সফট ড্রিংকসের সাথে বিষ মিশিয়ে হত্যা করা হয় দু কিশোরীকে

স্টাফঢ রিপোর্টার: চারদিকে নীরবতা। মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ছোট্ট বাজারের পাশে পুকুর পাড়ে নীরবতা ভেদ করে চিৎকারের শব্দ ভেসে আসে! কিছুক্ষণ পরে এলাকাবাসী দেখতে পায় দুটি ছেলে দুটি মেয়েকে পাঁজাকোল করে ভ্যানে তুলে নিয়ে যাচ্ছে হাসপাতালে। হাসপাতালে নেয়ার পরেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া দু স্কুলছাত্রী। গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সাতজনের নাম উল্লেখ করে ও কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়েছে। নিহত এক কিশোরীর পিতা বিল্লাল শিকদার বাদী হয়ে গতকাল সদর থানায় মামলা করেছেন।

গতকাল সকালে সরজমিন মস্তফাপুর গ্রামে গিয়ে জানা গেছে, সুমাইয়া ও হেপী মস্তফাপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। সুমাইয়া মস্তফাপুর গ্রামের বেল্লাল শিকদারের মেয়ে এবং হেপী একই এলাকার হাবিব খানের মেয়ে। দুজনে এক সঙ্গে স্কুলে যেত, অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল দুজনের সঙ্গে। বৃহস্পতিবার দুপুরে খাবার খেয়ে প্রাইভেট পড়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয় দুই বান্ধবী। এরই মধ্যে সন্ধ্যার মধ্যে আকাশ ভেঙে দুই পরিবারের কাছে খবর আসে মৃত্যুর। দুই স্কুলছাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনা এখন রহস্য দানা বেঁধেছে। উভয় পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ধর্ষণের পরেই জোরপূর্বক বিষপানে হত্যা করা হয় দুই স্কুলছাত্রীকে। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে রহস্য উদঘাটনের কাজ শুরু করেছে পুলিশ ও সিআইডি। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, সফট ড্রিংকসের সাথে বিষ মিশিয়ে হত্যা হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় রানাকে প্রধান আসামি করে ৬ জনের নামে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় মস্তফাপুর বাজারের দর্জি দোকানদার সূর্য বেগম বলেন, বিকালে আমি দোকানে এসে চিৎকারের শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখি দুইটি ছেলে দুটি মেয়েকে অচেতন অবস্থায় কোলে তুলে ভ্যানে নিয়ে যাচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শী আরেক দোকানদার জাহাঙ্গীর নাগাছি জানান, বিকালে আমি দেখি দুইটি ছেলে দুটি অসুস্থ মেয়েকে ভ্যানে তুলে হাসপাতালের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
নিহত সুমাইয়ার মা আসমা বেগম জানান, আমার এক সুমাইয়া মারা গেছে। যদি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার হয় তাহলে হাজারো সুমাইয়া বেঁচে যাবে। আমি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, যেন আমার সুমাইয়ার মতো কোন মেয়েকে অকালে প্রাণ হারাতে না হয়। নিহত হেপীর চাচি কেয়া বেগম ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
সুমাইয়ার পিতা বেল্লাল শিকদার দাবি করেন, তার মেয়েকে শারীরিক নির্যাতন করে খুন করা হয়েছে।

মস্তফাপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বোরহান উদ্দিন খান জানান, গত তিন দিন ধরে তারা স্কুলে অনুপস্থিত। তবে তারা মেধাবী ও শান্ত স্বভাবের ছিল। ঘটনার পর পুলিশ শুক্রবার সকালে একই গ্রামের রানার মা সালমা বেগম এবং মেহেদির মা রহিমা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে সদর থানার পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই মেহেদি ও রানাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা পলাতক আছে। ধারনা করা হচ্ছে এ ঘটনার সাথে রানা ও মেহেদি জড়িত। রানা একই এলাকার শওকত খলিফার ছেলে এবং মেহেদী ফজলুল কবিরের ছেলে।
গতকাল আটককৃত শিপন ও রাকিব জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, মেহেদি ও রানা নিহত দু স্কুলছাত্রীকে ভ্যানে করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে দেখে তারা হাসপাতালে আসে।

মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শফিকুল ইসলাম রাজিব বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর বিস্তারিত জানা যাবে। তবে প্রাথমিকভাবে সুমাইয়ার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে আঘাতের চিহ্ন ছিল।
মাদারীপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন জানান, এ ঘটনায় সুমাইয়ার পিতা বেল্লাল শিকদার বাদী হয়ে রানা ও মেহেদীসহ ৬ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, প্রাথমিক ময়নাতদন্তে জানা গেছে, সফট ড্রিংকসের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে খাওয়ানো হয়েছে। এতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের লাশ ময়নাতদন্ত করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হবে। যাতে কোন নিরীহ ব্যক্তি হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।