আলমডাঙ্গার জিকে মেন ক্যানেলের পানি থেকে উদ্ধারকৃত অজ্ঞাত পুরুষের পরিচয় মিলেছে

 

পীরের আস্তানায় খাদেমের সাথে ঝগড়ার পর নিখোঁজ হন সাইদুল

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার জিকে মেন ক্যানেলের আট কপাট নামক স্থানে পানিতে ভেসে যাওয়া অজ্ঞাত পুরুষের পরিচয় পাওয়া গেছে। তিনি কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার কাতলামারী গ্রামের সাইদুল ইসলাম (৩৫)। গতকাল শুক্রবার তার পিতা, স্ত্রী, ভাই ও মামা আলমডাঙ্গা থানায় উপস্থিত হয়ে লাশের ছবি, জামা-লুঙ্গি ও ঝুলায় থাকা জিনিসপত্র দেখে বলেন, ওটা সাইদুল ইসলামেরই মরদহে। তারা বলেছেন, পীরের আস্তানায় ঝোড় জঙ্গল পরিস্কারের সময় খাদেমের সাথে বাগবিতণ্ডার পর নিখোঁজ হয় সাইদুল।

জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার দুপুরে কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার কাতলামারী গ্রামের ওবাইদুল ইসলাম ছেলেসহ কতিপয় আত্মীয় নিয়ে আলমডাঙ্গা থানায় উপস্থিত হন। আলমডাঙ্গার জিকে মেন ক্যানেলের আট কপাট নামক স্থানে পানিতে ভেসে যাওয়া অজ্ঞাত পুরুষের লাশ উদ্ধার হওয়ার সংবাদ জেনে তারা আলমডাঙ্গা থানায় ছুটে আসেন। তারা জিকে ক্যানেল থেকে উদ্ধারকৃত লাশের ছবি, জামা-লুঙ্গি ও পুটলায় বাধা জিনিষপত্র দেখে লাশটি ওবাইদুল ইসলামের ছেলে সাইদুলের বলে দাবি করেন। এ সময় ওবাইদুলের সাথে তার নিহত ছেলে সাইদুলের স্ত্রী রেহেনা খাতুন, সাইদুলের ভাই আবিদ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন আত্মীয় উপস্থিত ছিলেন।

পরিবারসূত্রে জানা যায়, মিরপুর উপজেলার কাতলামারী গ্রামের ওবাইদুল ইসলামের ২ ছেলে ও ৩ মেয়ের মধ্যে সাইদুল ইসলাম ভাইদের মধ্যে বড়। তিনি বিবাহিত। ১ কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন। গ্রামসূত্রে জানা গেছে, সাইদুল ইসলাম ছিলেন সরল-সোজা ভালো মানুষ। প্রায় ১৫ বছর ধরে সে সংসার বিবাগি। সাধুবেশে বিভিন্ন মাজারে মাজারে ঘুরে বেড়াত। এলাকার মদন পীরের মাজারে বেশি অবস্থান করতো। গত সোমবার বেলা ১১টার দিকে সে বাড়ি থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী কুরীপুর মাজারে যায়। সেখানে মাজারের ঝোড় পরিষ্কার করার সময় খাদেমদের সাথে ঝগড়া হয়। তারপর থেকে তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি।

উল্লেখ্য, গত বুধবার বেলা ২টার দিকে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের মেন ক্যানেলের কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার মালিহাদ এলাকার অংশে একটি লাশ ভেসে যেতে দেখতে পায় স্থানীয় এলাকাবাসী ও পথচারিরা। লাশটি স্রোতের অনুকূলে ভেসে ক্রমেই আলমডাঙ্গার দিকে যাচ্ছিলো। বিকেলে লাশটি আলমডাঙ্গা উপজেলার পারকুলা-মোনাকোষা গ্রাম বরাবর জিকে ক্যানেলে ভাসতে দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। সন্ধ্যার পর জিকে ক্যানেলের আলমডাঙ্গার আট কপাটের নিকট লাশটি পৌঁছুলে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ রাত ৯টার দিকে ক্যানেল থেকে অজ্ঞাত পুরুষের লাশটি উদ্ধার করেন। আলমডাঙ্গা থানার ওসি (তদন্ত) মেহেদী রাসেল জানান, উদ্ধারকৃত লাশটি পুরুষের। বয়স আনুমানিক ৩৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে হতে পারে। লাশের দৈর্ঘ্য সাড়ে ৫ ফুট। পরনে সাদা চেক লুঙ্গি ও গায়ে কালো মোটা শার্ট পরিহিত। গলায় একটি ঝুলার ভেরত গ্লাস, প্লেট, ও একটি লালসালু রয়েছে। লাশটি মরে পচে ফুলে গিয়েছে। ফলে শরীরে কোনো চিহ্ন বোঝার উপায় নেই। পুলিশের ধারণা ছিলো মিরপুর উপজেলার মালিহাদ এলাকায় ৫/৬ দিন পূর্বে দুর্বৃত্তরা অজ্ঞাত এ ব্যক্তিকে হত্যা করে লাশ জিকে ক্যানেলের পানিতে ডুবিয়ে রেখেছিলো। পরে লাশটি ভেসে উঠেছে।

এলাকার অনেকের ধারণা কোরবানির হাটে গরু বিক্রি করে টাকা নিয়ে হয়তো এই অজ্ঞাত ব্যক্তি বাড়ি ফিরছিলো। পথিমধ্যে দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আর লাশটা জিকে ক্যানেলের পানিতে ডুবিয়ে রেখে যায়। অনেকে আবার লাশের গলায় তজবিহ, লালসালু ও গায়ে মোটা শার্ট থাকায় অজ্ঞাত ব্যক্তি হয়তো কোনো মাজারে থাকা পাগলা প্রকৃতির হতে পারে বলেও মন্তব্য করছেন। তবে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের পক্ষ থেকে মিরপুর থানা ও দৌলতপুর থানা পুলিশকে অনুরোধ জানানো হয় যে তাদের উপজেলায় কোনো ব্যক্তি নিঁখোজ রয়েছেন কি-না সে ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দ্রুত জানাতে। পরদিন বৃহস্পতিবার উদ্ধারকৃত লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে পাঠানো হয়। পরে লাশের পরিচয় পাওয়া না যাওয়ায় আনজুমান মফিদুল ইসলাম লাশটি গ্রহণ করে দাফনের ব্যবস্থা করেন। এ ব্যাপারে সাইদুলের স্ত্রী রেহেনা খাতুন বাদী হয়ে আলমডাঙ্গা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন।

Leave a comment