সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দেয়ার কথা বলে গাংনীর চাঁদপুর গ্রামে টাকা উত্তোলন!

গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে রমজান আলী নামের এক ব্যক্তি। ইউপি সদস্য হাসান আলীর মাধ্যমে সরকারি সোলার প্যানেল, টিউবওয়েল ও কর্মসৃজন শ্রমিক কার্ডসহ বিভিন্ন সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই টাকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সরকারী কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে হবে বলে ভুক্তভোগীদের জানিয়েছেন টাকা উত্তোলনকারীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়সহ সরকারী বিভিন্ন দপ্তর থেকে সোলার প্যানেল, টিউবওয়েল ও কর্মসৃজন কর্মসুচীর শ্রমিক কার্ডসহ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়। এ সুযোগ পাওয়ার জন্য গ্রামের সাধারণ মানুষের অনেকেই ঘোরেন জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের কাছে। এ আগ্রহ কাজে লাগিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ফাঁদ পাতেন রাইপুর ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে রমজান আলী। স্থানীয় ইউপি সদস্য হাসান আলী তাঁর বাল্যবন্ধু। সে সুবাদে সরকারি সুবিধা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। কার্ড কিংবা সোলার প্যানেল পেতে হলে ইউএনও, পিআইও এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে হবে। উপজেলা পর্যায়ের সর্বোচ্চ সরকারি কর্মকর্তার নাম শুনে ভুক্তভোগীরা অনেকটাই নিশ্চিন্তে টাকা তুলে দেন রমজানের হাতে। গ্রামের খেটে খাওয়া ১০-১৫ জন এক হাজার থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়েছেন। প্রায় এক মাস আগে টাকা নেয়া হলেও কোন ফল পাচ্ছিলেন না ভুক্তভোগীরা। এ নিয়ে প্রথমে কানাকানি ও আলোচনা-সমালোচনায় গোপনে টাকা নেয়ার বিষয়টি ফাঁস হয়। বাধ্য হয়ে টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি দেয় রমজান আলী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগীদের চাপের মুখে ঈদের পরের শনিবার টাকা ফেরত দেয়ার কথা দিয়েছেন রমজান। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে গ্রামের গঞ্জের আলীর মুদি দোকানের সামনে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা হয়েছে। ওই গ্রামের জাহাঙ্গীর ও তার পিতা মিজানুর রহমান, রানা মিয়া, ইকতার আলী, কালাম, মিয়াজান ও মহাম্মদ আলীসহ ভুক্তভোগীদের অনেকেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সরকারী সুবিধা দিতে না পারায় টাকা ফেরত দেয়ার কথা দিয়ে ক্ষমা চেয়েছেন রমজান আলী। সভায় উপস্থিত কয়েকজন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ইউপি সদস্য হাসান আলী বদনাম এড়াতে রমজানের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন বলে গ্রাম গুঞ্জন চলছে। রমজানকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে তিনি রক্ষা পেতে চাইছেন। হাসান ও রমজান প্রায় সব সময় একই সাথে থাকেন। হাসানের সকল কাজের সঙ্গী হিসেবেও রমজানের পরিচিতি রয়েছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি সদস্য হাসান আলী বলেন, রমজান আমার বাল্যবন্ধু তাই আমার ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে। সে আমার নাম ভাঙাতে পারে। তাহলে রমজানের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন? প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। জানতে চাইলে রমজান আলী বলেন, ভাই আমি পরিস্থিতির স্বীকার। হাসান আলী মেম্বারের দ্বায় আপনি ঘাড়ে নিচ্ছেন এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান তিনি। এ বিষয়ে রাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম সাকলায়েন ছেপু বলেন, ইউপি সদস্য কিংবা রমজান আলী যদি টাকা নিয়ে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।