পাঁচ দিন ধরে অভুক্ত খালেদা জিয়া

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পাঁচ দিন ধরে অভুক্ত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন কার্যালয়ে তার সাথে প্রথম থেকে অবস্থানকারী দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান। গতকাল বিকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের মূল ফটকের ভেতরে একটি টুলের ওপর দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। এর আগে দুপুরে রিকশায় করে কার্যালয়ে খাবার নেয়া হলেও পঞ্চম দিনের মতো তা ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। এর প্রতিবাদে ফটকের ভেতরে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সেলিমা রহমান বলেন, স্টাফদের অভুক্ত রেখে খাবার খান না খালেদা জিয়া। গত পাঁচ দিন ধরে পুলিশ কার্যালয়ে খাবার ঢুকতে দিচ্ছে না।

পুলিশকে উদ্দেশ্য করে সেলিমা রহমান বলেন, কার নির্দেশে কার্যালয়ে খাবার প্রবেশে বাধা দেয়া হচ্ছে জানতে চাই? কারাগারে ফাঁসির আসামিকেও খাবার দেয়া হয়। খালেদা জিয়ার কারণে খাবার পর্যন্ত আনতে দেয়া হচ্ছে না। অথচ সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে খাবার প্রবেশের ব্যাপারে মিথ্যাচার করছেন। এর আগে দুপুর আড়াইটার দিকে ৩০ প্যাকেট খাবার নিয়ে কার্যালয়ে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ তা ফেরত পাঠায়। খাবার ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা জানান- ওপরের নির্দেশ আছে। ঊর্ধ্বতন অফিসাররা জানেন কেন খাবার দেয়া যাবে না। পরে বিকাল সোয়া ৪টার দিকে খালেদা জিয়ার জন্য তার বড় বোন সেলিনা ইসলামের বাসা থেকে নেয়া কিছু শুকনো খাবার কার্যালয়ের ভেতরে নেয়ার সুযোগ দেয় পুলিশ। তবে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা টিফিন ক্যারিয়ারের প্রতিটি বাটি খুলে দেখেন। এদিকে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহারের দাবিতে খালেদা জিয়ার কার্যালয় এলাকায় মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে স্থানীয় এমপি, সরকারদলীয় দুইটি সংগঠন ও দুইটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টায় কার্যালয়ের দক্ষিণ পাশে বাড্ডা গার্লস হাই স্কুলের শতাধিক শিক্ষার্থী মানববন্ধন করেন। পরে বেলা ১১টা ১৫ মিনিটের দিকে বিএনএফ সভাপতি ও গুলশান এলাকার এমপি আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে কার্যালয়ের গেটের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন অর্ধশতাধিক লোক। ৪৫ মিনিট অবস্থান করে তারা চলে যান। বেলা ১২টার দিকে কার্যালয় এলাকার ৯০ নম্বর সড়কে মুজিব সেনা ঐক্য লীগের প্রায় শতাধিক কর্মী একটি বিক্ষোভ করে। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কার্যালয়ের উত্তরদিকে মানববন্ধন করেন কালা চাঁদপুর হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের শতাধিক শিক্ষার্থী। তারা ৩০ মিনিট অবস্থান করে চলে যান। ঠিক একই সময় কার্যালয়ের দক্ষিণ দিকে বিক্ষোভ করে তাঁতী লীগের নেতাকর্মীরা। এদিকে বিকালে ছড়াকার ও সাংবাদিক আবু সালেহ’র নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে কার্যালয়ের সামনে যান। তবে পুলিশ তাদের জানিয়ে দেয়, কাউকে কার্যালয়ে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। এরপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবু সালেহ চলে যান। উল্লেখ্য, সপ্তাহখানেক ধরে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে কোন নেতাকর্মী ও নাগরিকদের প্রবেশ করতে দিচ্ছে না পুলিশ। তবে খালেদা জিয়ার আত্মীয়স্বজনরা প্রবেশ করতে পারছেন।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়ে চিঠি দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে গঠিত মোর্চা। আইন ও সালিশ কেন্দ্রসহ ওই মোর্চাভুক্ত প্রায় ৫৭টি মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকে চিঠিটি দেয়া হয়। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশন (এফবিএইচআরও) সংগঠনের আহ্বায়ক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. মো. শাহজাহান স্বাক্ষরিত চিঠিটি গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে পৌঁছে দেন নাগরিক অধিকার স্বাধীনতা সংগঠনের নির্বাহী সভাপতি আজমেরি বেগম ছন্দা। এ সময় আজমেরি বেগম ছন্দা সাংবাদিকদের বলেন, দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসন, সহিংসতারোধ ও গণমানুষের অধিকার সংরক্ষণের জন্য আমরা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিঠি দিলাম। খুব শিগগিরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও ওই একই চিঠি দেয়া হবে।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন তুরস্কের রাষ্ট্রদূত হোসাইন মুফতুগলু। গতকার বিকাল পৌনে ৫টায় তিনি খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে যান। দীর্ঘ এক ঘণ্টা সাক্ষাৎ শেষে বিকাল ৫টা ৫০ মিনিটে তিনি কার্যালয় থেকে বের হন। তবে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতে কী বিষয়ে কথা হয়েছে এ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোন কথা বলেননি মুফতুগলু। কার্যালয় সূত্র জানায়, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে তারা কথা বলেছেন।