বিসিএস পরীক্ষা পদ্ধতির প্রয়োজনীয় তথ্য

মাস্টার্স বা ৪ বছর মেয়াদি সম্মান ডিগ্রি অর্জন পরবর্তীতে সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হওয়ার সুযোগ পাওয়া যায় যে পরীক্ষার মাধ্যমে, তা হলো বিসিএস পরীক্ষা। বিসিএস পরীক্ষা বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক চাকরির পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রতিযোগীকে বিসিএস ক্যাডার বলা হয়। বলা হয়ে থাকে- The civil service system is the backbone of the administration machinery of the Country. বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (BPSE) এ পরীক্ষার নীতি নির্ধারণ ও নিয়োগ সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করে। প্রতি বছর ১ থেকে ২.২৫ লাখ প্রতিযোগী এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রতিযোগীকে বাংলাদেশি নাগরিক হতে হয়, মাস্টার্স ডিগ্রি অথবা ৪ বছর মেয়াদি বিএ ডিগ্রি থাকতে হয়। শিক্ষাস্তরে একের অধিক তৃতীয় বিভাগ থাকলে তা প্রতিযোগীকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণে অযোগ্য করবে। বয়সসীমা ২১ থেকে ৩০ বছর; তবে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান, উপজাতি ও স্বাস্থ্য ক্যাডারের জন্য বয়সসীমা ২১-৩২ বছর পর্যন্ত শিথিলযোগ্য। বছরে সাধারণত দু বার এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়; একটি ফেব্রুয়ারিতে অপরটি আগস্টে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট এ ৬টি বিভাগীয় শহরে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সফলতা পেতে পরিকল্পিতভাবে অগ্রসর হতে হয়। বর্তমানে বিসিএস পরীক্ষায় মোট ২৮টি ক্যাডার বিদ্যমান। এসব ক্যাডার প্রধানত দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি সাধারণ ক্যাডার (১৫টি), অপরটি টেকনিক্যাল/প্রোফেশনাল ক্যাডার (১৩টি)। বিসিএস পরীক্ষা তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত। এগুলো হলো- প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক। প্রথমে নৈর্ব্যক্তিক আকারে ১০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেয়া হয়। এক মাস আগে পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। মে/জুনে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং এক মাস পর ফলাফল প্রকাশিত হয়। এখানে সাধারণত ১০০টি নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন থাকে। যার মধ্যে বাংলা ২০টি, ইংরেজি ২০টি, বাংলাদেশ বিষয়াবলি ২০টি, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ২০টি, বিজ্ঞান ১০টি এবং গণিত ও মানসিক দক্ষতা থেকে ১০টি প্রশ্ন করা হয়। প্রতিটি প্রশ্নের সঠিক উত্তরের জন্য ১ নম্বর পাওয়া যায়; তবে ভুল উত্তরের জন্য ০.৫ নম্বর কেটে নেয়া হয়। এ পরীক্ষায় পাস করা সাপেক্ষে ৯০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠানের একমাস আগে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়, অক্টোবর/নভেম্বর/ডিসেম্বর মাসে পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হয় এবং ২/৩ মাস পর ফলাফল প্রকাশিত হয়। সাধারণ ক্যাডারের জন্য সাধারণ বাংলা (১ম ও ২য়পত্র) ২০০, সাধারণ ইংরেজি (১ম ও ২য়পত্র) ২০০, বাংলাদেশ বিষয়াবলি (১ম ও ২য়) ২০০, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ১০০, গাণিতিক ও মানসিক দক্ষতা ১০০, সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ১০০; এ ৯টি আবশ্যিক বিষয়ে ৯০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হয়। টেকনিক্যাল/প্রোফেশনাল ক্যাডারের জন্য সাধারণ বাংলা ১০০, সাধারণ ইংরেজি (১ম ও ২য়পত্র) ২০০, বাংলাদেশ বিষয়াবলি (১ম ও ২য়পত্র) ২০০, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ১০০, গাণিতিক ও মানসিক দক্ষতা ১০০, পরীক্ষার্থীর পদের সাথে যুক্ত দুটি বিষয়ে ২০০ নম্বর; মোট ৯০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হয়। লিখিত পরীক্ষায় Average Qualifying marks 50%। তবে কোন বিষয়ে ২৫% এর কম পেলে তিনি ওই পরীক্ষায় কোনো নম্বর পাননি বলে ধরে নেয়া হয়। লিখিত পরীক্ষায় ভালো করতে হলে ইংরেজি বিষয়ের জন্য Normal rule of Grammar, antonym, synonym ও ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা নিয়মিত পড়তে হবে। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির জন্য কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, দৈনিক সংবাদপত্র, বাংলাদেশ সংবিধান, বাংলা পিডিয়া পাঠ করতে হবে। বাংলা বিষয়ের জন্য পূর্ব থেকে বর্তমান সময়ের বাংলা সাহিত্য, নবম-দশম শ্রেণির ব্যাকরণ পাঠ করতে হবে। গণিত বিষয়ের জন্য ৮ম থেকে ১০ম শ্রেণির গণিত বইয়ের অঙ্কগুলো দ্রুত ও কম সময়ের মধ্যে সমাধানের কৌশল আয়ত্ব করতে হবে। উল্লেখ্য যে, প্রতি বছর প্রায় ৫০% প্রশ্ন রিপিট হয়। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ১০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা দিতে হয়। এখানে Qualifying marks 40%. ভাইভা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পরবর্তীতে মেডিকেল টেস্ট, পুলিশ ভেরিফিকেশন, NSI ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চাকরিতে যোগদান করতে সব মিলিয়ে প্রায় ২ থেকে ২.৫ বছর সময় লাগে। উপরোক্ত ধাপসমূহ পার হতে পারলেই আপনি অর্জন করবেন বিসিএস ক্যাডার হওয়ার গৌরব উজ্জ্বল সম্মান। তাই এখন থেকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছুতে পরিকল্পনা অনুযায়ী পড়াশুনা শুরু করে দিন।   মো. নাজমুল হুদা বিএসএস (সম্মান) অর্থনীতি nazmulhuda73@gmail.com