গঙ্গাদাসপুরের বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে ধারাবাহিক মিথ্যাচারের প্রতিবাদ

জীবননগরে আ. লীগ নেতা আব্দুল মালেক মোল্লার সাংবাদিক সম্মেলন

 

জীবননগর ব্যুরো: জীবননগর উপজেলার গঙ্গাদাসপুর গ্রামের বিরোধপূর্ণ জমি নিয়ে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে হানেফ-শাহাবুল গংদের ধারাবাহিক মিথ্যাচারের প্রতিবাদে গতকাল রোববার আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মালেক মোল্লা সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেন। জীবননগরে শহরের প্রধান সড়কে গতকাল রোববার সকালে গঙ্গাদাসপুরের শতাধিক নারী-পুরুষসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের উপস্থিতিতে আব্দুল মালেক মোল্লা লিখিত বক্তব্য পেশ করেন।

সীমান্ত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল মালেক মোল্লা তার লিখিত বক্তব্যে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরে বলেন, গঙ্গাদাসপুর গ্রামের ২০ নং মৌজার ১১৬ বিঘা জমি বিনিময় ও ক্রয়সূত্রে আক্কাছ আলী গোলদার, সাহাদত মণ্ডল, খোদাবক্স মণ্ডল, গোলাম রব্বানী, আক্কাছ আলী মণ্ডল, ইছাহক আলী মণ্ডল, ইব্রাহিম মণ্ডল, আব্দুল জলিল মণ্ডল, ছফুরা খাতুন, তকবারী মণ্ডল, লিয়াকত আলী, বিরাজ নেছা, মেহেরুন নেছা ও চেহেরুন নেছা। উল্লেখিত সকলেই ওই জমির সত্ত্ববান। তাদের নামে এসএ ও পরবর্তীতে তাদের ওয়ারিশগণের নামে আরএস রেকর্ড হয়। রেকর্ডধারী জমির মালিকগণ বাংলা ১৪২১ সাল পর্যন্ত ভোগদখলীয় জমির খাজনা পরিশোধ করেছেন।

হানেফ গং প্রচার করে যে, ২০১১ সাল থেকে গণ্ডগোল শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ ঘটনার জন্ম ১৯৮৫ সাল থেকে। তারা আরো প্রচার চালাচ্ছে, ৬২ পরিবার গ্রামছাড়া হয়েছে। ৬২টি পরিবারের মধ্যে ৪৭টি পরিবার গঙ্গাদাসপুর গ্রামেই বসবাস করছে। ১০টি পরিবারের ঘর-বাড়ি বিরোধপূর্ণ জমিতে থাকে আরো ৫টি পরিবার তাদের নিজ জমিতে গ্রামের ভেতর বসবাস করছে। কিন্তু ওই ১০ পরিবারের সাথে বাকি পরিবারের ৫টি পরিবার যুক্ত হয়ে ১৫টি পরিবারের সদস্যরা রাতের আঁধারে রেকর্ডীয় জমির মালিকদের ওপর হামলা করে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায়। গত ৩০ অক্টোবর একুশের চোখ অনুষ্ঠানে রেকর্ডীয় জমির মালিকদের হামলায় আহত হিসেবে রেজাউল, সাউরা খাতুন, সাইদা খাতুনকে দেখানো হয়েছে।

