বেপরোয়া ছাত্রলীগে অস্থির শিক্ষাঙ্গন

সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ গোয়েন্দা সংস্থার

 

স্টাফ রিপোর্টার: ছাত্রলীগ নামধারী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া তাণ্ডবে দেশের শিক্ষাঙ্গন আবারো অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। টেন্ডারবাজি, হলের সিট দখল, আধিপত্য বিস্তার এবং ভর্তিবাণিজ্যকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সংঘাত-সংঘর্ষের জের ধরে ইতোমধ্যে দিনাজপুরের হাজি মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেটের শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রায় একডজন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বাড়ছে প্রাণহানিসহ হতাহতের সংখ্যাও। উচ্চ বিদ্যাপীঠের এই উত্তাপ সহসাই দেশের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষাঙ্গনে ছড়িয়ে পড়তে পারে- এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এ ব্যাপারে সরকারকে সর্বোচ্চ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেছে। গোয়েন্দাদের ওই প্রতিবেদনে উদ্বেগজনক এই পরিস্থিতির জন্য বেপরোয়া ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, অর্থলিপ্সা এবং রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষকে দায়ী করা হয়েছে। দেশের শিক্ষাঙ্গনে উত্তাপ ছড়ানোর বিশেষ টার্গেট নিয়ে শিবিরের পাশাপাশি কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এ অপতৎপরতা চালাতে পারে বলেও গোয়েন্দারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উচ্চ বিদ্যাপীঠে চলমান সংঘাত যে কোনো মুহূর্তে ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্যদিয়ে দীর্ঘসময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যেতে পারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ দেশের সরকারি কলেজগুলোর একটি বড় অংশ।

স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) এবং জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দাসহ (এনএসআই) তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা একই আশঙ্কা প্রকাশ করে পৃথক প্রতিবেদন দাখিল করেছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে এ ব্যাপারে প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে এ সঙ্কট মোকাবেলার সুপারিশ রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রগুলো দাবি করেছে, ছাত্রদলের বঞ্চিত ও বিদ্রোহী গ্রুপ কৌশলে ছাত্রলীগের সাথে মিশে ক্যাম্পাস পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছে। তাদের ফ্রন্টলাইনে রেখে ছাত্রলীগের বঞ্চিত ক্যাডাররা ক্যাম্পাসে নিজেদের জায়গা করে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ নিয়ে ক্যাম্পাস ক্যাডারওয়ার্ল্ডে চলছে বড় ধরনের সংঘর্ষের প্রস্তুতি। শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো গোয়েন্দাদের এই আশঙ্কার সঙ্গে একমত পোষণ করে জানিয়েছে, গত টার্মে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পরপরই দেশজুড়ে শিক্ষাঙ্গনে যে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী হানাহানি শুরু হয়েছিলো, পরিস্থিতি আবারো সেদিকেই এগোচ্ছে।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রায় অর্ধশত সরকারি-বেসরকারি কলেজের ছাত্র সংগঠনগুলোতে চরম অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই তালিকায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, তিতুমীর কলেজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, গাজীপুরের টঙ্গী কলেজ, রাজশাহীর সিটি কলেজ, খুলনার বিএল কলেজ, চট্টগ্রামের সিটি কলেজ ও কমার্স কলেজ, কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজ এবং বরিশালের বিএম কলেজ রয়েছে। প্রতিবেদনে এসব বিদ্যাপীঠে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।