শিশুর অভয়ারণ্য হোক এই দেশ

মৃত্যু স্বাভাবিকভাবেই বেদনার, কিন্তু যখন অস্বাভাবিক পরিস্থিতি কিংবা অসাবধানতার দরুণ মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটে, তখন তা শুধু বেদনাদায়কই নয় বরং উদ্বেগজনক বলেই আমরা মনে করি। সঙ্গত কারণেই মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা দিতে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেলো, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গীতে হায়দ্রাবাদ আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে গভীর নলকূপের জন্য খোঁড়া কূপটি কাজ শেষে ভরাট না করে বালি দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিলো। আরো অবাক করা ব্যাপার হলো, এ অবস্থাতেই কেটে গেছে প্রায় এক বছর! গত দুই দিনের বৃষ্টিতে বালি নরম হয়ে কূপটি পরিণত হয়েছিলো যেন মরণফাঁদে। তথ্য মতে, গত শনিবার সকালে পরীক্ষা শেষে সহপাঠীদের সাথে আগের মতোই স্কুলমাঠে খেলাধুলা করছিলো রোমানুর ও সানি। কিন্তু হঠাৎ করেই কূপে পড়ে যায় রোমানুর। তার ওপর পড়ে সানি নামের শিক্ষার্থী। স্থানীয়রা ২৫ মিনিটের চেষ্টায় দুজনকে উদ্ধার করলেও কর্তব্যরত চিকিৎসক রোমানুরকে মৃত ঘোষণা করেন।

এভাবে শিশুশিক্ষার্থীর মৃত্যু কতোটা শোকের তা বলার জন্য ভাষা যথেষ্ট নয়। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অসাবধানতার বিষয়টিও এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেননা যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুরা পড়ালেখা করছে, মাঠে খেলাধুলা করছে সেখানে গভীর নলকূপ খনন করে অরক্ষিত অবস্থায় রাখা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত হতে পারে না। আমরা মনে করি, অসাবধানতার সংস্কৃতি রোধ করতে সচেতনতা বাড়াতে হবে। গ্রহণ করতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ। যখন এভাবে মাঝেমধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে, তখন মনে রাখতে হবে তা শুধু ব্যক্তি, পরিবার বা গোষ্ঠীবিশেষে নয়, বরং এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সর্বত্রই।

এটা আমলে নেয়া প্রয়োজন, এর আগেও পাইপে পড়ে কিংবা খাদে পড়ে শিশুর মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটেছে। সাড়ে তিন বছরের শিশু জিহাদের ঘটনা সারা দেশের মানুষকে বাকরুদ্ধ করে দিয়েছিলো। ২৪ ঘণ্টা পর শিশু জিহাদকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে তখন তার দেহে প্রাণ ছিলো না। সেই শিশুটিও রাজধানীর শাহজাহানপুর বালির মাঠে সঙ্গীদের সাথে খেলতে গিয়ে মাঠের পাশে প্রায় ৬০০ ফুট গভীর পানির পাইপের মধ্যে পড়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে এ দুর্ঘটনার জন্য কর্তব্যে অবহেলার কারণে রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়েছিলো। কালো তালিকাভুক্ত করা হয় পাইপ বসানোর কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকেও। কিন্তু যখন এ রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ হচ্ছে না তখন তা আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিকেই নির্দেশ করে। মনে রাখা সঙ্গত, সেদিন জিহাদের সেই মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলো সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতা কিংবা অসাবধানতা শিশুর জীবনে কী ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। আবারো যখন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছেই তখন তা অত্যন্ত পরিতাপের। সংশ্লিষ্টদের জরুরি কর্তব্য হওয়া দরকার অরক্ষিত অবস্থায় নলকূপ, পাইপ, গর্ত, ম্যানহোলসহ এসব কিছুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। প্রয়োজনে এ ঘটনাগুলো আমলে নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য। কেননা অরক্ষিত অবস্থায় নলকূপ, পাইপ, গর্ত, ম্যানহোলসহ যেকোনো কিছুর নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতি কতোটা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

সর্বোপরি আমরা সরকারকে বলতে চাই, এমন পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে, যেন দায়িত্ববোধ এবং কোনো কিছু অরক্ষিত রাখার মতো মানসিকতার পরিবর্তন হয়। ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা যেন আর কোনোভাবেই না ঘটে সেজন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিটি কর্তৃপক্ষ এবং সর্বস্তরের মানুষকেও সচেতন হতে হবে। আর এরূপ অব্যবস্থাপনার মতো বিষয়ের সাথে যারাই জড়িত হোক না কেন তাদের প্রতিও যেন কোনো অনুকম্পা প্রদর্শন করা না হয়। শিশুর অভয়ারণ্য হোক এই দেশ।