ধারণ ক্ষমতার বাইরে ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে আক্রান্ত শিশুদের : ভোগান্তী

জহির রায়হান সোহাগ: হেমন্ত ঋতুকে পেছনে ফেলে নীরবে-নিভৃতে অগ্রসর হচ্ছে শীত। শীত অনেকেরই প্রিয় ঋতু। তবে ঠাণ্ডাজনিত রোগে যারা কাবু তাদের এ মরসুম বিড়ম্বনারই বটে। কারণ, শীতে ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। শিশুরা এসব রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।
অধিকাংশ চিকিৎসকের মতে, প্রতি বছর ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটে। শীত মরসুমে নিউমোনিয়া, সর্দিকাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ নানা রোগের সংক্রমণ ঘটে। শিশুরা এসব রোগে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। নবজাতকদের জন্য শীতকাল বেশি বিপজ্জনক। তাই এ সময় নবজাতক এবং শিশুদের দিকে বেশি নজর রাখা প্রয়োজন। চুয়াডাঙ্গায় ঠাণ্ডাজনিত কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। হঠাত আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে জেলার অসংখ্য শিশু ডায়রিয়া এবং নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গতকাল রোববার সকালে দেখা যায় শিশুর মায়েরা শিশু কোলে নিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। অধিকাংশ মায়েদের জিজ্ঞেস করলে বলেন, শিশুর ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া হয়েছে। তাই ডাক্তারের কাছে নিয়ে এসেছি।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালসূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে এ মাসে শিশু রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ভর্তি হয়েছে ওয়ার্ডের ধারণ ক্ষমতার বেশি। গতকাল বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা ছিলো ৩০ জন। এর মধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ১৯ ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ১১ শিশু। গতকালই ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ২৫ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এছাড়া গত কয়েকদিন ধরে ভর্তি রয়েছে আরও ৪০ জন। ১৫টি বেডের বিপরীতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৪ গুণেরও বেশি শিশু ভর্তি রয়েছে। ফলে ডাক্তার ও নার্সরা সেবা প্রদানে হিমশিম খাচ্ছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিশু রোগীর মা জানান, হাসপাতালে এসে বেড পাইনি। ঠাণ্ডায় ছোট মেয়েকে নিয়ে মেঝেতে শুয়ে আছি। বেশি ঠাসাঠাসিতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। নার্সরা ঠিকমতো আসছে না। এছাড়া ওষুধ ঠিকমতো দিচ্ছে না।
এ বিষয়ে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহাবুবুর রহমান মিলন জানান, হঠাত আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। শিশুদের ঠিকমতো টিকা প্রদান ও ৬ মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো হলে নিউমোনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। তাছাড়া ঠাণ্ডা আবহাওয়া থেকে শিশুকে দূরে রাখা এবং গরম কাপড় পরিধান করানো অত্যন্ত জরুরি। ডায়রিয়া এক ধরনের পানিবাহিত রোগ। রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া হয়ে থাকে। ৬-১৬ মাস বয়সী আক্রান্ত শিশুকে ঘন ঘন স্যালাইন ও মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। এছাড়া শিশুদের মায়ের বুকের দুধ ও রোটারিক্স টিকা দিলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মাসুদ রানা জানান, শীতের সময় শিশু ও নবজাতকদের ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া হয়ে থাকে। যে সকল শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। শিশুদের ঠাণ্ডা আবহাওয়া থেকে দূরে রাখতে হবে। শিশুরা প্রস্রাব করলে দ্রুত পোশাক পরিবর্তন করে দিতে হবে। অনেক সময় নিউমোনিয়ার কারণে শিশুদের নাক আটকে যায় এবং বমি করে। এজন্য নাক কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করে দিতে হবে। বাজারের কৌটা দুধ শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে। তাই শিশু জন্মের পর মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের ঘন ঘন মায়ের বুকের দুধ, পাতলা খাবার ও স্যালাইন খাওয়াতে হবে। কারণ অনেক সময় কিডনিতে পানি না যাওয়ার ফলে কিডনি ফেল হয়ে শিশুর মৃত্যু হয়। আর আক্রান্ত শিশু যদি ১২ থেকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে প্রসাব না করে তাহলে দ্রুত হাসপাতালের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসতে হবে।