আবারও কেরুজ চিনিকল যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে : ৩২ ঘণ্টা আখ মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ

 

দর্শনা অফিস: চলতি আখ মাড়াই মরসুমে কেরুজ চিনিকলে দফায় দফায় নো-ক্যান ও যান্ত্রিক ত্রুটির কবলেই পড়ছে। আবারও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে টানা ৩২ ঘণ্টা আখ মাড়াই বন্ধ ছিলো। মাঠে আখ পুড়ছে আগুনে, রোদে শুকাচ্ছে মিল চত্বরে।

জানা গেছে, গত শনিবার রাত দুটোর দিকে চিনি ডোঙার ক্যান ক্যারিয়ারের শ্যাপ ভেঙে যায়। ফলে বন্ধ হয় আখ মাড়াই কার্যক্রম। দীর্ঘ ৩২ ঘণ্টা পর গতকাল সোমবার সকাল ১০টার দিকে যান্ত্রিক ত্রুটি কাটিয়ে তুলে আখ মাড়াই কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। টানা ৩২ ঘণ্টা মিলটি যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে থাকলেও মিল কর্তৃপক্ষ থেকে চাষিদের উদ্দেশে কোনো ঘোষণা দেয়া হয়নি। যে কারণে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছে চাষিকূল। আখ মাড়াই বন্ধ থাকলেও দূর-দূরান্ত থেকে কৃষকরা মিলে আখ এনে চরম হয়রানিতে পড়তে হয়েছে। একপর্যায়ে মিল কর্তৃপক্ষ চাষিকের আখ ওজন করে মিল চত্তরে ফেলে রাখা হয়েছে। যে কারণে মিল চত্বরে রোদে আখ শুকিয়ে চিনি আহরণের হার কমেছে। ইতঃপূর্বে মিলের যেকোনো যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে মিল কর্তৃপক্ষ চাষিদের ভোগান্তি লাঘবে প্রচার মাইকের মাধ্যমে ঘোষণা দেয়া হতো। এ মরসুমে বরাবার মিলটি যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে পড়লেও কোনো প্রকার মাইকিং না হওয়ায় চাষিদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২৮ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় চলতি আখমাড়াই মরসুম। প্রচুর পরিমাণে লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে লাভের আশায় যাত্রা শুরু করলেও যেন সে গুড়ে বালি পড়ার মতো অবস্থায় পরিণত হয়েছে। ১ লাখ মেট্রিকটন আখ মাড়াই করে সাড়ে ৭ হাজার মেট্রিকটন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্পকরপোরেশন কর্তৃপক্ষ। কেরুজ চিনিকলের নিজস্ব ২ হাজার ৭৫ একর জমিসহ ৭ হাজার ৬শ ২০ একর জমিতে এবারের মরসুমে রয়েছে ৮৫ হাজার মেট্রিকটন আখ। ফলে ৯০ মাড়াই দিবসে ৮৫ হাজার মেট্রিকটন আখ মাড়াই করে প্রায় ৬ হাজার মেট্রিকটন চিনি উৎপাদন করা হতে পারে। চিনি আহরণের গড়হার নির্ধারণ করা হয়েছে শতকরা ৭ ভাগ। আখ মাড়াই মরসুম শুরু হওয়ার পরপর দফায় দফায় যান্ত্রিক ত্রুটি, ব্রেক ডাউন ও নো-ক্যানের কবলে পড়ে সৃষ্টি হয়েছে হ-য-ব-র-ল অবস্থায়। অন্যদিকে ই-পূজির বেড়াজালে পড়েছে আখচাষিরা। আধুনিক পদ্ধতিতে পূর্জি বিতরণ ব্যবস্থা চালু করার কারণে সঠিক বণ্টনে বিঘ্নিত হচ্ছে। যে কারণেই মিলে আখ সরবরাহের ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে ত্রুটি। এদিকে চাষিদের আখ আনতে না পারায় নো-ক্যানের সৃষ্টি হয়েছে কয়েক দফা।

সূত্র বলেছে, প্রতিবার নো-ক্যানের কারণে আখ মাড়াই বন্ধ হলেও মিলকর্তপক্ষকে কমপক্ষে ৫ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়। আখ শূন্যতা পুষাতে চিনিকলের নিজস্ব জমির আখ কর্তনের চেষ্টাও ভেস্তে যাচ্ছে। বর্তমান বাজারে ১২০ টাকা জোন হাজিরায় শ্রমিক পাওয়া দুষ্কর। যে কারণে উপায়ন্তর না পেয়ে রাতের আঁধারে মিলের নিজস্ব রোপণকৃত আখে আগুন ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। শ শ বিঘা জমির আখের পাতা পুড়ে হচ্ছে ছাই। আগুনের তাপে আখের রস কমছে। চিনি আহরণের হার ব্যাপকভাবে নিচে নামছে। অনেকেই মন্তব্য করে বলেছে, এবার হয়তো লোকসানের ক্ষেত্রে স্মরণকালের রেকর্ড ভাঙতে পারে চিনিকল কর্তৃপক্ষ।