মেহেরপুর গাংনীর মাথাভাঙ্গা নদীতে আবারো বালি উত্তোলন

ভাঙনের মুখে নদীপাড়ের বাড়িঘর ফসলি জমি

 

মাজেদুল হক মানিক: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চরগোয়াল গ্রামসহ কয়েকটি স্থানে মাথাভাঙ্গা নদীতে ড্রেজিং দিয়ে বালি উত্তোলন করছেন কয়েকজন বালিব্যবসায়ী। এতে অব্যাহত ভাঙনের মুখে পড়েছে নদীপাড়ের বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। তারপরও আইনকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে দেদারছে চলছে বালি উত্তোলন ও বিক্রি।

Gangni Balu Uttolon pic_ (7)

জানা গেছে, গাংনী উপজেলার প্রধান নদী মাথাভাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে প্রতিবছর বালিব্যবসায়ীরা ড্রেজিং দিয়ে বালি উত্তোলন করে থাকেন। এর ধারাবাহিকতায় এবারো শুরু হয়েছে এসব ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা। এ উপজেলার চরগোয়াল গ্রামের হাশমত আলীর বাড়ির পাশে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলছেন পার্শ্ববর্তী মটমুড়া গ্রামের বকুল হোসেন। এছাড়াও একই গ্রামের পাশে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার কয়েকজন বালিব্যবসায়ী একই কায়দায় বালি উত্তোলন করছেন।

চরগোয়াল গ্রামের বয়োবৃদ্ধ হাশেম আলী বিশ্বাস জানান, নদী পাড়ে চরগোয়াল গ্রাম ও প্রধান সড়ক। প্রতিবছর বালি উত্তোলনের ফলে নদীতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাড়ি-ঘর ও গাছপালা হুমকির সম্মুখিন হয়ে পড়েছে। নদীর দৌলতপুর উপজেলার অংশের পাড়ে ভাঙনের ফলে প্রতি বছর ফসলি জমি ক্ষতি হচ্ছে।

স্থানীয়রা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরো জানান, বকুল হোসেন স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের সহায়তায় দেদারছে অবৈধ বালির ব্যবসা চালিয়ে গেলেও প্রতিবাদ করতে পারছেন না ভুক্তভোগীরা। তাই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আগেই বালি উত্তোলন স্থায়ীভাবে বন্ধে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ দাবি করলেন তারা।

মাথাভাঙ্গা নদী গাংনী ও কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলাকে বিভক্ত করেছে। নদীর এপারে গাংনী ও ওপারে দৌলতপুর উপজেলার প্রভাবশালী কয়েকজন গত কয়েক বছর ধরে বালি উত্তোলনের কাজের সাথে জড়িয়ে পড়েছেন। চরগোয়াল গ্রামে বকুল হোসেন যেখানে ড্রেজার স্থাপন করেছেন তার বিপরীতে দৌলতপুর উপজেলার নাটনাপাড়া গ্রামের মহির উদ্দীনসহ কয়েকজন ড্রেজার স্থাপন করেছেন। একেকটি ড্রেজার থেকে প্রতিদিন প্রায় ২৫-৩০ ট্রাক বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। বর্তমানে ইট পোড়ানো ও রাস্তাঘাট নির্মাণের মরসুম তাই বালির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে চড়া দামে বিক্রি করছেন বালি উত্তোলনকারীরা।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলাঙ্গি নামক স্থান থেকে পদ্মা নদীর শাখা নদী হিসেবে মাথাভাঙ্গা নদীর উৎপত্তি। উৎপত্তি স্থল থেকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ধর্মদহ গ্রাম দিয়ে এদেশে প্রবেশ করে গাংনী উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চুয়াডাঙ্গার ভৈরব নদীর সাথে মিশেছে মাথাভাঙ্গা নদী। গাংনী উপজেলার বড় একটি অংশ দিয়ে মাথাভাঙ্গা নদী প্রবাহিত। প্রতি বছর এ উপজেলার আমতৈল, কোদাইলকাটি, মটমুড়া, গোয়ালগ্রাম ও কাজিপুরে ড্রেজিং দিয়ে বালি উত্তোলন করা হয়। এতে গোটা গাংনী উপজেলার এলাকাতেই নদী ভাঙন হচ্ছে। অবশ্য প্রশাসন মাঝেমাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের মধ্যদিয়ে ড্রেজিং থামানোর চেষ্টা করছে। সম্প্রতি কাজিপুর গ্রামের বালি ব্যবসায়ী স্বপনকে ড্রেজিং দিয়ে বালি উত্তোলনের দায়ে ৪৮ হাজার টাকা জরিমানা ও ড্রেজার জব্দ করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর ডিসেম্বর মাস থেকে এসব বালি ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা শুরু হয়। নদীতে বৃষ্টির পানি না জমা পর্যন্ত বালি উত্তোলন চলে। তাই ড্রেজিং বন্ধের এখনই পদক্ষেপ নেয়ার দাবি করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

মাটি ও বালি রক্ষা আইন ২০১০ অনুযায়ী অবৈধভাবে ড্রেজিং করে বালি উত্তোলন করলে দু বছরের জেল ও পঞ্চাশ হাজার থেকে দু লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান করে মাথাভাঙ্গা নদীর ড্রেজিং বন্ধ করা হবে বলে জানালেন গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল আমিন।