চাঁদা নয় : বোনের বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনায় জড়িতদের প্রতিশোধ নেয়ায় ছিলো তার মূল উদ্দেশ্য

দামুড়হুদার পুরাতন হাউলীর বাচ্চুকে অপহরণ শেষে লাখ টাকা ছিনতাই মামলায় আটক ওসমানের দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: বোন রিক্তার বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনাটি সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেলগাছি গ্রামের মৃত আক্কাচ আলীর ছেলে মাওলানা ওসমান। প্রতিশোধের নেশা তাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছিলো। দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি আবু জিহাদ এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, আটক ওসমানের স্বীকারোক্তিতে জানতে পেরেছেন, দামুড়হুদার মোক্তারপুর গ্রামের মিন্টু নামের একজনের সাথে ওসমানের বড় বোন রিক্তার বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর ২০০৯ সালে দামুড়হুদা থানার তৎকালীন ওসি এমএ হাশেমের মধ্যস্থতায় ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে বোনের বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে। বিষয়টি সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি ওসমান। তার সন্দেহ হয় ওই বিয়ে বিচ্ছেদের পেছনে আত্মীয় হাতিভাঙ্গার আজিজুল হকের হাত আছে। ওসমান ওই আজিজুলকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মাফিক আজিজুলকে কৌশলে জবাই করে হত্যারও চেষ্টা করে ওসমান। গলার শ্বাসনালী কেটে গেলেও সে যাত্রায় দৈবক্রমে প্রাণে বেঁচে যান আজিজুল হক। ওসমান পরে জানতে পারে তার বোনের বিয়ে বিচ্ছেদের পেছনে আরও একজনের হাত আছে। তিনি আর কেউ নন দামুড়হুদা পুরাতন হাউলীর ভুট্টা ব্যবসায়ী বাচ্চুর পিতা জামাত আলী। ওসমান এটাও জানতে পারে যে, তার বোনের সাথে জামাত আলী পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে তুলে হাতিয়ে নিয়েছে বিয়ে বিচ্ছেদের ওই ৪০ হাজার টাকা। মাওলানা ওসমান সেই ২০০৯ সাল থেকেই জামাত আলীকে হত্যার পরিকল্পনা করে আসছিলো। তারই ধারাবাহিকতায় সে বিভিন্ন সময়ে জামাত আলীকে মোবাইলফোনে হত্যার হুমকিসহ মোটা অঙ্কের চাঁদাও দাবি করেছে। জামাত আলী সবকিছু বুঝতে পেরেও থলের বিড়াল বেরিয়ে আসার ভয়ে কখনও মুখ খোলেননি। এরপর ২০১৬ সালে জামাত আলীর বাড়িতে ১৮ গজ কাফনের কাপড় পাঠিয়ে হত্যার আগাম বার্তা জানানো হয়। ওই ঘটনায় ভীত হয়ে পড়ে চতুর জামাত আলী। পরে থানায় জিডি করেন। সর্বশেষ গত ২৪ আগস্ট জামাত আলীর ছেলে ভুট্টা ব্যবসায়ী বাচ্চু মিয়া চুয়াডাঙ্গা ইসলামী ব্যাংক থেকে ৫ লাখ টাকা তুলে বাড়ি ফেরার সময় উজিরপুরে পুলের কাছ থেকে পুলিশ পরিচয়ে তাকে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তার কাছে থাকা ওই ৫ লাখ টাকা ছিনতাই করা হয়। মোবাইলফোনের কললিস্ট ধরেই গত সোমবার রাতে কুষ্টিয়ার আইলচারা মসজিদের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। মাওলানা ওসমান দির্ঘদিন ধরে আইলচারা বড় মসজিদে ইমামতি করে আসছিলো বলেও জানা গেছে। গ্রেফতারের পর উসমানকে দামুড়হুদা থানায় এনে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে অপহরণ শেষে ৫ লাখ টাকা ছিনতায়ের কথা স্বীকার করে চাঞ্চল্যকর তথ্যও দিয়েছে। ওসমান এবং তার বোন রিক্তাই জামাত আলীর বাড়ি কাফনের কাপড় পৌঁছে দেয়। জামাত আলী মাওলানা ওসমানের দুসম্পর্কের চাচাতো ভাই বলেও জানিয়েছেন তিনি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আমজাদ হোসেন গতকাল মঙ্গলবার ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে তাকে আদালতে সোপর্দ করলে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে থানা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। তিনি আরও বলেছেন, বাচ্চুর পিতা জামাত আলীও ভাল লোক নয়। তার নামে নানা কেচ্ছা-কাহিনী শুনেছি। উনি দামুড়হুদা দশমীপাড়ায় একজনের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করেন। আমি উনাকে ওই বাড়িতে যেতেও নিষেধ করে দিয়েছি। ওসি আবু জিহাদ আরও জানান, আমার ধারণা ওসমানের বোন রিক্তার নিজস্ব বাহিনী আছে। আছে বড় ধরনের নেটওয়ার্ক। ওই র‌্যাকেটে কারা আছে সেটাই এখন বের করতে কাজ চলছে।

উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট দুপুরে দামুড়হুদার পুরাতন হাউলীর জামাত আলীর ছেলে ভুট্টা ব্যবসায়ী বাচ্চু মিয়া চুয়াডাঙ্গা ইসলামী ব্যাংক থেকে ৫ লাখ টাকা তুলে মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফিরছিলেন। তিনি চুয়াডাঙ্গা-দামুড়হুদা মহাসড়কের উজিরপুর পুলের কাছে পৌঁছুলে ৪-৫ জন অপরিচিত লোক পুলিশ পরিচয়ে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র চেকিংয়ের কথা বলে মোটরসাইকলের গতিরোধ করে। বাচ্চু মিয়া মোটরসাইকেল থামিয়ে মাইক্রোবাসের কাছে আসার সাথে সাথে তাকে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে নেয়া হয়। তাকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয় আলমডাঙ্গায়। ওখানে তার কাছে থাকা ৫ লাখ টাকা কেড়ে নিয়ে আলমডাঙ্গা-মুন্সিগঞ্জ সড়কে তাকে ছেড়ে দেয় তারা।