দামুড়হুদায় আবারও কনের অংক খাতায় নাম ঠিকানা লিখে বাল্য বিয়ে : ইউএনও’র তড়িৎ পদক্ষেপ

ভ্রাম্যমান আদালতে বরের ১ বছর, বরের পিতা এবং ইউপি সদস্য টিক্কার ৬ মাস করে বিনাশ্রম কারাদন্ড : কনের পিতার জরিমানা
(ছবি আছে)
বখতিয়ার হোসেন বকুল : সুন্দর ফুটফুটে মিষ্টি একটা মেয়ে। নাম ইভানা খাতুন। সে সবেমাত্র সিক্স থেকে সেভেনে উঠেছে। তার ঠিকমতো শারীরিক গঠনও হয়নি। অথচ ৪ মাস আগে গোপনে তাকে বিয়ে দেয়া হয়েছে। আর ওই বাল্য বিয়ের নেপথ্যে মূল ভূমিকা পালন করেছেন মেয়ের মা এবং ইউপি সদস্য টিক্কা মেম্বার। দামুড়হুদার হাউলী ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং ওয়ার্ড সদস্য জাহাঙ্গীর আলম টিক্কা নিজেই ৪ মাস আগে গোপনে ওই বাল্য বিয়ে পড়িয়েছেন। ৪ মাস আগে বাল্য বিয়ে হলেও গতকাল শুক্রবার ছিলো কনে তোলার পূর্ব নির্ধারিত দিন। এলাকা সূত্রে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। উপজেলা প্রশাসনের অনড় অবস্থানের কারণে অনেক কষ্টে ওই বাল্য বিয়ের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় নেয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বাল্য বিয়ে নিরোধ আইনে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে বরের ১ বছর, বরের পিতাকে ৬ মাস এবং ইউপি সদস্য’র ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া কনের পিতাকে করা হয়েছে ৫ হাজার টাকা জরিমানা। গতকাল শুক্রবার দুপুরে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম মুনিম লিংকন ওই ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়নের জয়রামপুর মল্লিকপাড়ার ইব্রাহিম হোসেনের মেয়ে জয়রামপুর ডিএস দাখিল মাদরাসার ছাত্রী ইভানা খাতুন। তার বয়স মাত্র ১২ বছর। সে এ বছর থেকে ৬ষ্ঠ শ্রেণি পেরিয়ে ৭ম শ্রেণিতে উঠেছে। সুন্দর ফুটফুটে মিষ্টি একটা মেয়ে ইভানা। তার ঠিকমতো শারীরিক গঠনও হয়নি। শিশু কন্যা ইভানার সাথে জয়রামপুর নতুনপাড়ার লিয়াকত আলীর ছেলে মাসুদ রানার (২৩) সাথে ৪ মাস আগে গোপনে বাল্য বিয়ে দেয়া হয়। হাউলী ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম টিক্কা কনের অংক খাতায় বর-কনের নাম ঠিকানা লিখে গোপনে ওই বাল্য পড়িয়ে দেন। ৪ মাস পর গতকাল শুক্রবার ছিলো কনে তোলার পূর্ব নির্ধারিত দিন। দুপুরে বরসহ ২৫/৩০ জন বরযাত্রী হাজির হয় কনের পিতার বাড়িতে। ঘটনাটি গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পেরে কালবিলম্ব না করে তাৎক্ষনিক কনের পিতার বাড়িতে ছুটে যান দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম মুনিম লিংকন প্রশাসনের লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে বরসহ বরযাত্রীরা গোপনে পালিয়ে যায়। কনেকে দেখার পর বিষয়টি চরমভাবে নাড়া দেয় উপজেলার নির্বাহী অফিসারের হৃদয়ে। সুন্দর ফুটফুটে মিষ্টি একটা মেয়ে। যার ঠিকমতো শারীরিক গঠনও হয়নি। তাকে বসানো হয়েছে বিয়ের পিড়িতে। ৪ মাস আগে বিয়ে হয়ে গেছে। বিষয়টি ছাড় দেয়ার জন্য কনের পরিবারসহ বিভিন্ন মহল থেকে শুরু হয় তদবির। কিন্ত উপেজলা নির্বাহী অফিসার ছিলেন অনড় অবস্থানে। ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম টিক্কাকে ডাকা হলেও তিনি আসছি আসছি করেও শেষমেষ মোবাইলফোন বন্ধ করে গা ঢাকা দেয়। হাকিম নড়বেতো হুকুম নড়বেনা এ রকম প্রতিজ্ঞা নিয়ে বাল্য বিয়ের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে বাল্য বিয়ের সাথে জড়িতদের বাড়িতে বাড়িতে হানা দেন ইউএনও এসএম মুনিম লিংকন। ধরে আনা হয় কনের বাবা এবং বরের মাকে। পরে তাদেরকে ছাড়াতে একে একে হাজির হয় বর মাসুদ রানা, বরের বাবা লিয়াকত আলী এবং ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম টিক্কা। বাল্য বিয়ের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে বসানো হয় ভ্রাম্যমান আদালত। ভ্রাম্যমান আদালতে বাল্য বিয়ে নিরোধ আইন-২০১৭ এর ৭ এর (১) ধারায় দোষি সাবস্ত করে বর মাসুদ রানাকে ১ বছর, বাল্য বিয়ে নিরোধ আইন-২০১৭ এর ৮ ধারায় বরের পিতা লিয়াকত আলীকে ৬ মাস এবং বাল্য বিয়ে নিরোধ আইন-২০১৭ এর ৯ ধারায় ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম টিক্কাকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়। এ ছাড়া কনের পিতাকে করা হয় ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড।
এ দিকে একজন ইউপি সদস্য হয়ে প্রতারণা করে কনের অঙ্ক খাতায় নাম ঠিকানা লিখে বাল্য বিয়ে পড়ানোর সাথে জড়িত থাকায় জাহাঙ্গীর আলম টিক্কা মেম্বারকে এলাকার সচেতন মহলের পক্ষ থেকে ধিক্কার জাননো হয়েছে। সেই সাথে সাথে বাল্য বিয়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহন করায় দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম মুনিম লিংকনকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে। ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা কাজে সহায়তা করেন দামুড়হুদা মডেল থানার এসআই রাম প্রসাদ সরকার ও উপজেলা আইসিটি টেকনিশিয়ান খাইরুল কবির দিনার। # #