ফাঁসি কার্যকর নিয়ে গোলকধাঁধা

স্টাফ রিপোর্টার: জামায়াত নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা নিয়ে এক ধরনের গোলকধাঁধার সৃষ্টি হয়েছে। আইনমন্ত্রী গত শনিবার বলেছেন, রায় ঘোষণার সাত দিনের মধ্যে আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমাভিক্ষা চাইতে পারেন। রায়ের কপি কারাগারে পৌঁছুলেই রায় কার্যকর করা হবে। ৫ নভেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, সরকার চাইলেই কামারুজ্জামানের দণ্ড কার্যকর করা সম্ভব। এক্ষেত্রে আইনি কোনো বাধা নেই। গতকাল রোববার অ্যাটর্নি জেনারেল তার আগের বক্তব্য থেকে কিছুটা সরে এসে বলেন, আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বা সংক্ষিপ্ত রায়ে দেওয়া নির্দেশনা অনুসারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে। বিষয়টি এখন সম্পূর্ণভাবে আদালতের ওপর নির্ভর করছে।

জামায়াত নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা নিয়ে এক ধরনের গোলকধাঁধার সৃষ্টি হয়েছে। আইনমন্ত্রী গত শনিবার বলেছেন, রায় ঘোষণার সাত দিনের মধ্যে আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমাভিক্ষা চাইতে পারেন। রায়ের কপি কারাগারে পৌঁছুলেই রায় কার্যকর করা হবে। ৫ নভেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, সরকার চাইলেই কামারুজ্জামানের দণ্ড কার্যকর করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে আইনি কোনো বাধা নেই। গতকাল রোববার অ্যাটর্নি জেনারেল তার আগের বক্তব্য থেকে কিছুটা সরে এসে বলেন, আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বা সংক্ষিপ্ত রায়ে দেওয়া নির্দেশনা অনুসারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে। বিষয়টি এখন সম্পূর্ণভাবে আদালতের ওপর নির্ভর করছে।

এদিকে আসামিপক্ষের একজন আইনজীবী বলেছেন, আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ের সার্টিফায়েড কপি হাতে পাওয়ার পর রিভিউ আবেদন দায়ের করা হবে। রিভিউ আবেদনটি নিষ্পত্তি হলে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তার মতে, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী জেলকোডের অপব্যাখ্যা করেছেন।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র সমকালকে জানিয়েছে, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে অতীতে যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে এ ক্ষেত্রে তার কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। সে ক্ষেত্রে রায় কার্যকরে বিলম্ব হতে পারে।

মৃত্যুদ কার্যকর করতে সংক্ষিপ্ত বা পূর্ণাঙ্গ হোক, রায়ের কপি আসামিকে দেখানো উচিত বলে মনে করেন প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক। তিনি বলেন, রায়ে ফাঁসি হয়েছে, তা আসামিকে জানাতে হবে। এর পর আসামি ক্ষমা চাইবেন কি-না, তার সিদ্ধান্ত। রায়ের কপি দেখেই আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবেন উল্লেখ করে সাবেক এই অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রায়ের কপি না পেলে রিভিউ হবে না। কারণ, তা আইনে নেই।

এ বিষয়ে বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক সমকালকে বলেন, কামারুজ্জামানের দণ্ড কার্যকরের দায়িত্ব কারা কর্তৃপক্ষের। কারা কর্তৃপক্ষ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণায়ের অধীন। এখানে আইন মন্ত্রণালয় বা অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের কোনো দায়িত্ব নেই। তবে আদালত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনগত সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই কামারুজ্জামানের দণ্ড কার্যকর করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে দেওয়া চূড়ান্ত আদেশের অনুলিপি স্বাক্ষরের পর তা বিচারিক আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ স্বাক্ষরের পর মৃত্যু পরোয়ানা হিসেবে জারি করবেন। সেটা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর পর সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেই জেল কোড অনুযায়ী দণ্ড কার্যকর করা হবে।

কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেন, কারা কর্তৃপক্ষের কাছে মৃত্যু পরোয়ানা পেঁৗছার পর নিয়ম অনুযায়ী তা মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিকে পড়ে শোনানো হয়। তা শোনার পর থেকে পরবর্তী সাত দিন রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করার সুযোগ পাবেন আসামি। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর দণ্ডাদেশ কার্যকর করতে হয়।

আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায়প্রাপ্তির ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হলে কিছুটা সময় লাগতে পারে বলে আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তাদের মতে, সংক্ষিপ্ত রায়ের ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে বেশিদিন অপেক্ষা করতে নাও হতে পারে।একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ড ৩ নভেম্বর আপিল বিভাগ বহাল রাখেন।

গতকাল অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ফাঁসির আসামি জামায়াত নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের রায় প্রকাশের পরই মৃত্যু পরোয়ানা জারি করা হবে। এর পর সেটা কারাগারে যাবে। তখন আসামিকে জানানো হবে, তার দ বহাল রয়েছে এবং পরোয়ানা এসে গেছে। তিনি বলেন, আপিল বিভাগ পূর্ণাঙ্গ নাকি সংক্ষিপ্ত রায় ট্রাইব্যুনালে (বিচারিক আদালত) পাঠাবেন, তা আপিল বিভাগের ওপরই নির্ভর করছে। এদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ের সার্টিফায়েড কপি হাতে পাওয়ার পর ৩০ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন দায়ের করা হবে। রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি হওয়ার পর রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সাংবাদিকদের সাথে আলাপচারিতায় মাহবুবে আলম আরও বলেন, জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার রায় রিভিউ আবেদন খারিজ করে আপিল বিভাগের দেয়া পূর্ণাঙ্গ আদেশের অনুলিপি প্রকাশ হলেই ‘রিভিউ’ করা নিয়ে অস্পষ্টতা থাকবে না। তার মতে, সংবিধানের ৪৭(ক) ধারা অনুযায়ী এ মামলায় রিভিউ চলবে না।

কামারুজ্জামানের রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী জেল কোডের অপব্যাখ্যা করেছেন বলে দাবি আসামিপক্ষের আইনজীবীর। গতকাল রোববার সুপ্রিমকোর্ট বার সমিতি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন আইনজীবী মুহম্মাদ শিশির মনির। এ সময় অ্যাডভোকেট মো. নজরুল ইসলাম, সাইফুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আপিল বিভাগ থেকে এখনও পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়নি। রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে আইনমন্ত্রী যে সময়সীমার কথা উল্লেখ করেছেন, তা বিভ্রান্তিকর।

তার মতে, আইনমন্ত্রী সুপ্রিমকোর্টের একজন ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ হয়েও জেল কোডের ৯৯১ ধারার অপব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, কামারুজ্জামান রায়ের সার্টিফায়েড কপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ আবেদন করবেন। এ আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি-না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।