প্রসঙ্গ : সরকারি ভবনের ছাদের অংশ ধসে মৃত্যু ঝুঁকি

একটি ভবন নির্মাণের পর তা কতোদিন ব্যবহার করা যায়? কতোদিন পর তা খসে-ধসে পড়তে শুরু করে? এসব প্রশ্নের জবাব আমাদের দেশের গণপূর্ত প্রকৌশল বিভাগের অজানা নয়। এরপরও ব্যবহৃত ভবনের ছাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশ প্লাসটার ধসে পড়ে প্রাণহানির শঙ্কা দেখা দেয় কেন? এ প্রশ্নের জবাবযুক্ত বহু যুক্তিও বোধকরি গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীদের কাছে মজুদ রয়েছে। যতো যুক্তিই থাক, আমজনতার অর্থে নির্মাণ করা সরকারি ভবনের অকাল ঝরে পড়ার আড়ালে যে দুর্নীতি লুকিয়ে থাকে তা বলাই বাহুল্য।

সরকারি অধিকাংশ ভবন নির্মাণের সময়ই নিযুক্ত ঠিকাদারের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল বিভাগের তদারক কর্তার যোগসাজোশের অভিযোগ ওঠে। সেই অভিযোগ যে অবান্তর নয় তা দেড়-দু যুগ যেতে না যেতে ঝরে, খসে, ধসে পড়ার দৃশ্য অন্যতম প্রমাণ। অবাক হলেও সত্য যে, গণপূর্ত প্রকৌশল বিভাগের তত্ত্বাবধানে চুয়াডাঙ্গা জজশিপের ভবন নির্মিত হয়। এ ভবনের ছাদ ধসে গত পরশু প্রাণহানির শঙ্কা ফুটে ওঠে। গতকাল দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় এ বিষয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ভাগ্যিস প্রাণহানি ঘটেনি।

সরকারি ভবন নির্মাণের সময় অবশ্যই ঠিকাদারকে কিছু শর্ত দেয়া হয়। শর্ত মোতাবেক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে কি-না তা দেখভালের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল বিভাগের। নির্মাণের পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ধসে-খসে পড়লে জামানত বাজেয়াপ্ত করার বিধানও আছে। সে মেয়াদ এতোদিন হয়তো উত্তীর্ণ হয়েছে। সময় পার হওয়ার পর ঠিকাদারের কৈফিয়ত নেয়ার সুযোগ না থাকলেও তৎকালীন দায়িত্ব পালন করা প্রকৌশলীর জবাবদিহিতা করা যায় কি-না তা ভেবে দেখার বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক নয় নিশ্চয়। ভূমিকম্পকে দোষারোপ করলেও জবাব দেয়ার বাধ্যবাধ্যকতা থাকা উচিত নয় কি?

সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মাণে ত্রুটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। অথচ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় উপকরণ দেয়াতেও ফাঁকিজুকি থাকে। এসব দেখার দায়িত্বে যারা থাকেন তাদের কেউ কেউ যখন অনিয়মের সাথে আপস করেন তখন কার কি বলার থাকে? অনিয়ম দুর্নীতির প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে জবাবদিহিতার বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া দরকার। প্রয়োজন অনিয়মের সুযোগ বন্ধে পদ্ধতিগত ত্রুটিগুলো শনাক্ত করে বাস্তবমুখি পদক্ষেপ নেয়া।