আলমডাঙ্গার বাগুন্দার স্কুল তানজির অপহরণে মূলহোতা আজানূরকে গ্রামবাসীর সহযোগিতায় আটক করেছে পুলিশ

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার পোলবাগুন্দা গ্রামের ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া কিশোরকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবির মাস্টার মাইন্ড আজানূর হুজুরকে গ্রামবাসীর সহযোগিতায় আটক করা হয়েছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে এ অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে বলে পুলিশের দাবি। তার দেয়া তথ্যমতে গতকাল শনিবার রাতে পুলিশ অপহৃতকে উদ্ধার করতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

জানা গেছে, এ অপহরণের মাস্টারমাইড সপরিবারে পলাতক আজানুর হুজুরকে আটক করতে পুলিশ গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে আসছিলো। তাকে আটক করতে না পারলে আজানুর হুজুরের দুই আত্মীয়কে গতপরশু রাতে পুলিশ আটক করে। গতপরশু রাতে আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ আকরাম হোসেন আইলহাস গ্রামে যান। তিনি গ্রামবাসীকে অনুরোধ করেন অপহরণকারী-চাঁদাবাজ আজানুরকে আটক করতে পুলিশকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে। গ্রামবাসী পুলিশের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নিজেরা সম্ভাব্য স্থানে অভিযান চালায়। অবশেষে ভোররাতে আইলহাস গ্রামের আজানুর হুজুরের ফুফুর বাড়ি থেকে তাকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। আটক আজানুর হুজুর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এ অপহরণ ও চাঁদাবাজির সাথে তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। অপহৃত তানজিরকে যার দায়িত্বে রেখেছে তার নামও সে জানিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় করার দায়িত্ব আজানূর হুজুর নিজে নিয়েছিলো বলে পুলিশকে জানিয়েছে। গতকাল রাতে চুয়াডাঙ্গায় নিয়ে ডিবি পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, অন্যদিকে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ অপহৃতকে উদ্ধার করতে সম্ভাব্য স্থানে অভিযান অব্যাহত রাখেছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার আইলহাঁস ইউনিয়নের পোলবাগুন্দা গ্রামের চা দোকানি সামরুল ইসলামের ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া কিশোর ছেলে তানজির হোসেন। সে গত ২২ সেপ্টেম্বর বিকেলে মায়ের সাথে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। পরে আর বাড়ি ফেরেনি। পরিবারের দাবি এলাকার অনেকেই কিশোর তানজির হোসেনকে চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ বাজারে দেখেছেন। পার্শ্ববর্তী আইলহাঁস গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে আজানুর হুজুরের সাথে ঘুরে বেড়াতে দেখেছে। সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজ করেও তানজিরকে খুঁজে না পেয়ে তার পরিবার বিষয়টি থানা পুলিশকে জানানোর সিদ্ধান্ত নেন। তানজিরের পিতা বাদী হয়ে এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এরই মধ্যে গতপরশু বৃহস্পতিবার অজ্ঞাত ব্যক্তি মোবাইলফোন থেকে তানজিরের পিতার মোবাইলে ফোন দিয়ে তানজিরকে অপহরণ করা হয়েছে বলে দাবি করে মুক্তিপণ। অজ্ঞাত ব্যক্তি সে সময় তানজিরের সাথে তার পিতার কথাও বলিয়ে দেয়। কথা বলার সময় তানজির কান্নাকাটি করছিলো বলে জানিয়েছে তার পরিবার। সে সময় অজ্ঞাত অপহরক তানজিরের মুক্তিপণ হিসেবে প্রথমে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। একজন দরিদ্র চা দোকানির পক্ষে এতো মোটা অংকের টাকা দেয়া অসম্ভব জানিয়ে কান্নাকাটির পর মুক্তিপণের পরিমাণ কিছুটা কমানো হয়। বলা হয় বিকাশে দিবি। একই দিনে আরও কয়েকবার মোবাইলফোনে মুক্তিপণের টাকা দাবি করে চক্রটি। শেষ পর্যন্ত মুক্তিপণ দাবির পরিমাণ ১ লাখ ৬০ হাজারে নামে।

পুলিশ ও তানজিরের পরিবারসূত্রে জানা যায়, তানজিরের পিতার নিকট যে মোবাইলফোন থেকে মুক্তিপণ দাবি করা হয়, পুলিশ সেই মোবাইল ট্র্যাকিং করে জানতে পারেন-সিমটির ১ম মালিক ঝিনাইদহের বক্তিয়ার হোসেন। পরে হাত বদল হয়ে ঝিনাইদহের ফ্লেক্সিলোড ব্যবসায়ী আলমগীর। পরে আলমগীরের হাত বদল হয়ে আজানুর হুজুরের আত্মীয় ঝিনাইদহের নান্নুর হাতে পড়ে। এলাকায় প্রতারক হুজুর নামে পরিচিত আইলহাস গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে আজানুর তানজিরকে অপহরণ করার পর সিমটি নান্নুর নিকট থেকে নিয়ে গিয়ে মুক্তিপণ আদায়ের কাজে ব্যবহার শুরু করে। তার এ অপহরণের সাথে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়ে গ্রামে নানা কথা ছড়িয়ে পড়লে অবস্থা বেগতিক জেনে আজানুর হুজুর স্ত্রী, সন্তান নিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালায়। পরশু শুক্রবার চুয়াডাঙ্গা ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে আজানুরকে আটক করতে না পারলেও তার চাচা সম্পর্কের খাইরুল ইসলামকে (৩৫) আটক করে। আটক খাইরুল মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে। এছাড়া পুলিশ আজানুরের আরেক আত্মীয় খাসকররা গ্রামের মৃত তৈয়ব জোয়ার্দ্দারের ছেলে মোনায়েমকেও (৩৫) আটক করে। এ অপহরণের ১ সপ্তা অতিবাহিত হলেও গত বৃহস্পতিবার মুক্তিপণ দাবির পর থেকে পুলিশ অপহরণকারীচক্রকে আটক ও অপহৃতকে উদ্ধার করতে লক্ষ্যণীয় তৎপরতা শুরু করেছে। এ অপহরণের মামলাটি গতপরশু রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা থেকে আলমডাঙ্গা থানায় হস্তান্তর করা হয়।