মাথাভাঙ্গা মনিটর: ঐতিহাসিকভাবে পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সফলভাবে বিদায় নিলেন আসিফ আলী জারদারি। গত রোববার বিকেলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার গ্রহণের মধ্যদিয়ে প্রেসিডেন্ট কার্যালয় ত্যাগ করেন তিনি। এ সময় প্রেসিডেন্ট ভবনের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকেই আবেগাপ্লুত হতে দেখা যায়। বিদায়কালে দেশের সেবায়ই পরবর্তী জীবন কাটানোর ইচ্ছা ব্যক্ত করেন পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জারদারি। উল্লেখ্য, দেশটির ৬৬ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো ব্যক্তি পূর্ণ মেয়াদ শেষ করে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মাননা পেয়ে প্রেসিডেন্ট ভবন ছাড়লেন।সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, গত রোববার নিজের শেষ কার্যদিবসে বেশ আয়েশি ভঙ্গিতেই প্রেসিডেন্ট ভবনের কলা-কুশলীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন জারদারি। তারপর বিকেলের দিকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গ্রহণের মধ্যদিয়ে প্রেসিডেন্ট ভবন ছাড়েন তিনি। দায়িত্ব পালনকালে তার ভূমিকা নিয়ে অনেক সমালোচনা হলেও মেয়াদ পূর্ণ করে সসম্মানে বিদায় নেয়ার বিবেচনায় তিনিই চূড়ান্ত বিজয় লাভ করলেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। পাঁচ বছরের দায়িত্ব পালনকালে হুমকির পর হুমকি হজম করতে হয়েছে জারদারিকে। বিচার বিভাগে দুর্নীতির দায়ে তাকে অপসারণের দাবি তুলেছিলেন সিনিয়র বিচারপতিরা। কূটনীতিকদের সামরিক অভ্যুত্থানের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সেনা কর্মকর্তারা। তাকে হত্যা করার প্রতিজ্ঞা করেছিল তালেবান। জারদারি সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিতে ভুগেছিলেন দেশটির সংবাদ মাধ্যমগুলোর কারণে। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমগুলো জারদারিকে অনেক বেশি উপহাসের পাত্র এবং নিন্দার পাত্র হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছিলো। এতোসব সমালোচনা ও হুমকিকে ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করে তিনি বুঝিয়ে দিলেন সেনা অভ্যুত্থানের দেশেও নির্বাচিত প্রেসিডেন্টরা সসম্মানে বিদায় নিতে পারেন। পাকিস্তানের অর্থনীতি এখনও মন্দাভাব কাটিয়ে উঠতে না পারলেও দেশকে অন্তত নিজের সাধ্যানুসারে গণতন্ত্রের স্বাদ বুঝিয়েছেন ৮৫ বছর বয়সী জারদারি। সাম্প্রতিক নির্বাচনে নিজের দলের হার অনুমান করতে পেরেও কোনো ধরনের প্রভাব খাটানোর চিন্তা করেননি। জারদারির বিদায়ে সম্মান জানিয়ে পাকিস্তানের প্রভাবশালী একটি সংবাদমাধ্যমের সম্পাদক কামাল সিদ্দিকী লিখেছেন, ভালোবাসুক অথবা ঘৃণা করুক, কিন্তু কেউ প্রেসিডেন্ট জারদারিকে খাটো করতে পারবে না। বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আদিল নাজাম বলেন, এটা যুগের শ্রেষ্ঠ পরিবর্তনের উদাহরণ। জারদারির সবচেয়ে বড় অর্জন হলো তিনি হাসিমুখে দেশের সর্বোচ্চ কার্যালয় থেকে বের হতে পেরেছেন। না কফিনে চড়ে, না হাতকড়া পরে, না অসম্মানিত হয়ে। প্রসঙ্গত, জারদারির স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল মুসলিম লিগ সমর্থিত সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মামনুন হুসাইন।