পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতা ব্যাঙ্কশাল আদালতে সাজিদের আকুতি

বাংলাদেশে অপরাধ করেছি ইন্ডিয়ান হয়ে বাঁচতে চাই

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর: বাংলাদেশে বহু অপরাধে যুক্ত থাকার কথা স্বীকার করে এখন ভারতে থেকে প্রাণে বাঁচতে চাইছে বর্ধমান বিস্ফোরণ কাণ্ডের মূল হোতা সাজিদ খান। গতকাল রোববার কোলকাতার নগর দায়রা বা ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে বিচারক তার ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সাজিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতা, অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইন, মানি লন্ডারিং, ষড়যন্ত্র ও নাশকতার পরিকল্পনাসহ মোট ১৬টি ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

গতকাল বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে ব্যাঙ্কশাল আদালতের মুখ্য দায়রা বিচারক মহম্মদ মমতাজ খানের এজলাসে সাজিদ খানকে তোলা হয়। তার পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াননি। ফলে বিচারক সাজিদকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেন। সাক্ষ্যদানের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তাকে বক্তব্য জানানোর সুযোগ দেয়া হয়। ওই সময় এজলাসে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে নিজেকে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা দাবি করে সাজিদ জানায়, বাংলাদেশের নাগরিক হলেও প্রাণে বাঁচার জন্যই সে পালিয়ে এসেছিলো ভারতে। তার ভাষায়, স্যার আমি যে অপরাধ করেছি সবটাই বাংলাদেশে। এখানে কোনো অপরাধ করিনি। এখানে আমি ইন্ডিয়ান হয়েই থাকতে চাই। আমাকে সে সুযোগ দেয়া হোক।

সাজিদ খান জামাআতুল মুজাহিদীন-জুমের সক্রিয় নেতা এবং ২০১৪ সালের শুরু থেকেই সে ভারতে বিভিন্ন রাজ্যে ঘুরে বেড়ায়। এনআইএয়ের আইনজীবী দাবি করে, সে ভারতে আল-কায়েদাসহ বিভিন্ন জঙ্গি দলের সাথে মিশে গেছে বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। তাকে জেরা করে গোটা দেশের জঙ্গি নেটওয়ার্ক সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যেতে পারে, তাই তাকে ১৪ দিনের রিমান্ড দেয়া হোক। যদিও বিচারক শেষ পর্যন্ত ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ড দিয়েছেন।

এনআইএয়ের আইনজীবী শ্যামল কুমার ঘোষ ও সঞ্জয় বর্ধন জানান, ২০১৪ সালে সাজিদ ভারতে ঢোকে। এরপর বিভিন্ন রাজ্যে ঘুরে শেষে ডেরা বাঁধে পশ্চিমবঙ্গে। রাজ্যের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকায় থেকে বাংলাদেশি সিম ব্যবহার করে সে দু দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতো।

রাজ্য পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গ্রেফতার করার সময় সাজিদ নিজেকে বোরহান শেখ বলে পরিচয় দিয়েছিলো। কিন্তু এনআইএর গোয়েন্দাদের কাছে আগে থেকেই তার ছবি ছিলো। ফলে তার সে কৌশল কাজে আসেনি। এয়ারপোর্ট এলাকা থেকেই তাকে ট্র্যাক করা হয়। কুরিয়ারে বেশ কিছু টাকা আসছে এমন একটি ফোন করে কুরিয়ারম্যান সেজে গোয়েন্দারা সাজিদ খানকে গ্রেফতার করেন। ২ অক্টোবর বর্ধমানের খগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণে দু বাংলাদেশি জঙ্গি নিহত হয়েছিলো। ওই ঘটনার পরই তদন্ত শুরু করে পুলিশ এবং রাজ্যে সিআইডি। তবে ১০ দিনেও তেমন অগ্রগতি না হওয়ায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি-এনআইএ’র তদন্তভার নিয়ে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে এবং পরপর বেশ কয়েকটি জঙ্গি আস্তানা খুঁজে বের করে। বিশেষ করে বিপুলসংখ্যক গ্রেনেড উদ্ধার এনআইএয়ের বড় সাফল্য।

সাজিদ খান সম্পর্কে কলকাতার বিভিন্ন গণমাধ্যমে যে তথ্য এসেছে, তাতে দেখা গেছে, তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। ৪০ বছর বয়স। বাবার নাম সিদ্দিক মিয়া। ২০০৩ সালে রাজশাহীর কোদালমাঠি গ্রামে প্রথম জেএমবির সদস্য হিসেবে নাম লিখিয়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নেয় সে। জাল নোট, অস্ত্র এবং মাদক চোরাচালানের সাথে জড়ানোর মূল উদ্দেশ্য ছিলো, ভারতে তার মতো কাউকে খুঁজে বের করে এখানে বসেই বাংলাদেশে নাশকতা চালানো। সংগঠনের প্রতি আনুগত্য দেখে জেএমবির মজলিসে শূরার সদস্য হিসেবে নিয়োগ পায় সে। ২০০৭ সালে মুর্শিদাবাদের লালগোলায় চলে যায় সাজিদ খান। সেখানে শিমুলিয়া মাদরাসায় স্ত্রী ফাতেমা বিবিকে দিয়ে নারী জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজে হাত দেয় সে।