প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে- হানেফ-শাহাবুল গংদের দ্বারাই এরা আহত হয়েছিলো। এছাড়াও আরো ২০-২৫ জনকে তারা জখম করেছিলো। আহতরা চুয়াডাঙ্গা এবং ঢাকার পঙ্গু হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে গ্রামে ফিরে আসে। একুশের চোখে আইজেলের ছেলে মন্টু দাবি করে, আমবাগান কেটে তছরুপ করা হয়েছে। বস্তবে সে কোনো চাষাবাদের সাথে জড়িত নয়। সে টিনের ঘর ছাউনির কাজ করে। তারা ৫ ভাই মিলে ১০ কাঠা জমিতে বসবাস করে। জামার উদ্দীনের স্ত্রী সাইদা ওরফে ঘুঘু বলেছিলো, ৪০ জন মহিলা মেরে বিবস্ত্র অবস্থায় গ্রাম ছাড়া করে। তারা ঘরের কোনো মালামাল নিয়ে যেতে পারেনি। এ কথা মোটেও সত্য নয়। প্রকৃত ঘটনা দেনার দায়ে পাওনাদারদের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায় তারা। পাওনাদার ওসমান ও রাজন তাদের টাকা না পেয়ে ঘর-বাড়ির জানালা গেট খুলে নিয়ে যায়। হানেফ-শাহাবুল মালেক মোল্লার ক্যাডারদের ভয়ে থানায় কোনো মামলা দায়ের করতে পারেনি এ কথা ঠিক না। হানেফ গং জমির মালিকদের নামে ৩টি মামলা দায়ের করেছে। তৎকালীন জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহাজান আলী হানিফ গংদের বাড়িতে রেখে যায়। গ্রামে একদিন অবস্থান করার পর রেকর্ডীয়ও মালিকদের ক্ষেতের ধান ও শ্যালোমেশিন ভাঙচুর করে পানিতে ফেলে এবং বাড়িতে হামলা চালিয়ে পালিয়ে যায়।

হানেফ-সাহাবুল গং ১৯৮৫ সাল থেকে রেকর্ডীয় জমির মালিকদের ওপর হামলা করে আসছে। আবার তারা হামলা করেও ক্ষান্ত হয়নি। হামলার পর তারা আবার মামলাও দিয়ে থাকে। হানেফ-শাহাবুল গং বিরোধপূর্ণ জমিকে ১ নং খাস খতিয়ানের বলে দাবি করলেও বাস্তবে এ সকল জমি আরএস ও এসএ রেকর্ডভুক্ত। হানেফ-সাহাবুল গং যে বন্দোবস্ত দেখাচ্ছে সরকার তো ওই জমি খাসই করেনি। তাহলে বন্দোবস্ত দেয় কীভাবে? খাসজমি বন্দোবস্তের কোনো প্রমাণ ভূমি অফিসে রেজিস্ট্রারে নেই। সংবাদ সম্মেলনে তিনি হানিফ-সাহাবুল গংদের মিথ্যাচার থেকে মুক্তি পেতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। সাংবাদিক সম্মেলনে আব্দুল মালেক মোল্লা এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, একুশের চোখ প্রতিবেদনে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও তার ভাই বাবুসহ অন্যান্যদের জড়িয়ে যে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

সংবাদ সম্মেলনে জীবননগর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান আবু মো. আ. লতিফ অমল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক আব্দুল কাদের প্রধান, জাহাঙ্গীর আলম, উথলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল হান্নান, সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন খান, হাসাদাহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক জসিম উদ্দিন জালাল, হাবিবুর রহমান হবি বিশ্বাস, রবিউল ইসলাম রবি বিশ্বাস,পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শহিদুল ইসলাম, উপজেলা যুবলীগ আহ্বায়ক জীবনগর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান হাফিজ, যুগ্মআহ্বায়ক আ. সালাম ইশা, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সোয়েব আহমেদ অঞ্জন, সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম রাজা, আওয়ামী লীগ নেতা পৌর কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম, সাবেক কাউন্সিলর শাখাওয়াত হোসেন ফরজ, শুকুর আলী, হায়দার আলী, আশরাফ আলী, আলী আহাম্মদ, নজরুল ইসলাম মেম্বার, জাকির হোসেন মেম্বার, সাবেক মেম্বার বাহাউদ্দিন, কফিলউদ্দিনসহ বিপুল সংখ্যক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও গঙ্গাদাসপুরের নারী-পুরুষ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।