স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ বিমানের চার কর্মকর্তা ও জেদ্দার বিতর্কিত জিএসএ ইলাফ এভিয়েশনের গাফিলতি, অদক্ষতা আর টিকিট বিক্রিতে কমিশন বাণিজ্যের কারণে প্রথম দিনেই হজফ্লাইট নিয়ে চরম বিপত্তির মুখে পড়েছে বিমান। ভাড়ায় আনা নাইজেরিয়া কাবো এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৪৭-এর ইন্স্যুরেন্সের কাগজ ও জেদ্দা সিভিল অ্যাভিয়েশনের ছাড়পত্র না থাকায় গতকাল শনিবার সন্ধ্যার ফ্লাইটটি বাতিল করতে হয়েছে। এ কারণে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করেও মোট ৫৮২ জন হজযাত্রী সন্ধ্যার ফ্লাইটে সৌদি আরব যেতে পারেননি। তবে বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সন্ধ্যার ফ্লাইটটি ভোর সাড়ে ৬টায় ঢাকা থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। এই অবস্থায় হজযাত্রীদের রাতভর হাজি ক্যাম্পে চরম অস্বস্থিতে কাটাতে দেখা গেছে।
জানা গেছে, এনওসি না থাকায় আজও কাবো এয়ারলাইন্স তাদের নির্ধারিত ফ্লাইট চালাতে পারবে না। বিমান সূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতির কারণে বিমানের জেদ্দার জিএসএ (জেনারেল সেল্স এজেন্ট) ইলাফ অ্যাভিয়েশনের লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাওয়ায় কাবোর ছাড়পত্র নেয়া সম্ভব হয়নি। একই ঘটনায় হজযাত্রী পরিবহনের জন্য ভাড়ায় আনা অপর এয়ারক্রাফট বোয়িং ৭৬৭-এরও সৌদি ছাড়পত্র আনা সম্ভব হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী হজযাত্রী আনা-নয়া করার জন্য ভাড়া করা বিমানের ছাড়পত্র নিতে বিমানের সংশ্লিষ্ট দেশের জিএসএর মাধ্যমে জেদ্দা সিভিল অ্যাভিয়েশনের কাছে আবেদন করতে হয়। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে কাবো ও বোয়িং ৭৬৭ এয়ারক্রাফটের সব কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকার পরও ইলাফ অ্যাভিয়েশনের লাইসেন্সের মেয়াদ না থাকায় জাহাজ দুটির ছাড়পত্র নিতে আবেদন করা সম্ভব হয়নি।
জেদ্দা বিমান অফিস সূত্রে জানা গেছে, ইলাফ অ্যাভিয়েশনের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে- এটা তারা কাউকে না জানিয়ে গোপন করে রেখেছিলো। ওই জিএসএ শুধু মেয়াদের বিষয়টি গোপন করেনি গত একমাস ধরে তাদের শীর্ষ কর্মকর্তাদেরও খুঁজে পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত বিমান এবং কাবো এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে লবিং করে ওই জিএসএর লাইসেন্স নবায়ন করা হয়। এরপর নবায়নকৃত লাইসেন্সের মাধ্যমে কাবো এবং বোয়িং ৭৬৭ উড়োজাহাজের ছাড়পত্রের জন্য জেদ্দা সিভিল অ্যাভিয়েশন বরাবর আবেদন জানানো হয়।
জেদ্দা সিভিল অ্যাভিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, আজ তাদের ছাড়পত্র পাওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে লাইসেন্স নবায়ন না থাকা এবং দীর্ঘদিন লাপাত্তা থেকে ছাড়পত্র নিতে গড়িমসি করায় ইলাফ অ্যাভিয়েশনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে বিমান। অপর দিকে কাবো এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকেও সংশ্লিষ্ট জিএসএর কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে