১০ টাকা কেজি দরের চাল কার্ড প্রতি ৩০ কেজির পরিবর্তে ২০-২৫ কেজি করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ভাংবাড়িয়া ইউপির ডিলার শামীম রেজার বিরুদ্ধে

 

ভাংবাড়িয়া থেকে ফিরে শরিফুল ইসলাম রোকন: দুস্থদের ১০ টাকা কেজি দরের চাল কার্ড প্রতি ৩০ কেজির পরিবর্তে ২০-২৫ কেজি করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে আলমডাঙ্গার ভাংবাড়িয়া ইউপির ডিলার শামীম রেজার বিরুদ্ধে।

সরেজমিনে ঘটনাস্থল গিয়ে জানা যায়, আলমডাঙ্গা উপজেলার ভাংবাড়িয়া ইউনিয়নে দুস্থদের মাঝে ১০ টাকা দরে চাল দেয়ার জন্য ৪৬২ জনকে কার্ড দেয়া হয়েছে। সারা দেশের মত একই নিয়মে প্রত্যেককার্ডধারীকে ৩০ কেজি করে চাল দেয়ার নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু এ নির্দেশ উপেক্ষা করে ৩০ কেজির চালের পরিবর্তে অবৈধভাবে মুখ চিনে চিনে কাউকে ২০ কেজি, কাউকে ২৫ কেজি আবার কাউকে শুধুমাত্র ১০ কেজি চাল দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগের অগুনতি তীর যার বিরুদ্ধে, তিনি ভাংবাড়িয়া ইউনিয়নে ১০ টাকা দরে চাল বিক্রির একাংশের ডিলার শামীম রেজা। তার আয়ত্তে ২৩১টি কার্ড। নিয়ম-নির্দেশমাফিক প্রতিটি কার্ডের বিপরীতে তাকেও ৩০ কেজি করে চাল দেয়ার কথা। কিন্তু তিনি তা দেননি। অভিযোগ উঠেছে- তিনি প্রতিটি কার্ডের বিপরীতে অবৈধভাবে মুখ চিনে চিনে কাউকে ২০ কেজি, কাউকে ২৫ কেজি আবার কাউকে শুধুমাত্র ১০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। চাল বিতরণকালে এমন অভিযোগ পেয়ে গতকাল শনিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে এ সকল অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ঘটনাস্থলে চাল নিতে যাওয়া ৪৬০ নং কার্ডধারি হলেন ভোগাইল বগাদী গ্রামের পুরাতন বাজার পাড়ার মৃত একারুদ্দীন মণ্ডলের ছেলে রবিউল ইসলাম। তাকে ৩০ কেজির পরিবর্তে ১০ কেজি কম করে ২০ কেজি চাল দেয়া হয়েছে। একই গ্রামের হবিবর রহমানের স্ত্রী হাওয়া খাতুনকে তার ৪৫১ নং কার্ডের বিপরীতে ৩০ কেজির পরিবর্তে ২০ কেজি চাল দেয়া হয়েছে। মহেশপুর গ্রামের হাগু মণ্ডলের ছেলে নায়েব আলীকে তার ৩৭৫ নং কার্ডের বিপরীতে ৩০ কেজি পরিবর্তে ২৫ কেজি চাল দেয়া হয়েছে। ৩০ কেজি চালই দেয়া হয়েছে- চাল সংগ্রহেচ্ছুক শতাধিক কার্ডধারীদের মধ্যে এমন কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরং অনেকে অভিযোগ করেছেন, মুখ চিনে চিনে চাল দেয়া হচ্ছে। অনেককেই মাত্র ১০ কেজি চালও দেয়া হয়েছে বলে তারা অভিযোগ তোলেন। মহেশপুরের বৃদ্ধ নায়েব আলী ১০ টাকা কেজি দরে চাল নিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য স্থানীয় সোনামোড়ে ভ্যানের অপেক্ষায় ছিলেন সস্ত্রীক। এ সময় এ প্রতিবেদকদ্বয় সেখানে উপস্থিত হয়ে ঘটনা জানার পর তার চাল পাশের এক ওয়েল্ডিঙের দোকানে ওজন মাপার ডিজিটাল স্কেলে ওজন করেন। দেখেন ৩০ কেজির পরিবর্তে তাকে মাত্র ২৪ কেজি ৬শ গ্রাম দেয়া হয়েছে।

৩০ কেজির পরিবর্তে কার্ডধারীদের কেন মাত্র ২০, ২৫ কেজি করে চাল দিচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ডিলার শামীম রেজা বলেন, আমি প্রত্যেককেই ৩০ কেজি করে চাল দিয়েছি। পথের ভেতর তারা বাকি চাল কোথায় কী করেছে তা আমার জানার দরকার নেই। এমন উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও কথা বলার পর পরই অবশ্য তিনি সাংবাদিকদ্বয়কে একটু পাশে ডেকে নিয়ে গোপনে ম্যানেজের চেষ্টা করেন। সম্ভব নয় জেনে ভোল পাল্টে তিনি আবার নতুন করে বলেন, সবাইকে ২০/২৫ কেজি করে দিয়ে বাকি চাল ১০ কেজি করে গরিবদের দিচ্ছেন। সাংবাদিকরা ঘটনাস্থল থেকে চলে যাওয়ার পর বিকেল ও সন্ধ্যায় তিনি একাধিক নেতাকে অনুরোধ করেন টাকায় সাংবাদিকদের সাথে মীমাংসা করে দিতে।

এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজাদ জাহান বলেন, বিষয়টি তদন্ত করা হবে। প্রমাণিত হলে ডিলারশিপ বাতিলসহ অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।