ইবিতে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল শিবিরের সংঘর্ষ : গোলাগুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ : আহত ২০

ইবি প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাথে  ছাত্রদল ও শিবিরের সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে দু পক্ষের কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দফায় দফায় ওই সংঘর্ষ চলে। আহতদের মধ্যে ছয়জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে  কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে ছাত্রদল ও শিবিরের নেতাকর্মীরা প্রশাসন ভবনের ভেতরে ঢুকে ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী ও কর্মচারী মো. জিয়া এবং ছাত্রলীগের কর্মী শাহিনকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মারধর করে। আহত শাহিনকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে ক্যাম্পাসের পাশের শেখপাড়া বাজারে রুবেল নামে ছাত্রলীগের বহিরাগত এক কর্মীকে মারধর করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলেরকর্মী সোহাগ ও রনি। তারা রাষ্ট্রনীতি ও লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। এর কিছুক্ষণ পর সোহাগ ও রনি তাদের দলীয় টেন্টে যান। এ সময় ছাত্রলীগের কর্মী রাসেল জোয়ার্দ্দার কয়েকজনকে সাথে নিয়ে তাদের মারধর করেন। রাসেল জোয়ার্দ্দার আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রদলের কর্মীরা সংগঠিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটোরিয়ার পেছনে অবস্থান নেয় এবং ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাদের টেন্টে অবস্থান করেন। দুপুর ১২টার দিকে ছাত্রদলের কর্মীরা দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে কলা অনুষদের সামনে গেলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের দলীয় টেন্ট থেকে ধাওয়া দেন। এ সময় দু পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। ছাত্রদল পিছু হটে কলা অনুষদের পেছন দিয়ে বেরিয়ে টিএসসি এবং সাদ্দাম হোসেন হলের মাঝখানে অবস্থান নেয়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা টিএসসির উত্তর পাশে অবস্থান নেন। এ সময় দু পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে ইটপাটকেল, ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শামীম খান, যুগ্ম আহ্বায়ক আবুজর গিফারী, আহমেদ সাজন, বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক মো. হালিম, ছাত্রলীগের কর্মী সোহেল, জনি, রতনসহ ১০ জন এবং ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, কর্মী মো. হানিফসহ সাতজন আহত হন। এ সময় শিবিরের কিছু নেতাকর্মী সাদ্দাম হলের সামনে অবস্থান করছিলেন। পুলিশ ছাত্রদল ও শিবিরকে  ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট ছোড়ে। পুলিশের রাবার বুলেট লেগে ছাত্রদলের সহসভাপতি মোহাইমিনুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল খায়ের, দপ্তর সম্পাদক শাহেদ আহমেদ, অর্থ সম্পাদক কামরুল আহত হন।

EB Clash

এদিকে পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে সাদ্দাম হলের সামনে থাকা শিবিরের এক কর্মী আহত হলে তাদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে শিবির ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা এক হয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া করেন। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রশাসন ভবন ও প্রধান ফটকের বাইরে অবস্থান নেন। সংঘর্ষের একপর্যায়ে ছাত্রদল ও শিবিরের নেতাকর্মীরা প্রশাসন ভবনের সামনে থাকা পাঁচটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন। তারা প্রশাসন ভবনের ভেতরে ঢুকে ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী ও কর্মচারী মো. জিয়া এবং ছাত্রলীগের কর্মী শাহিনকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে  মারধর করে। আহত শাহিনকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়েছে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিরিক্ত পুলিশ গেলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যান এবং শিবিরের নেতাকর্মীরা আবাসিক হলে অবস্থান নেন। দুপুর দেড়টার দিকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন থেকে বেরিয়ে এসে দলীয় টেন্টে অবস্থান নেন। পরে তারা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শামীম খান বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের দলীয় টেন্টে থাকা অবস্থায় ছাত্রদল ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্যই আমাদের ওপর হামলা চালালে আমরা তার পাল্টা জবাব দিয়েছি।’ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের টেন্টে দলের কিছু কর্মী থাকা অবস্থায় বাইরের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ বলেন, ‘ঘটনাটি মূলত ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের মধ্যে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আবাসিক হলের সামনে অবস্থান করার সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও পুলিশ সদস্যরা আমাদের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি করলে আমরা তা প্রতিরোধ করেছি মাত্র।’ এ ব্যাপারে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মফিজ উদ্দিন বলেন, ‘ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ফাঁকা গুলি চালায়। বর্তমানে ক্যাম্পাসে সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও ৱ্যাবের সদস্যরা রয়েছে।’প্রক্টর অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে একটি ঘটনা ঘটে গেছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ হামলার ঘটনায় ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান ছাত্র উপদেষ্টা মাহবুবর রহমান।