্তিসঙ্গত দাবিসমূহ জনস্বার্থে পূরণ হবে না কেন? নানামুখি জবাব আছে, আছে হরেক অজুহাতও। দেশপ্রেম মানে নিশ্চয় দেশের মাটি আখড়ে পড়ে থাকা নয়, যে যেখানে আছে, সে সেখানে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করার মধ্যদিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে পারে। তা করে না কেন? বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষার চেয়ে ব্যক্তিস্বার্থে কেউ কেউ অন্ধ হয়ে পড়লে অনিয়ম বাসা বাধে। অনিয়ম দূর করতে ঊর্ধ্বতন কর্তাদের বাস্তবমুখি পদক্ষেপের বদলে যখন দায় এড়াতে উল্টো অজুহাত খাড়া করতে দেখা যায়, তখন নিয়ম অসহায় হয়ে পড়ে। অবশ্যই কোথাও একদিনে অনিয়ম ব্যাপকতা পায় না, পায়নি। অনিয়ম যখন রন্ধ্রে রন্ধ্রে তখন তা দূর করতে বেগ পেতে হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অসহায়ত্বই ফুটে ওঠে। এরপরও নিয়মের প্রতি যেহেতু অধিকাংশ মানুষ শ্রদ্ধাশীল সেহেতু নিয়ম প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক হলে তা অসম্ভব নয়।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের মধ্যে পরিবেশন করা খাবারের মান বৃদ্ধি করতে হবে। এটা নিশ্চিত করতে হলে ঠিকাদার নিযুক্তির সময় স্বজনপ্রীতি, টেন্ডারবাজি পরিহার যেমন অপরিহার্য, তেমনই খাবারের বাস্তবমুখি মূল্য নির্ধারণও প্রয়োজন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে মিডিকেল অফিসারের পদ নেই। বিলুপ্তির পর এমন কোনো দায়িত্বশীলকে এ বিষয়ে তেমন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। যে পদক্ষেপে জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার পদটি সৃষ্টি হয়। আর জরুরি বিভাগে যেহেতু শুধু পুরুষরোগীকে নেয়া হয় না, নারীরোগীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে কম নয়, সেহেতু জরুরি বিভাগে পুরুষ সহকারীর পাশাপাশি নারী সহকারী নিয়োগের দাবিকে অযৌক্তিক বলা যায় না। যদিও দেশের কোনো জেলার সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নারী স্বাস্থ্য সহকারী নেই। নেই বলেই তো নিয়োগের দাবি উত্থাপন। হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীর ভিড় কম হয় না। রোগীর লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে চিকিৎসা নিতেও রোগী সাধারণের আপত্তি নেই, আপত্তি তখনই যখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে, অথচ ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধিদের কেউ কেউ চিকিৎসকের কক্ষে প্রবেশ করে সময় নষ্ট করেন। চিকিৎসকও পড়েন বিড়ম্বনার মধ্যে। যেহেতু ওষুধ কোম্পানির তরফে চিকিৎসকদের খুশি করার অঘোষিত রেওয়াজ বিদ্যমান, সেহেতু চিকিৎসক যার মাধ্যমে খুশি হয়েছেন, তার সামনে কঠোর হতে অনেক ক্ষেত্রেই বাধে। ছাত্রসমাজ স্মারকলিপি পেশ করতে গেলে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে উপস্থিত একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এরকমই মন্তব্য করে নিয়ম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে তা উল্লেখও করা হয়েছে।
যেহেতু দেশের সরকারি অধিকাংশ হাসপাতালের চিত্র অভিন্ন। দালালচক্রের উৎপাত ছোট-বড় হাসপাতালই রয়েছে। রোগীদের মাঝে পরিবেশন করা খাবার বেশিরভাগ দিনেই যথাযথ তথা মানসম্পন্ন হয় না। সেহেতু চুয়াডাঙ্গার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম করা অসম্ভব। এরকম যুক্তি কি মেনে নেয়ার মতো? চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্তাদের আশু পদক্ষেপে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের অনিয়ম যদি দূর হয়, দোষের কী? জনস্বার্থে তাই তো হওয়া উচিত। চুয়াডাঙ্গার কর্তাদের কর্মতৎপরতায় অনিয়মের বাসা ভেঙে প্রতিষ্ঠা পাক নিয়ম, বৃদ্ধি পাক স্বাস্থ্য সেবার মান।