হরিণাকুণ্ডুর রবিউল হত্যামামলার আসামিরা প্রকাশ্যে :বাদীকে মামলা দিয়ে হয়রানি!

 

ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ভেড়াখালী গ্রামে চাঞ্চল্যকর রবিউল ইসলাম হত্যামামলার বাদীকে উল্টো গরু চুরির মামলা দিয়ে হয়রানি করছে পুলিশ। পুলিশ হত্যামামলার আসামিদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে মামলার বাদী নাজিম উদ্দীন মণ্ডল ও সাক্ষীদের পুলিশ হয়রানি করছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। রবিউল হত্যামামলার ছয় আসামিদের মধ্যে একজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বাকি পাঁচজন পুলিশি ছত্রছায়ায় থেকে বাদীপক্ষকে মামলা তুলে নিতে চাপ দিচ্ছে।

তবে বাদীর এ অভিযোগ অস্বীকার করে হরিণাকুণ্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এরশাদুল কবীর চৌধূরী জানান,হত্যা পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখার কারণে একটি মহল এই অপপ্রচার চালাচ্ছে। রবিউল হত্যার আসামিদের ক্ষেতের ফসল,ঘরবাড়ি ও সম্পদ যাতে তছরুপ না হয় সে ব্যাপারে পুলিশ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এতে বাদী পক্ষের লোকজন সন্তুষ্ট নয়।

সরেজমিনে হরিণাকুণ্ডুর ভেড়াখালী গ্রামে গিয়ে স্থানীয় গ্রাম্য চিকিৎসক আতিয়ার রহমানের সাথে কথা বললে তিনি জানান,একই গ্রামের জিন্নাত আলীর স্ত্রী রুশিয়া বেগমের সাথে প্রতিবেশী রবিউল ইসলামের মাদকের ব্যবসা ছিলো। সেই সূত্র ধরে রুশিয়া এবং রবিউলের মধ্যে পরকীয়া ও দৈহিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি জানাজানি হয়ে পড়লে রুশিয়া ও তার স্বামী জিন্নাত আলী প্রতিবেশী রবিউলকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। তিনি আরো জানান,বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়ে গত ১১ জুলাই রবিউলকে নিয়ে যাওয়া হয় রুশিয়ার ভগ্নিপতি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কালুপোল গ্রামের নবিছদ্দিনের বাড়িতে। ওই রাতেই আসামিরা দেহ থেকে মস্তক বিচ্ছিন্ন করে রবিউলকে হত্যা করে শঙ্কচন্দ্র ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া কেরু কোম্পানির আখক্ষেতে লাশ লুকিয়ে রাখে। এ বিষয়ে রবিউলের পিতা নাজিমুদ্দীন হরিণাকুণ্ডু থানায় অভিযোগ করলে গত ১৫ জুলাই রুশিয়া খাতুনকে আটক করে পুলিশ। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে রুশিয়া রবিউলকে হত্যার কথা স্বীকার করে। ভেড়াখালী গ্রামের আমজাদ হোসেন অভিযোগ করেন,চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় হত্যামামলা দায়ের করার পর থেকেই পুলিশের সাথে আসামিদের সখ্যতা গড়ে ওঠে। ফলে আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না।

তিনি আরো জানান,হরিণাকুণ্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এরশাদুল কবীর চৌধূরী আসামিদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে উল্টো বাদীর বিরুদ্ধে গরু চুরি ও পানবরজ কাটার মামলা করিয়েছেন। নিহত রবিউলের ভাই টিটো মিয়া জানান,হত্যামামলার আসামি আব্দার আলী,জিন্নাত আলী,রুস্তম ও রুবেল পাশ্ববর্তী শুড়া গ্রামে অবস্থান করলেও পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না। আসামিদের গ্রেফতার না করে উল্টো বাদী ও তার পরিবাররের লোকজনকে পুলিশ রাতে এসে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে এবং মামলা মিটিয়ে ফেলার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে।

মামলার বাদী নাজিমুদ্দীন অভিযোগ করেন,আমরা আওয়ামী লীগ সমর্থন করলেও হত্যা মামলার আসামিরা প্রভাব ও অর্থশালী বলে পুলিশ তাদের সহায়তা করছে। এতে আমরা নিরাপত্তহীনতায় ভুগছি।

এদিকে রবিউলের স্ত্রী গিনি বেগম ও মা মনোয়ারা খাতুন জানান,পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হত্যা করায় তাদের পরিবারে চরম দুর্দাশা নেমে এসেছে। দুটি মেয়ে রুবা ও মুক্তাকে নিয়ে হতাশায় দিন কাটছে স্বামীহারা গিনি বেগমের। তিনি হত্যাকারীদের গ্রেফতারপূর্বক ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চুয়াডাঙ্গা সদর থানার উপপরিদর্শক সেকেন্দার আলী জানান,আসামিদের ধরতে হরিণাকুণ্ডু থানা পুলিশকে অনুরোধ করে পত্র দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু হরিণাকুণ্ডু থানা থেকে বলা হয়েছে আসামিদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হরিণাকুণ্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এরশাদুল কবীর চৌধূরী বাদীর অভিযোগ অস্বীকার করে জানান,পুলিশ হত্যা পরবর্তী লুটপাট ও ভাঙচুর ঠেকাতে পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে তো সব পক্ষের মন রক্ষা করা সম্ভব নয়। তিনি আরো জানান,এ হত্যার সাথে একমাত্র রুশিয়া খাতুন জড়িত। বাকিদের নাম হয়রানি করার জন্য দেয়া হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।