চুয়াডাঙ্গা বিএডিসির বীজ পরিবহন ঠিকাদার নির্বাচনে রাজনৈতিক চাপ ॥ পুনঃদরপত্রের সুপারিশ

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় বিএডিসির বীজ পরিবহনের জন্য দুজন দরপত্র দাখিল করলেও তাদের মধ্যে যোগ্য ঠিকাদার খুঁজে নিতে পারেনি দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি। ফলে কমিটি পুনঃদরপত্রের সুপারিশ করেছে। গতপরশু সোমবার এ সুপারিশ করা হয় বলে সূত্র জানিয়েছে। অপারদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক নেতাকে কাজ দিতে চাপের মুখে পুনঃদরপত্র আহ্বানের সুপারিশ করা হয়েছে বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে।
জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৪ হাজার মেট্রিক টন ধান ও অন্যান্য বীজ পরিবহনের জন্য চুয়াডাঙ্গার বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রের (বীপ্র) যুগ্ম পরিচালকের দফতর থেকে এই দরপত্র আহ্বান হয়। সূত্র বলেছে, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) অঙ্গপ্রতিষ্ঠান চুয়াডাঙ্গার বীপ্র যুগ্ম পরিচালকের দফতর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বীজ পরিবহনের জন্য এই দরপত্র আহ্বান করে। ৯ আগস্ট ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি দৈনিকে এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। সোমবার দুপুর ১২টার মধ্যে দরপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় ছিলো। এ সময়ের মধ্যে মাত্র দুটি দরপত্র জমা পড়ে। এর একটি ছিলো কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলীর ও অপরটি চুয়াডাঙ্গার এসএল এন্টারপ্রাইজের অংশীদার এনামুল হকের। একই দিন বেলা তিনটায় বীপ্রর যুগ্ম পরিচালকের দফতরে দরপত্র খোলা হয়। এরপর মূল্যায়ন কমিটির সামনে তা উপস্থাপন করা হয়। আজগর আলী ২ কোটি ৪৫ লাখ ৭২ হাজার এবং এনামুল হক ২ কোটি ৮৭ লাখ ৫৫ হাজার ৬৫০ টাকা দর দেন। দরপত্র খোলার পর ছয় সদস্যের কমিটির বৈঠক হয়। বিএডিসির দত্তনগর খামারের যুগ্ম পরিচালক আবদুস সামাদ এই কমিটির সভাপতি। তবে সোমবার তার অনুপস্থিতিতে গোকুলনগর খামারের উপপরিচালক তপন কুমার সভায় সভাপতিত্ব করেন। সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শ্যামল কুমার পাল, বিএডিসি চুয়াডাঙ্গার আঞ্চলিক হিসাব নিয়ন্ত্রক নুরুল আমিন মিঞা, চুয়াডাঙ্গা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের চিফ ইনস্ট্রাক্টর (অটো) আজিজুল হক, বিএডিসি নূরনগর খামারের সিনিয়র সহকারী পরিচালক মাহবুব আলম ও বীপ্রর সহকারী পরিচালক নাজমুল হাসান। কমিটি ঠিকাদারদের দাখিল করা কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখেন। দরপত্রের ৮ নম্বর শর্তানুযায়ী দরদাতাকে সরকারি/আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিবহন কাজের অভিজ্ঞতার সনদ ও হালনাগাদ কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন), টার্নওভার ও ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন দাখিল করার কথা। আজগর আলী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিবহনের বিল ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরের কর-সংক্রান্ত কাগজপত্র দাখিল করেন। অপরদিকে এনামুল হক ৪১ লাখ ৮৩ হাজার ৬৫০ টাকা বেশি দর হাকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, সোমবার বিকেল থেকে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে মূল্যায়ন কমিটি এনামুল হককেই কার্যাদেশ দেয়ার সুপারিশ করছে। এতে সর্বনি¤œ দরদাতার পক্ষে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে এবং আজগর আলীকেই কার্যাদেশ দিতে চাপ সৃষ্টি করে। এই পরিস্থিতে মূল্যায়ন কমিটি পুনঃদরপত্রের সুপারিশ করতে বাধ্য হয়। জানতে চাইলে এনামুল হক বলেন, পুনঃদরপত্রের সুপারিশের কারণে অন্তত বিশৃঙ্খলা এড়ানো গেছে। ঠিকাদার আজগর আলীর পক্ষে রিপনুল হাসান বলেন, নিয়মের মধ্যে দরপত্র সম্পন্ন হলে আপত্তি নেই। বীপ্রর যুগ্ম পরিচালক আবদুল মালেক বলেন, কারও চাপে নয়, সর্বনি¤œ দরদাতার অসম্পূর্ণ কাগজপত্র ও দ্বিতীয় দরদাতার দর বেশি হওয়ায় কমিটি এই সুপারিশ করেছে।