বিমান সূত্রে জানা গেছে, আজ ছাড়পত্র পেলেও কালকের আগে কাবো এয়ারলাইন্সের পক্ষে হজযাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে না। এই ক্ষেত্রে বিমানের হজফ্লাইটের সিডিউল আরও লণ্ডভণ্ড হওয়ার আশঙ্কা করছে বিমান। এদিকে বিমানের অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, কাবো এয়ারলাইন্সের ইন্স্যুরেন্স না হওয়ায় জন্য বিমানের প্ল্যানিং বিভাগের দুই কর্মকর্তা দায়ী। এরা হলেন- জেনারেল ম্যানেজার বেলায়েত হোসেন ও ম্যানেজার আজাদুর রহমান। অভিযোগ রয়েছে বিমান পরিচালনা পর্ষদ থেকে কাবো এয়ারলাইন্সের ভাড়া নেয়ার অনুমোদন দেয়ার পর গত এক মাসেও নানা অজুহাতে তারা কাবোর সাথে উড়োজাহাজ ভাড়া নেয়ার চুক্তি করেনি। অভিযোগ রয়েছে, তাদের পছন্দের উড়োজাহাজ ভাড়া নিতে না পারায় এবং কমিশন বাণিজ্য না হওয়ায় তারা দীর্ঘ দিন কাবো এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ ভাড়াসংক্রান্ত চুক্তি করতে গড়িমসি করে। এক পর্যায়ে জেনারেল ম্যানেজার বেলায়েত হোসেন চুক্তি সম্পন্ন না করে বিদেশে বেড়াতে চলে যান। এরপর দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার আজাদুর রহমানও নানা অজুহাত দেখিয়ে চুক্তি করতে গড়িমসি করেন।
অভিযোগ রয়েছে, এ কারণে কাবোর পক্ষে যথাসময়ে উড়োজাহাজের সব ধরনের কাগজপত্র জোগার করা সম্ভব হয়নি। অপর দিকে নিয়ম অনুযায়ী ভাড়া করা সব উড়োজাহাজের ইন্স্যুরেন্স করে থাকে বিমান। এবারও কাবো এয়ারলাইন্সের ইন্স্যুরেন্স করার কথা ছিলো বিমানের। কিন্তু দীর্ঘ দিন বেলায়েত হোসেন ও আজাদুর রহমান বিষয়টি গোপন রেখে শেষ মুহূর্তে এসে কাবোকে জানিয়ে দেন বিমানের পক্ষে উড়োজাহাজের ইন্স্যুরেন্স করা সম্ভব হবে না। নানা গড়িমসির পর ১৯ আগস্ট বিমান কাবোর সাথে চুক্তি সম্পন্ন করে। যদিও বোয়িং ৭৬৭-এর সাথে চুক্তি করতে ওই চক্রটি সময় নিয়েছিল মাত্র দু দিন।
জানা গেছে, বোর্ড অনুমোদন দেয়ার মাত্র দু’দিনের মাথায় তারা বোয়িং ৭৬৭-এর সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করে। অভিযোগ উঠেছে, এই ঘটনায় ওই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট উড়োজাহাজ কোম্পানির স্থানীয় এজেন্টের সঙ্গে বড় ধরনের আন্ডার হ্যান্ডডিলিং হয়েছে।
এদিকে হজফ্লাইট পরিচালনার এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বিমানের মার্কেটিং বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার আবদুল্লাহ আল হাসান ছুটি নিয়ে আমেরিকায় অবস্থান করায় হজফ্লাইটের সিডিউল নিয়ে লণ্ডভণ্ড অবস্থায় পড়েছে বিমান।
জানা গেছে, আবদুল্লাহ আল হাসানের জায়গায় অন্য কর্মকর্তা না থাকায় মার্কেটিং বিভাগকে ফ্লাইট সিডিউল তৈরি ও টিকিট বিক্রিতে শৃঙ্খলা আনায়নে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, মার্কেটিং বিভাগের জেনারেল ম্যানেজারের দায়িত্বে থাকা শামসুল করিম প্রতি টিকিটে দু হাজার টাকা কমিশন নিয়ে গত ১৪ দিনের সব হজ টিকিট বিক্রি সম্পন্ন করেছেন। এক্ষেত্রে সাধারণ ট্রাভেল এজেন্টদের টিকিট না দিয়ে তার পছন্দের ট্রাভেল এজেন্টকে বেশির ভাগ বিমানের টিকিট দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।