বখশিসের নামে একরাতে ২ হাজার ৭শ টাকা আদায়

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডের অবৈধ অর্থ বাণিজ্য বন্ধ হয়নি

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডের নার্স-আয়ারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। বখশিসের নামে জোরপূর্বক টাকা আদায়ের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করার পরও তাদের এ বাণিজ্য থেমে নেই। বৃহস্পতিবার গভীররাতে এ ওয়ার্ডের নার্স তরুলতা ও আয়া আরজিনা ৫ জনের কাছ থেকে ২ হাজার ৭শ টাকা আদায় করেন। রাতেই রোগীর লোকজন সাংবাদিকদের কাছে জোরপূর্বক টাকা আদায়ের অভিযোগ করেন। সেগুলো সাংবাদিকরা ক্যামেরা ও ভিডিও ধারণ করেন তারা।

সূত্র জানায়, গাইনি ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ তরুলতা গত মঙ্গলবার রাতে আলুকদিয়া আকন্দবাড়িয়ার এক রোগীর কাছ থেকে বখশিসের নামে জোরপূর্বক ৭শ টাকা আদায় করেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ ব্যাপারে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি কাজ করছে। এরই মধ্যে সব কিছু থোড়ায় কেয়ার করে ওই ওয়ার্ডে জোরপূর্বক টাকা আদায় অব্যাহত রয়েছে। দীর্ঘদিনের এ বাণিজ্য তারা ভুলতে পারছেন না। গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে সাড়ে ১২টার মধ্যে গাইনি ওয়ার্ডে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পাঁচ রোগীর কাছ থেকে ২ হাজার ৭ শ টাকা আদায় করেন ওয়ার্ডে দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্স ও আয়া। চুয়াডাঙ্গা জালশুকার মোমিনের স্ত্রী রাশিদা খাতুন পুত্রসন্তান প্রসব করেন বৃহস্পতিবার রাতে। বখশিস বাবদ তার কাছ থেকে নেয়া হয় ৮শ টাকা। রাশিদার মা সফুরা খাতুন সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন ক্লিনিকে গেলে টাকা। সরকারি হাসপাতালেও টাকা। তাহলে আমরা গরিব মানুষ যাবো কোথায়? আলুকদিয়া ইউনিয়নের পীরপুর গ্রামের সুমনের স্ত্রী মৌসুমীর পুত্র সন্তান হলে দাবি করা হয় ১ হাজার টাকা। তারা দরিদ্র হওয়ায় শেষমেশ ৬ শ টাকায় রফা হয়। মৌসুমীর দাদি জারেকা খাতুন সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, আমরা গরিব মানুষ বলে সরকারি হাসপাতালে আসি। কিন্তু এ হাসপাতালে কথায় কথায় টাকা লাগে। টাকা না দিলে আজেবাজে কথা বলা হয়। এ ওয়ার্ডে যতো রোগী ভর্তি হয় সবার কাছ থেকেই একটি করে বড় লাক্স সাবান কিনিয়ে নেয়া হয়। সাবান কয়টা লাগে? আলমডাঙ্গার খাদিমপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের রাকিবের স্ত্রী রূপালী খাতুন কন্যা সন্তান প্রসব করেন। তার কাছে ১ হাজার টাকা দাবি করা হয়। তিনি ১শ টাকা দিতে গেলে তা নিয়ে আয়া আজেবাজে গালি দেন। বাধ্য হয়ে তারা ৪শ টাকা দেন। একই উপজেলার বেলগাছি ইউনিয়নের কেদারনগর গ্রামের আলাউদ্দিনের স্ত্রী শাহানারা কন্যা সন্তান প্রসব করেন। তার কাছেও বখশিস বাবদ ১ হাজার টাকা দাবি করা হয়। তিনি শেষমেশ ৩শ টাকা দিয়ে রেহাই পান। দামুড়হুদা উপজেলার দলকা লক্ষ্মীপুর গ্রামের তহিরুল ইসলামের স্ত্রী ইকোমা খাতুনের ছেলে হয়। তার কাছ থেকে বখশিসের নামে আদায় করা হয় ৬ শ টাকা।

অভিযোগ রয়েছে, গাইনি ওয়ার্ডে বখশিসের নামে জোরপূর্বক টাকা আদায় একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। তাই এতো সহজেই এ ওয়ার্ড থেকে টাকা আদায় বন্ধ হবে না। এখানে টাকা আদায়ের কৌশলও বেশ আলাদা। নার্সরা সরাসরি টাকা আদায়ের ভূমিকায় থাকেন না। তারা ওয়ার্ডের আয়া ও সুইপারকে দিয়ে জোরপূর্বক টাকা আদায় করিয়ে থাকেন। কিন্তু ভাগের সময় নার্সরা পদমর্যাদা অনুযায়ী বেশি নেন। গত বৃহস্পতিবার এ ওয়ার্ডে এ ধরনের চিত্রই ফুটে ওঠে। নার্স তরুলতা বললেন, আমি টাকা পয়সা নিইনি। তবে আয়া ও সুপার নিয়েছে। পাঁচ জনের কাছ থেকে আদায় করা ২ হাজার ৭ শ টাকা ফেরত দিতেও চান তারা। কিন্তু শেষমেশ আর ফেরত দেননি।

অভিযোগ রয়েছে, এ ওয়ার্ডে প্রসূতি রোগী ভর্তি হলেই তাদের কাছ থেকে একটি করে বড় লাক্স সাবান আদায় করা হয়। পরে সেগুলো ওয়ার্ডে দায়িত্বরত নার্স ও আয়া-সুইপাররা ভাগ করে নেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চুয়াডাঙ্গার একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি জানান, জোরপূর্বক টাকা আদায় করা অন্যায়। তাছাড়া চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল আমাদের সকলের সম্পদ। এখানে দরিদ্র রোগীরা ভর্তি হয়ে হয়রানির শিকার হবে এটা খুবই লজ্জার। হাসপাতাল এলাকার ভুক্তভোগী অনেকেই সাংবাদিকদের জানান, হাসপাতালে জনবল সমস্যা থাকার পরেও সিভিল সার্জন ডা. আজিজুল ইসলাম ও আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মাসুদ রানা সদর এটাকে পরিচ্ছন্ন হাসপাতাল গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করছেন, কিন্তু কতিপয় অর্থলোভী কর্মচারীর ছোটখাটো ত্রুটি ম্লান করে দিচ্ছে ভালো কাজগুলো। বিষয়টি খতিয়ে দেখে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে চুয়াডাঙ্গাবাসী মনে করে।