শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু : আজ মহাসপ্তমী

মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: সকালে ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ এবং সন্ধ্যায় বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাস এবং ষষ্ঠী পূজার মধ্যদিয়ে ৫ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় ষষ্ঠী পূজা। আজ মহাসপ্তমী।
গতকাল সকাল থেকেই চণ্ডীপাঠে মুখরিত ছিল চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহসহ দেশের সব মণ্ডপ।

আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলার ৩১টি মণ্ডপে শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। ধুপ-ধুনার সুগন্ধ আর কাসর-ঘণ্টার মুর্ছনায় আপ্লুত এখন বিশ্বচরাচর। তোরণ নির্মাণ ও বর্ণিল আলোকসজ্জায় মোহনীয় করে তোলা হয়েছে প্রতিটি মণ্ডপ। গতকাল মঙ্গলবার ষষ্ঠীপূজার মধ্যদিয়ে এ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। আজ হবে সপ্তমী পূজা। শনিবার দেবীর প্রতীমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনব্যাপি এ উৎসব।

দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধানতম ধর্মীয় উত্সব শারদীয় দুর্গাপূজা। দুর্গাপূজাকে ঘিরে সারাদেশে শুরু হয়েছে উৎসবের আমেজ। আনন্দময়ী দেবী দুর্গার আগমনী গানে মুখরিত এখন চারদিক। ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে অতিথি আপ্যায়ন। বাহারী পোশাকে আর অঙ্গসজ্জায় নিজেদের সাজিয়ে রাঙিয়ে উৎসব-আনন্দে মেতে উঠেছে আলমডাঙ্গার শিশু-কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণী।

পঞ্জিকা মতে, এ বছর দেবী মায়ের নৌকায় আগমন হবে এবং দোলায় গমন করবেন। ভক্তরা আশা করছেন, মা দুর্গা মানুষের অর্থাৎ সন্তানের জন্য শান্তি নিয়ে আসবেন এবং সুখ শান্তি দিয়ে যাবেন। দুর্গা মা দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনার্থে আসবেন।

এ বছর আলমডাঙ্গা পৌর শহরে ১১টি দুর্গা মণ্ডপসহ উপজেলায় মোট ৩১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপিত হচ্ছে।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, হিন্দুধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার থেকে। দুর্গাপূজাকে ঘিরে পূজামণ্ডপ এলাকায় আনন্দ-উৎসব শুরু হয়েছে। পূজামণ্ডপ ও তার আশেপাশের যেকোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

এ বছর মেহেরপুর শহরসহ জেলার ৩টি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মোট ৩০টি পূজামণ্ডপে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দুর্গাপূজাকে ঘিরে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের পাশাপাশি মুসলমানদের মধ্যেও আনন্দ লক্ষ্য করা গেছে। প্রায় প্রতিটি পূজামণ্ডপকে ঘিরে বসেছে মেলা। শিশু-কিশোর ও যুবক-যুবতীরা বিকেল থেকে আনন্দ উপভোগ করছে। শিশু-কিশোর ও যুবক-যুবতীদের কেউ কেউ ঢাকের তালে তালেও নাচছেন।

এ বছর জেলার কোনো পূজামণ্ডপে এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে জানালেন জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ডা. রশেমচন্দ্র নাথ। প্রতিটি পূজামণ্ডপকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সজাগ রয়েছে বলে জানালেন জেলা পুলিশ প্রশাসন। এদিকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শুরু করেছেন।

হরিণাকুণ্ডু প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দেশের প্রায় তিন কোটি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা মহাষষ্ঠীর মধ্যদিয়ে ধুমধামের সাথে পাঁচদিনব্যাপি অনুষ্ঠানমালা গতকাল থেকে শুরু হয়েছে। মহাশক্তির মহামায়া দুর্গতিনাশিনী বেদী দুর্গাকে ভক্তিভরে বরন করে নেয় পূজারীগণ। পূজা মণ্ডপের পাশাপাশি হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে চলছে এখন উৎসবের আমেজ। ঢাকের বোল, কাঁসর ঘণ্টা, শাঁখের ধ্বনিতে মূখর হয়ে উঠছে প্রতিটি মণ্ডপ।

রোববার বিকেলে দেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য সারদীয় দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতার শুরু হয়। তবে ২৩ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্যদিয়ে শুরু হয়েছে দেবীর আগমনের আয়োজন। ৩ অক্টোবর এক দিনেই মহানবমী ও মহাদশমী অনুষ্ঠিত হয়ে ৪ অক্টোবর প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হবে। শারদীয় দুর্গোৎসব ও বিজয় দশমী উপলক্ষে এদিন সরকারি ছুটি থাকবে। পঞ্জিকা মতে এবার মা কৈলাস থেকে পিতার বাড়ি বসুদ্ধরায় আসেন নৌকায় চড়ে। আর ফিরবেন দোলায় চড়ে। যার ফলে প্রাকৃতিক রোগ বিমার বৃদ্ধি পাবে। তবে সনাতন বিশ্বাস মতে দেবী তার অশেষ কৃপায় সবাইকে রক্ষা করবেন। প্রতি বছরের মতো এবারও ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ২৬টি মণ্ডপে সারদীয় দুর্গাপুজা আনুষ্ঠানিকভাবে আনন্দঘন পরিবেশে শুরু হয়েছে। এগুলোর মধ্যে হরিণাকুণ্ডু পৌরসভায় ৫টি এবং অন্যান্য ইউনিয়নের মধ্যে ভায়নাতে ২টি, জোড়াদহে ৩টি, তাহেরহুদায় ৩টি, দৌলতপুরে ৩টি, কাপাসহাটিয়াতে ৪টি, ফলসীতে ২টি, রঘুনাথপুরে ২টি এবং চাঁদপুরে ২টি পূজা মণ্ডপ রয়েছে। এ সকল মণ্ডপের মধ্যে শাখারীদহ, ভবানীপুর, কুলবাড়িয়া এবং রিশখালিতে স্থাপিত মণ্ডপগুলো ঝুঁকিপূর্ণ বলে পূজা উদযাপন কমিটির উপজেলা সেক্রেটারি বিশ্বনাথ কুমার সাধু খাঁ জানান। সাধারণভাবে প্রতিটি মণ্ডপে ৬ জন আনসার এবং ঝুঁকিপূর্ণ মণ্ডপগুলোতে ৮ জন করে আনসার সার্বক্ষণিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে। প্রতিটি মণ্ডপ কর্তৃপক্ষ স্থানীয়ভাবে ৬ জন করে স্বেচ্ছাসেবক পালাক্রমে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োজিত করেছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা মোতাবেক ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এ বছর শারদীয় দুর্গোৎসব সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে উদযাপনের জন্য পূজা শুরুর প্রথম দিন থেকেই পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিগণ মণ্ডপে মণ্ডপে গমন করে পূজারীদের নিবিঘ্নে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে সহযোগিতা প্রদান করছেন।