সাপে কেটে একজনের মৃত্যুর পর চরম আতঙ্ক : ওঁঝা কবিরাজের ঝাঁড়ফুঁক রমরমা

 

শাহনেওয়াজ খান সুমন: অদৃশ্য সাপ আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ভাটই ও নাকোল গ্রামের মানুষ। কিন্তু সাপটি এখনো কারো চোখে পড়েনি। মানুষের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে একটি জিন সর্পরূপ ধারণ করে দংশন করছে বলে ধারণা করছে গ্রামবাসী। তবে এলাকাবাসীর এমন ধারণা উড়িয়ে দিয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এদিকেগত এক সপ্তায় কথিত কল্পিত সাপের দংশনে একজনের মৃত্যু ও অন্তত ৩০ জন নারী-পুরুষ আক্রান্ত হয়েছেন।

শৈলকুপা উপজেলার দুধসর ইউনিয়নের ভাটই ও নাকোল গ্রাম দুটি পাশাপাশি। গত ৩১ আগস্ট রাতে ভাটই গ্রামের মফিরুল ইসলামের ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন (১৭) সর্প দংশনে মারা যান। এরপর থেকে ওই এলাকায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সাপ আতঙ্কে এলাকার স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা অনেকেই স্কুলে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে।

এ ব্যাপারে শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী প্রিন্স বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এক সপ্তা আগে সর্প দংশনে এক ব্যক্তির মৃত্যুর পর এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। কয়েকজন মানুষের ক্ষতস্থান আমরা দেখেছি। এটা আদৌ সাপের কামড় নয়। তারা বিভিন্ন ওঁঝা, কবিরাজের কাছে গিয়ে অপচিকিৎসার ফাঁদে পড়ছে। এ সময় বিভ্রান্ত থেকে গ্রামবাসীকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন তিনি।

এলাকাবাসী জানায়, ভাটই উত্তরপাড়ায় রাস্তার পাশে প্রকাণ্ড একটি কড়াই গাছ রয়েছে। কড়াই গাছটির ওপর সম্প্রতি বজ্রপাত হলে ওই গাছটি মারা যায়। মরা গাছটিতে জিন থাকতো। গাছটি মরে যাওয়ায় মানুষের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে জিন সাপের রূপ ধারণ করে দংশন করছে। বেশ কয়েকদিন আগে সর্পরূপি জিনের দংশনে একজন মারা গেছেন। এলাকাবাসী আরো জানায়, প্রতিদিন তিন থেকে চারজনকে সাপে কামড়াচ্ছে। কিন্তু এখনও তারা কোনো সাপ দেখতে পায়নি। এদিকে সাপে কামড়ানো এসব রোগীর চলছে ওঁঝার চিকিৎসা ও কবিরাজের তেল-পানি পড়া এবং ঝাঁড়ফুঁক। এ থেকে মুক্তি লাভের জন্য ওঁঝার চিকিৎসার পাশাপাশি মানুষের মাঝে সিরনি বিতরণও করা হচ্ছে।

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. অপূর্ব কুমার সাহা বলেন, শৈলকুপায় সাপের কামড়ে একজন মারা গেছেন। অনেকে সাপের কামড়ে আহত হয়েছেন। কিন্তু আক্রান্তরা চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে ওঁঝার কাছে যাচ্ছে। এটা কোনো বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসা নয়।