আলমডাঙ্গার হাড়োকান্দির শিশুহত্যা রহস্য উন্মোচন করতে উদ্যোগ

 

বাদী হয়ে মামলা করবেন ভুন্দির মা সাবিনা

স্টাফ রিপোর্টার: আলমডাঙ্গার হাড়োকান্দি গ্রামের শিশু শিক্ষার্থী জান্নাতুল আরার মৃত্যুরহস্য উদঘাটনে এনজিও সংস্থা মানবতা সোচ্চার হয়ে উঠছে। পরিবারের কেউ মামলা না করলে এ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক অ্যাড. মানি খন্দকার বাদী হয়ে আগামীকাল আদালতে মামলা করবেন। তবে ভুন্দির মা সাবিনা বেগম এবং ভুন্দির পালনকারী ভাবী শাহানাজ পারভীনও মামলা করতে চেয়েছেন। এতোদিনে তারা বুঝতে পেরেছেন ভুন্দিকে হত্যা করা হয়েছে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলাধীন আইলহাস ইউনিয়নের হাড়োকান্দি গ্রামের দরিদ্র আবুল কাশেমের মেয়ে জান্নাতুল আরা ওরফে ভুন্দি (১০) হাড়োকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ছিলো। সে গত ৩১ আগস্ট রোববার সকাল ৬টার দিকে গ্রামের নুড়িতলা মাঠে তাল কুড়োতে যায়। এরপর থেকে সে নিখোঁজ হয়। তাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করে পাওয়া যায় না। গুজব ছড়ানো হয় তাকে জিনে নিয়ে গেছে। স্থানীয় মাদরাসার শিক্ষক হাবিবুর রহমান এ গুজব ছড়ান এবং জিন হাসিল করার কথা বলে অপপ্রচার চালান। পরদিন ১ সেপ্টেম্বর নুড়িতলার মাঠের একটি পুকুর থেকে ভুন্দির লাশ উদ্ধার করা হয়। গুঞ্জন ওঠে ভুন্দির চাচাতো ভাই জাকির হোসেন ভুন্দিকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করেছে। লাশের সুরাতহাল রিপোর্ট করার সময় এ গুঞ্জন শোনার পরও আলমডাঙ্গা থানার এসআই জিয়াউল হক জিয়া লাশ দাফনের অনুমতি দেন। বিষয়টি নিয়ে সচেতন মহলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। গ্রামবাসীরা দাবি তোলে হত্যারহস্য উন্মোচনের জন্য। গ্রামের মৃত সন্ন্যাসী কুমারের ছেলে ভ্যানচালক মদন কুমার সাধু খা জানান, জাকির ও ভুন্দিকে এক সাথে তালগাছ তলায় দেখেছিলেন তিনি। এ কথা শোনার পার গ্রামবাসীর মধ্যে ধর্ষণ শেষে ভুন্দিকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা আরো স্পষ্ট হয়। তবে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে না মদন ও মাদরাসার শিক্ষক হাবিবুর রহমান। ভুন্দির লাশ দাফনের পর সচেতন গ্রামবাসী ফুঁসে ওঠে। তার সহপাঠীরাসহ আশপাশ তিনটি বিদ্যালয়ের শ শ শিক্ষার্থী হত্যারহস্য উন্মোচনের দাবিতে গত ৪ সেপ্টেম্বর মানববন্ধন করে। মাদরাসা শিক্ষক হাবিবুর রহমান গাঢাকা দেন বলে গ্রামবাসী জানায়। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ বলেছে, হাবিবুর রহমান ছুটিতে আছেন। গত বৃহস্পতিবারে তার ফেরার কথা থাকলেও গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত তিনি আসেননি।

হাড়োকান্দি গ্রামের দরিদ্র আবুল কাশেমের ৩ মেয়ে ২ ছেলে। ভুন্দি এবং তার ভাই পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মারুফ হোসেন যমজ ভাই-বোন। এক বছর বয়স থেকেই ভুন্দিকে লালন পালন করেন একই গ্রামের গিয়াস উদ্দিন ডাবলুর স্ত্রী ভুন্দির ভাবী সম্পর্কের শাহানাজ পারভীন। শাহানাজ পারভীনের কোনো সন্তান না থাকায় তিনি ভুন্দিকে মেয়ের মতো লালন পালন করছেন। ভুন্দি মানসিক প্রতিবন্ধী ছিলো বলে পুলিশ দাবি করলেও শাহানাজ পারভীন তা উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন সব মিথ্যে কথা। গতকাল শুক্রবার এ প্রতিবেদকের সাথে তিনি বলেন, তাকে নিজের সন্তানের মতো করে মানুষ করছিলাম। সে কোনো রকম প্রতিবন্ধী ছিলো না। তার হত্যারহস্য চাপা দেয়ার জন্যই এসব আজগুবি কথাবার্তা প্রচার করা হচ্ছে। তিনি বলেন ভুন্দির মা-বাবা যদি মামলা না করেন প্রয়োজনে আমি নিজেই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবো।

ভুন্দি হত্যার ব্যাপারে তার বড় বোন আমেনা খাতুন ও দুলাভাই আবু সাইদ ওরফে সাইদুর গ্রামের গিয়াস উদ্দিন ডাবলু ও আব্দুল হান্নান দুলুকে সাথে নিয়ে গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে আলমডাঙ্গা থানায় যান মামলা করার জন্য। কিন্তু পুলিশ মামলা নেয়নি বলে তারা এ প্রতিবেদককে জানান।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গার মানবতা সংস্থার ৭ সদস্যের একটি টিম হাড়োকান্দি গ্রামে যায়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মানবতার নির্বাহী পরিচালক অ্যাড. মানি খন্দকার, তথ্য কর্মকর্তা অ্যাড. নওশের আলী, গণসংযোগ কর্মকর্তা হাফিজ উদ্দীন হাবলু, নির্বাহী সদস্য অ্যাড. জিল্লুর রহমান জামাল, মানবাধিকারকর্মী নারীনেত্রী মনিরা আফরোজ, সাধারণ সদস্য জাকির হোসেন ও আলমগীর হোসেন। তারা ভুন্দির পরিবারসহ গ্রামের অনেকের সাথেই এ ব্যাপারে কথা বলেন। ভুন্দির মা আগামী রোববার আদালতে মামলা করবেন বলে সম্মত হয়েছেন।

মানবতার নির্বাহী পরিচালক অ্যাড. মানি খন্দকার দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, ভুন্দির মা মামলা না করলে রোববার আমি নিজেই বাদী হয়ে মামলা করবো। ভুন্দি হত্যারহস্য উন্মোচন করবোই।